টানা চতুর্থ রোববারে আরেকটি ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে মাঠের ক্রিকেট ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকবে ম্যাচের আগে ও পরের মুহূর্তে।
হতে সংগ্রহিত
বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান লড়াই। ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চের কত রসদই তো থাকার কথা। কিন্তু ম্যাচের আগে আলোচনায় ক্রিকেট আছে সামান্যই। মাঠের ক্রিকেট ছাপিয়ে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে ম্যাচের আগে ও পরের সময়টায়। ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর কি টসের সময় হাত মেলাবেন পাকিস্তানি অধিনায়ক ফাতিমা সানার সঙ্গে? ম্যাচ শেষে ভারতীয় ক্রিকেটাররা কি হাত বাড়িয়ে দেবেন পাকিস্তানিদের দিকে?
গত তিনটি রোববার যে দৃশ্য দেখা গেছে এশিয়া কাপে, টানা চতুর্থ রোববার সেটিরই পুনরাবৃত্তি হতে পারে বিশ্বকাপে।
ছেলেদের এশিয়া কাপে পাকিস্তানিদের সঙ্গে ভারতীয়দের হাত না মেলানোর বিতর্কের রেশ এখনও রয়ে গেছে বেশ। সেই ঘটনার জের গড়িয়েছে বহুদূর। বিতর্ক চলছে এখনও। এর মধ্যেই আরেকটি ভারত-পাকিস্তান লড়াই শুরুর অপেক্ষা। উইমেন’স ওয়ানডে বিশ্বকাপে কলম্বোতে রোববার মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দল। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায়।
ম্যাচটি যে কলম্বোতে হচ্ছে, সেটিও দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণেই। বিশ্বকাপের মূল আয়োজক ভারত। তবে ভারতীয় দল যেমন বিভিন্ন আসরে পাকিস্তানে খেলতে যায় না, পাকিস্তান দলও জবাবে বেছে নিয়েছে সেই একই পথ। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচগুলি তাই হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়।
দলীয় শক্তি-সামর্থ্যের বিচারে ছেলেদের ক্রিকেটের চেয়েও বড় ব্যবধান দুই দলের নারী ক্রিকেটে। ভারতীয় দল দল এখানে যোজন যোজন এগিয়ে। শিরোপা জয়ে ফেভারিটের কাতারে থাকা হারমানপ্রিতের দল আজকেও মাঠে নামবে পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবে। পাকিস্তান জিতে গেলে সেটা হবে বড় অঘটন। এখনও পর্যন্ত দুই দলের ১১ ওয়ানডের সবকটিই জিতেছে ভারত।
তবে ক্রিকেট নিয়ে ভাবছেই বা কজন!
ফাতিমাদের সঙ্গে হারমানপ্রিতরা হাত মেলাবেন কি না, এই প্রশ্নই আপাতত কৌতূহলের তুঙ্গে।
কয়েকদিন আগেই বিবিসির ‘স্টাম্পড’ পডকাস্ট-এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ভারতীয় বোর্ডের সচিব দেভাজিৎ সাইকিয়াকে। তিনি সরাসরি উত্তর না দিলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন মনোভাব।
“করমর্দন, আলিঙ্গন হবে কি না, এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আগে থেকে কিছু অনুমান করতে পারি না। তবে শত্রুতাপূর্ণ ওই দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তো একই আছে। গত সপ্তাহ থেকে কোনো পরিবর্তন আসেনি।”
ছেলেদের ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মধ্যে আগে যেমন মাঠের বাইরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, নারী ক্রিকেটেও তেমনটি দেখা গেছে আগে। বিশেষ করে, গত বিশ্বকাপে ২০২২ সালে নিউ জিল্যান্ডে দুই দলের ম্যাচ শেষে ভারতীয় ক্রিকেটাররা গিয়েছিলেন পাকিস্তান দলের ড্রেসিং রুমে। পাকিস্তানে সেই সময়ের অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের ছয় মাস বয়সী মেয়ের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের আনন্দঘন সময় কাটানোর ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল ক্রিকেট বিশ্বময়। সৌহার্দ্যের দারুণ বার্তা হিসেবে সাড়া ফেলেছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের সেই সৌজন্য।

এখন বদলে গেছে চিত্র। তেমন কিছু কল্পনা করাও কঠিন এই সময়ে।
পাকিস্তানি অধিনায়ক ফাতিমা সানা অবশ্য ম্যাচের আগের দিন প্রীতির বার্তা জানিয়ে রাখলেন।
“সব দলের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক দারুণ এবং আমরা সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি। খেলাটির চেতনার মধ্যে থেকে সবকিছুই করার চেষ্টা করব আমরা।”
“বিসমাহর মেয়ের সঙ্গে সবার মেলামেশার সেই ছবিগুলো ছিল চমৎকার এবং এসব দেখতে সবাই পছন্দ করে। তবে অবশ্যই আমাদের মূল মনোযোগ থাকবে যে কারণে আমরা এখানে এসেছি, সেই খেলায়।”
ভারতের বোলিং কোচ ও ছেলেদের দলের সাবেক পেসার আভিশকার সালভি বললেন, তার দলের ভাবনায় আছে কেবলই মাঠের ক্রিকেট।
“মনোযোগের মূল জায়গা ক্রিকেট। আমরা চাই, আমাদের মেয়েরা নিজেদের সেরা খেলাটা খেলবে। আমরা চাই, ম্যাচটিকে তারা আর সব ম্যাচের মতোই দেখুক। এটা দীর্ঘ এক টুর্নামেন্ট, সামনে অনেক ম্যাচ আছে।”