আকাশপথে আতঙ্ক কাটিয়ে ভ্রমণ হোক স্বস্তির।
হতে সংগৃহিত
বিমানে ভ্রমণের সময় ‘টার্বুলেন্স’ বা ঝাঁকুনির নাম শুনলেই অনেকের মনেই ভয় জাগে।
কারও কাছে এটি তুচ্ছ ঘটনা, আবার কারও কাছে ভ্রমণ আতঙ্কের অন্যতম কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেল্টা এয়ার লাইন্স–এর ‘ইমোশনাল হেল্থ অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং প্রোগ্রামস’–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. অ্যালিসন স্মিথ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “টার্বুলেন্স’ ঘটলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে এক ধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা শরীরকে বিপদের জন্য প্রস্তুত করে। এতে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, পেশি শক্ত হয়ে ওঠে, আর ভেতরে ভয়ের অনুভূতি তৈরি হয়। যাদের আগেই ভ্রমণ-আতঙ্ক রয়েছে, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।”
টার্বুলেন্স আসলে কী?
‘ডেল্টা এয়ার লাইন্স’–এর বিমানচালক জ্যারেড হজ ব্যাখ্যা করেছেন, “বিমানের টার্বুলেন্স হল বায়ুর অনিয়মিত প্রবাহ। যেমন- সমুদ্রে বাতাসে ঢেউ ওঠে, তেমনি আকাশে অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের কারণে বিমানে ঝাঁকুনি লাগে। উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় টার্বুলেন্স বেশি হয়। এমনকি অন্য কোনো বিমানের পাশে দিয়ে উড়ে গেলে সেটির সৃষ্ট বাতাসের ধাক্কাও টার্বুলেন্সের কারণ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে জমি গরম হয়ে গেলে উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠতে থাকে, যা টার্বুলেন্স বাড়ায়। আবার শীতকালে শীতল নিম্নচাপ বায়ুর কারণে বাতাসের প্রবাহ বেড়ে যায়। পাহাড়ি এলাকায় উড়াল দেওয়ার সময়ও এ ধরনের ঝাঁকুনি দেখা দেয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলটরা আগে থেকেই এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।”
টার্বুলেন্স কি বিপজ্জনক?
বিমানের হঠাৎ ঝাঁকুনি যাত্রীদের মনে আতঙ্ক তৈরি করলেও বাস্তবে এর ঝুঁকি খুবই কম।
ডা. অ্যালিসন স্মিথ বলেন, “টার্বুলেন্স খুব সাধারণ একটি ঘটনা। আর এটি সচরাচর কোনো প্রকৃত বিপদ ডেকে আনে না।”
টার্বুলেন্স ঝাঁকির কারণে বিমান দুর্ঘটনার কথা- প্রায় শোনা যায় না। তবে যাত্রী বা কেবিন ক্রুরা সিটে না বসে থাকলে আঘাত পেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)’–এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে টার্বুলেন্সে গুরুতর আহত হয়েছেন ৩৪ জন যাত্রী ও ১২৯ জন ক্রু।
অথচ ২০২২ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে বিমানযাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ কোটি ৩০ লক্ষ জন। তাই আতঙ্কের চেয়ে নিরাপত্তা অনেক বেশি নিশ্চিত।
যেভাবে সামলানো যায় টার্বুলেন্স আতঙ্ক
সঠিক আসন বেছে নেওয়া: আইসল্যান্ডভিত্তিক এয়ারলাইন্স ‘প্লে’–এর ‘ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট’ সিগ্রিদুর সভাভারসদোত্তির বলেন, বিমানের ডানা বা সামনের দিকের আসনে বসলে তুলনামূলক কম ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। তাই সম্ভব হলে বুকিংয়ের সময় আসন বাছাইয়ে একটু সচেতন থাকুন।”
ভোরে বা রাতে ভ্রমণ করা
ডা. স্মিথ পরামর্শ দেন, “ভোর বা রাতের ফ্লাইটে সাধারণত ঝাঁকুনি কম হয়। কারণ এ সময়ে সূর্যের তাপ কম থাকে, ফলে বায়ুপ্রবাহ স্থিতিশীল থাকে। রাতের ফ্লাইটে জানালার পর্দা খোলা রাখলে বাইরের দৃশ্য দেখার কারণে আতঙ্কও কিছুটা কমতে পারে।”
উড্ডয়নের আগে মন শান্ত রাখা
ফ্লাইট শুরুর আগেই মনকে স্থির করার জন্য ধ্যান বা ‘ভিজ্যুয়ালাইজেশন’য়ের মতো কৌশল কাজে লাগতে পারে।
ডা. স্মিথ পরামর্শ দেন, “কল্পনা করুন আপনি নিরাপদে অবতরণ করছেন, অথবা নিজেকে একটি ‘ট্রাম্পোলিন’ বা সমুদ্রের নৌকায় ভাবুন। গভীর শ্বাস নিন এবং মনকে শান্ত রাখতে গান শুনুন।”
অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা
অনেকে ভাবেন সামান্য অ্যালকোহল নিলে ভয়ের মাত্রা কমবে।
তবে ডা. স্মিথ বলছেন, “অ্যালকোহল আসলে উদ্বেগ আরও বাড়াতে পারে। একইভাবে কফির অতিরিক্ত ক্যাফিনও শরীরকে আরও অস্থির করে তোলে। তাই বরং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।”
নতুন ওষুধে পরীক্ষা নয়
‘অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস’–এর প্রতিনিধি অ্যালি ম্যালিস সতর্ক করেছেন, “বিমানে বসে প্রথমবারের মতো কোনো নতুন ওষুধ বা স্লিপিং পিল খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীরের অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বরং পরিচিত কারও সঙ্গে ভ্রমণ করলে তারা আপনার উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারবেন।”‘
‘ক্রু’দের জানাতে দ্বিধা করবেন না
সিগ্রিদুর বলেন, “যাত্রীরা চাইলে কেবিন ক্রুদের তাদের আতঙ্কের কথা জানাতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত।”
এতে মানসিক ভরসা পাওয়া যায়।
বাস্তবতায় ফিরতে হবে
ডা. স্মিথ মনে করিয়ে দেন, “কল্পনায় বিপর্যয়ের দৃশ্য না এঁকে বরং নিজের নিয়ন্ত্রণে যা আছে, সেটির ওপর মন দিন।”
যেমন- সিটবেল্ট বাঁধা, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ। আর নিজেকে মনে করানো যে বিমান নিরাপদেই চলছে।
অবতরণের পর নিজেকে আশ্বস্ত করা
অনেক সময় গন্তব্যে পৌঁছানোর পরও ভ্রমণ-আতঙ্ক থেকে যায়। তখন নিজের জন্য স্বস্তিকর কিছু করা. যেমন- পছন্দের খাবার খাওয়া, গান শোনা বা বিমানবন্দরের বাইরে হাঁটাহাঁটি।
সিগ্রিদুর পরামর্শ দেন, “প্রতিটি নিরাপদ যাত্রার অভিজ্ঞতা মনে গেঁথে রাখতে হবে। এতে ভবিষ্যতের ফ্লাইটে নিজেকে আশ্বস্ত করা সহজ হবে।”
