পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশনে দুই দিন দু’ঘণ্টা করে আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষদিনের আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অংশ নিতে পারেন।
সংগৃহীত
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষীদের ওপর বাড়তে থাকা হেনস্তা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার এবং আগামী বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে।
দুই দিন দুই ঘণ্টা করে আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ দিনের আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।
সোমবার বিধানসভায় কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক শেষে স্পিকার জানান, পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষীদের উপর রাজ্যের বাইরে নির্যাতন হচ্ছে। তা নিয়ে রাজ্যের বাইরে বসবাসকারী বাংলাভাষীরা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বিষয়টি আলোচনার জন্যই বিধানসভায় এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। পেশ করা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাতৃভাষা বাংলাভাষীর সংখ্যার নিরিখে বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা।
১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান চালুর সময় থেকেই বাংলা অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।
পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বরাক উপত্যকায় বাংলা সরকারি ভাষা হলেও, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, মেঘালয়, মিজোরাম, দিল্লি, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাভাষী বাস করে।
প্রস্তাবে অভিযোগ করা হয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের ওপর শারীরিক আক্রমণ এবং মানসিক নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে, অন্য রাজ্যে কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হচ্ছে।
জোর করে আটক রাখা হচ্ছে এবং পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। বাংলাভাষী অনেক মানুষকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে।
এই ঘটনার জন্য সরাসরি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বাংলাভাষীদের ‘বহিরাগত’ হিসেবে চিহ্নিত করার বৃহত্তর রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে এবং এই প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় শাসক দলের বিভিন্ন অংশ মদত দিচ্ছে বলে দাবি তাদের।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার এবং হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। গত জুন মাসে বিধানসভার অধিবেশনে এ নিয়ে বিজেপি-কে দুষেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
তারপর থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষীদের অন্য রাজ্যে হেনস্থার অভিযোগ কেবলই বেড়েছে। কখনও মহারাষ্ট্রে, কখনও হরিয়ানায়, কখনও বা অন্য কোনও বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে।
বিধানসভাযর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাভাষীদের ওপর আক্রমণ ও বৈষম্য বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। বাংলার মানুষ নিজেদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করা এবং সব বাংলাভাষী মানুষকে বহিরাগত বলে চিহ্নিত করার চক্রান্ত চলছে বলেও অভিযোগ পরিষদীয় মন্ত্রীর।
এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, “শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রস্তাব জমা দিয়ে কী ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, তা বিস্তারিত জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আলোচনা হবে।
সংগৃহীত