ঘরের অগোছালো পরিবেশ মনে চাপ তৈরি করে যে কারণে অশান্ত মনে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
হতে সংগৃহিত
ঘর হল আশ্রয়, আর শোবার ঘর হল দিনের ক্লান্তি মুছে ফেলার সবচেয়ে শান্ত জায়গা।
তবে এই শান্ত পরিবেশটাও নষ্ট হয়ে যায় যখন বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিল, ড্রয়ারযুক্ত কাঠের আসবাব বা নাইটস্ট্যান্ডে জমে যায় অগোছালো জিনিসপত্র।
অনেকেই লোশন, গয়না, বই কিংবা একাধিক পানির গ্লাস রাখার জন্য হাতের কাছের এই স্থান বেছে নেন।
তবে এই ছোট জায়গাটির বিশৃঙ্খলা মনে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। আর তাতে ঘুমে ঘটতে পারে ব্যাঘাত।
তবে প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সময় ব্যয় করলেই নাইটস্ট্যান্ডকে রাখা যায় পরিপাটি ও শান্তিময়। যা ঘুমের মানও বাড়ায়।
‘নাইটস্ট্যান্ড’ বলতে যা বোঝায়
নাইটস্ট্যান্ড মানে হল বিছানার পাশে রাখা ছোট টেবিল বা আলমারি।
এতে সাধারণত ল্যাম্প, পানি, বই, ঘড়ি, বা মোবাইল ফোনের মতো দরকারি জিনিস রাখা হয়, যেন ঘুমানোর আগে বা সকালে ঘুম থেকে উঠেই সহজে ব্যবহার করা যায়।
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আসবাবপত্র-বিষয়ক লেখক হানাহ বেইকার বলেন, “অনেক নাইটস্ট্যান্ডে ছোট ড্রয়ারও থাকে। যেখানে চোখের মাস্ক, ওষুধ, বা অন্যান্য ছোট জিনিসপত্র রাখা যায়।”
অর্থাৎ সহজভাবে বললে, নাইটস্ট্যান্ড মানে— বিছানার পাশে রাখা ছোট টেবিল বা ড্রয়ারযুক্ত কাঠের আসবাব, যেখানে প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের নাগালে রাখা যায়।
ঘুমের আগে পরিষ্কারের কৌশল
এই ‘নাইটস্ট্যান্ড’ বা বিছানার পাশের টেবিল গুছিয়ে রাখতে বেশ কয়েকটি পদ্ধতির কথা জানান, হানাহ বেইকার।
পানীয় ঢেকে রাখা: বিছানার পাশে রাখা পানির গ্লাস বা কাপ- ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই ভঙ্গুর কাচের গ্লাস না রেখে ব্যবহার করতে হবে ঢাকনাযুক্ত বোতল বা স্পিলপ্রুফ টাম্বলার। এতে পানি ছিটকে পড়বে না, রাতভর ঠাণ্ডা থাকবে, আর সবচেয়ে ভালো ব্যাপার— ধুলো বা ময়লা পানিতে জমতে পারবে না।
ঢাকনাযুক্ত পানির বোতল ব্যবহার করলে শোবার ঘরের পরিবেশও থাকে পরিচ্ছন্ন, যা মনকে আরও শান্ত রাখে।
প্রয়োজনীয় জিনিসই রাখা: ‘নাইটস্ট্যান্ডে’র ওপরে কেবল প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই রাখা উচিত। যেমন— একটি ছোট গয়নার পাত্র, টেবিল ল্যাম্প, এক গ্লাস পানি, যে বইটি পড়ছেন তা, আর প্রয়োজনে টিস্যু।
এই জায়গার পাশের বিছানা যা বিশ্রামের স্থান। তাই মাথার কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলতে হবে শান্ত ও গভীর ঘুমের জন্য। কারণ গোছানো জায়গা মানেই প্রশান্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিজাইন প্রতিষ্ঠান কেএলএইচ হোম বলছে, “ঘুমানোর আগে চোখে পড়া বিশৃঙ্খলা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, আর পরিপাটি নাইটস্ট্যান্ড মন ও শরীর দুটোই প্রস্তুত করে ভালো ঘুমের জন্য।”
ড্রয়ার ব্যবহার: যেসব জিনিস হাতের কাছে থাকা দরকার কিন্তু ওপরে রাখলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সেগুলো রাখতে হবে নাইটস্ট্যান্ডের ড্রয়ারে।
চোখের মাস্ক, লোশন বা ছোট ছোট ঘুমের আনুষঙ্গিক জিনিস ড্রয়ারের ভেতরে ছোট ট্রে বা পাত্রে গুছিয়ে রাখতে হবে। এতে জিনিসপত্র থাকবে গুছানো, ধুলাও জমবে না।
এছাড়া বন্ধ স্টোরেজ ব্যবহার করলে ঘর দেখতে বড় ও শান্ত লাগে। কারণ খোলা জায়গায় বেশি জিনিস থাকলে চোখ বিশ্রাম পায় না।
বাড়তি সংরক্ষণের ব্যবস্থা: যদি নাইটস্ট্যান্ডে সব কিছু না ধরে, পাশে বা বিছানার নিচে ঢাকনাযুক্ত ঝুড়ি বা বাক্স রাখা যেতে পারে। এতে থাকবে বাড়তি জায়গা, আর ধুলাও জমবে না।
ঘরের অন্যান্য অংশের তুলনায় শোবার ঘরে ধুলা বেশি জমে, কারণ আমরা এখানে দীর্ঘ সময় থাকি এবং ত্বকের মৃত কোষও এতে ভূমিকা রাখে।
তাই ঢাকনাযুক্ত বাক্স ব্যবহার করলে শুধু জায়গা বাঁচে না বরং ঘরও থাকে অ্যালার্জিমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর।
দ্রুত পরিষ্কার
হাতে ধরার ছোট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করা উচিত। এ কাপড় ধুলা টানে, কিন্তু নিজে থেকে ধুলা ছড়ায় না। তাই এটি ঘর পরিষ্কারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশেষ করে মাথার কাছের এই আসবাবের জন্য।
ঘুমের আগের ১০ মিনিটে এই কাপড় ব্যবহার করে নাইটস্ট্যান্ডের নিচ, ওপরে ও ড্রয়ারের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। এরপর হালকা ভেজা কাপড়ে মুছে নিলে তা ভালো ঘুমে প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া পরিষ্কারের শেষে ল্যাভেন্ডার বা হালকা ঘ্রাণযুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করলে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে প্রশান্ত সুবাস, যা ঘুমের জন্য দারুণ সহায়ক।
ডিজাইন প্রতিষ্ঠান কেএলএইচ হোম–এর জানাচ্ছে, “পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে গন্ধের সংযোগ ঘুমের মান বাড়ায়। ল্যাভেন্ডার ঘ্রাণ মনকে স্বস্তি দেয়, চাপ কমায়, আর ঘুম আসতে সাহায্য করে।”
মোমবাতি জ্বালানো
সবশেষে ঘরে আনা যায় একটু উষ্ণতা ও সৌন্দর্য। হালকা ঘ্রাণযুক্ত মোমবাতি জ্বালানো হলে তা ঘরকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে। তবে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মোমবাতি নিভিয়ে নিতে হবে।
সুগন্ধি মোমবাতি শুধু ঘরের ঘ্রাণই বদলায় না, এটি ঘরে এনে দেয় মানসিক প্রশান্তিও।
আলো ও ঘ্রাণ একসঙ্গে মস্তিষ্কে প্রশান্তি জাগায়, যা ঘুমের আগে মানসিকভাবে শিথিল হতে সাহায্য করে।
