যদি কোনো প্লেন ব্ল্যাক হোলের খুব কাছে চলে আসে তবে এর ভাগ্য নির্ভর করবে ওই ব্ল্যাক হোলের ভর কত বড় ও প্লেনটি ব্ল্যাক হোলের কত কাছে এসেছে তার ওপর।
সংগৃহিত
হলিউডের সিনেমা ও বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশন বা কল্পকাহিনিতে ব্ল্যাক হোলকে সাধারণত অদ্ভুত ও ভয়ানক এক জগতে নিয়ে যাওয়ার দরজা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে নভোচারীরা অজানা বিপদের মুখে পড়েন বা তাদের বর্তমান সময় বদলে যায়।
কিন্তু বাস্তবে যদি কোনো প্লেন ব্ল্যাক হোলের খুব কাছে চলে আসে তবে এর ভাগ্য নির্ভর করবে ওই ব্ল্যাক হোলের ভর কত বড় ও প্লেনটি ব্ল্যাক হোলের কত কাছে এসেছে তার ওপর।
ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ শক্তি এতই শক্তিশালী যে এর আকর্ষণ অনেক দূর থেকেও টের পাওয়া যায়। তবে ব্ল্যাক হোলে একটি বস্তু বা যন্ত্রের গতিপথ কতটা পরিবর্তিত হবে তা এর থেকে ব্ল্যাক হোলের দূরত্বের ওপর নির্ভর করবে, অর্থাৎ বস্তুটি ব্ল্যাক হোলর যত কাছে যাবে, তত বেশি প্রভাব পড়বে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার।
কোনো প্লেন যখন ব্ল্যাক হোলের খুব কাছে যায় তখন এর ওপর ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণ অনুভব হয় এমন এক জায়গায়, যাকে বলে ‘ইনারমোস্ট স্টেবল সার্কুলার অরবিট’ বা আইএসসিও। এটি এমন এক জায়গা, যেখানে কোনো বস্তু স্থির ও নিরাপদে ঘুরতে পারে। এর ভেতর কোনো স্থিতিশীল কক্ষপথ নেই।
‘ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ’ বা সার্ন বলেছে, প্লেনটি আইএসসিও-এর আরও কাছে গেলে তা ব্ল্যাক হোলে পড়ে যেতে পারে বা এর বাইরে ছিটকে বেরিয়ে আসতে পারে।
প্লেনটির গতি এবং ওজন অনেক বেশি হলে তা ব্ল্যাক হোলের কাছে আরও এগোতে পারে। তবে এই যাত্রাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে যখন প্লেনটি ব্ল্যাক হোলের ‘ফোটন স্ফিয়ার’ নামে এক অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছাবে। কারণ, এখানে মহাকর্ষ এতই শক্তিশালী যে আলো বা আলোর কণিকা, যাকে ফোটন বলে সেটিও এমনভাবে আটকে রাখে যেন তা কক্ষপথে ঘুরছে।
তবে এখনও ব্ল্যাক হোলের মূল বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছায়নি প্লেনটি। ধরা যাক, প্লেনটি খুব ভালোভাবে তৈরি ও এর যথেষ্ট গতি রয়েছে, যা ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষের টানে আটকে না পড়ে নিজের গতি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
প্লেনটি যখন ‘ফোটন স্ফিয়ার’-এর ভেতর দিয়ে যাবে তখন এটি ধীরে ধীরে ‘ইভেন্ট হরাইজনের’ কাছাকাছি চলে আসবে। এ জায়গাটি হচ্ছে ব্ল্যাক হোলের এমন সীমা, যেখান থেকে কোনো কিছু আর ফিরে আসতে পারে না।
এ সীমা পেরোনোর আগেই নভোচারীকে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে, না হলে তিনি চিরতরে হারিয়ে যেতে পারেন ব্ল্যাক হোলের মধ্যে। এ ইভেন্ট হরাইজন থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্লেনকে আলোর গতি বা তার চেয়ে দ্রুত গতি পেতে হবে। তবে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বলছে, মহাবিশ্বের কোনো কিছু আলোর গতির চেয়ে বেশি হতে পারে না।
আর যদি আমরা ধরেও নিই যে, প্লেনের এমন গতি পেতে কোনো জাদুকরী জ্বালানি রয়েছে আমাদের তবুও সেই গতিতে টিকতে পারবে না প্লেনটি। কারণ, ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি আসলে প্লেনের সামনের অংশে মহাকর্ষের টান অনেক বেশি হবে, আর পেছনের অংশে কম। ফলে প্লেনটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
তবে কৌতূহলের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, প্লেনটি ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন স্পর্শ করেছে। এখান থেকেই আসল বিপদ শুরু হবে, যেটিকে ‘স্প্যাগেটিফিকেশন’ নাম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এ প্রক্রিয়ায় ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ এতটা শক্তিশালী যে, বস্তু যতই এর কাছাকাছি আসবে ততই লম্বাটে ও পাতলা হয়ে যাবে।
ব্ল্যাক হোলের টান এতটাই শক্তিশালী যে, অনেক ভরের বিভিন্ন তারাও এভাবে লম্বাটে টিউবের মতো হতে পারে। আর প্লেনটি হয়ত সেখানে পাতলা প্যানকেকের মতো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, আবার তীব্র তাপীয় বিস্ফোরণও ঘটতে পারে এর।
এ মহাজাগতিক মহাকাশ অবকাশের যাত্রার নিঃসন্দেহে ভয়ংকর ও মারাত্মক সমাপ্তি ঘটবে। ফলে ব্ল্যাক হোলের কাছে ভ্রমণের বিষয়টি দুঃস্বপ্নেরই মতো।
