দূর দেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ছোটখাট ভ্রমণেও মিলবে মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা।
হতে সংগৃহিত
ভ্রমণ মানেই শুধু নতুন জায়গা দেখা, ছবি তোলা বা স্মৃতি জমা করা নয়।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্রমণ আসলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ওষুধের মতো কাজ করে।
অস্ট্রেলিয়ার `এডিথ কোয়ান ইউনিভার্সিটি (ইসিইউ)’র গবেষকরা জানিয়েছেন, নতুন জায়গায় ঘোরাঘুরি করা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে মস্তিষ্ক ও শরীরকে রাখে প্রাণবন্ত।
মানসিক স্বাস্থ্যে ভ্রমণের প্রভাব
গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- ভ্রমণ মস্তিষ্ককে নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করায়। ফলে মানসিক উদ্দীপনা তৈরি হয়, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেওয়া ‘কগনিটিভ ডিক্লাইন’ বা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস ঠেকাতে সহায়ক।
নতুন শহরের অলিগলি ঘোরা, অপরিচিত খাবার চেখে দেখা কিংবা অপরিচিত সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় ভেতরে ভেতরে আনন্দ তৈরি হয়।
‘ইসিইউ’র গবেষকরা বলছেন- এই আনন্দ কেবল সাময়িক সুখ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ায়
ভ্রমণের অন্যতম বড় সুবিধা হল- শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা।
প্রতিদিনের ডেস্ককেন্দ্রিক জীবনের বাইরে বের হয়ে ভ্রমণে গেলে হাঁটা, পাহাড়ে চড়া, সমুদ্রতটে ঘোরাফেরা কিংবা বাজারে ঘোরার মতো নানান শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত হতে হয়।
গবেষণা বলছে, নিয়মিত শারীরিক নড়াচড়া শরীরের শক্তি ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর এসব কার্যকলাপ বয়স বাড়লেও শরীরকে সক্রিয় ও সক্ষম রাখে।
শক্তি যোগায় ভ্রমণ
ভ্রমণ কেবল শরীর নড়াচড়া করায় না, বরং মনের ভেতরে নতুন শক্তি জাগায়। গবেষকদের মতে, নতুন জায়গার পরিবেশ, দৃশ্য বা সংস্কৃতি মানুষকে উচ্ছ্বসিত করে তোলে। এই উদ্দীপনা ক্লান্ত শরীর-মনকে চাঙ্গা করে, ফলে ভেতরে ভেতরে প্রাণশক্তি বাড়ে।
অতএব, ভ্রমণকারীরা নিজেদের তরুণ, প্রফুল্ল ও প্রাণবন্ত অনুভব করেন।
মানসিক চাপ কমায়
প্রতিদিনের একঘেয়ে ব্যস্ততা— কর্মক্ষেত্র, সংসার, দায়িত্ব— সব মিলিয়ে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, ভ্রমণ সেই চাপকে হালকা করে দেয়।
‘ইসিইউ’র গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রমণ মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে আনে।
এটি শুধু মনকে শান্ত করে না, বরং দেহকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। মানসিক চাপ কমলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে, যা বয়সজনিত নানান সমস্যাকে ঠেকাতে সহায়তা করে।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহনশীল করে
নতুন জায়গায় ভ্রমণের সময় হঠাৎ চ্যালেঞ্জ আসতে পারে— ভাষা বুঝতে না পারা, খাবারের ভিন্নতা বা অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া। গবেষকরা একে বলেন ‘স্ট্রেস রেসপন্স’।
‘ইসিইউ’র গবেষণা অনুসারে, এ ধরনের পরিস্থিতি আমাদের দেহ ও মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেয়। এর ফলে প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকার ক্ষমতা বা সহনশীলতা বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এটি বয়সের ছাপ কমিয়ে স্বাস্থ্যকে তরতাজা রাখে।
সবসময় দূরে যেতে হবে না
তবে প্রশ্ন হল— সবাই কি সবসময় বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারে? অবশ্যই নয়।
গবেষকরা বলছেন, এর জন্য ব্যয়বহুল বা দীর্ঘ ভ্রমণের প্রয়োজন নেই। কাছের কোনো শহরে একদিনের ভ্রমণ, সপ্তাহান্তে ঘুরতে যাওয়া, কিংবা নিজের শহরের নতুন জায়গা আবিষ্কার করাও ভ্রমণের আনন্দ দিতে পারে।
এমনকি নতুন খাবার চেখে দেখা বা অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বলাও মানসিক ও শারীরিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।