প্রয়োজন বুঝে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিলে বাসা পাল্টানোর দিনে ঝামেলা কমানো যায়।
সংগৃহিত
বাড়ি বদল করা মানেই ঝক্কি-ঝামেলা, পরিশ্রম আর ক্লান্তি। নতুন জায়গায় যাওয়ার আনন্দ থাকলেও, স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটা প্রায় সবার কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো।
আর যদি সেই কাজটা একাই করতে হয়, তখন তো কথাই নেই!
তবে একটু পরিকল্পনা আর সচেতনতা থাকলে একা বাড়ি বদল করাটাও সহজ হয়ে যেতে পারে।
সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান রিনাত ফৌজিয়া বলেন, “মানুষ সাধারণত প্যাকিং বা গোছানোর সময়টাকে খুব হালকাভাবে নেয়। তবে দেখা যায়, দুটি শোবার ঘর গোছাতেই গড়ে দুই সপ্তাহ এবং তিন শোবার ঘরের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যায়। তাই আগেভাগেই জিনিসপত্র বাছাই করে অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিতে বা দিয়ে দিতে হবে।”
আগে থেকেই জিনিসপত্র কমিয়ে ফেলা
যত কম জিনিস থাকবে, স্থানান্তর তত সহজ হবে। কয়েকটি ছুটির দিন বের করে আলমারি, রান্নাঘর ও ড্রয়ারগুলো খুলে ফেলতে হবে। যেসব জিনিস বছরের পর বছর ব্যবহার করা হয়নি, সেগুলো উপহার হিসেবে দিয়ে দিতে হবে। এতে নতুন বাড়িতে জায়গাও বাঁচবে, মনও হালকা হবে।
প্যাকিং শুরু করার আগে একটু সময় নিয়ে নিজের জিনিসপত্র বাছাই করা জরুরি।
যদি কোনো পোশাক এক বছর ধরে পরা না হয়ে থাকে, সেটি সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিয়ে নতুন জীবনের অধ্যায় শুরু করতে হবে।
উপযুক্ত প্যাকিং সামগ্রী সংগ্রহ
ভালোভাবে বাড়ি বদলের প্রথম ধাপ হল- সঠিক প্যাকিং সামগ্রী জোগাড় করা। যার জন্য প্রয়োজন হয় মজবুত বাক্স, শক্ত টেপ, বাবল র্যাপ বা পরিবেশবান্ধব প্যাকিং কাগজ, আর মোটা মার্কার কলম।
যদি অনেক ঝুলন্ত পোশাক থাকে, তাহলে ওয়ার্ডরোব বাক্স ব্যবহার করা ভালো। এতে জামাকাপড় গুছিয়ে নেওয়া সহজ হয়। ভারী আসবাব সরানোর জন্য স্লাইডার খুব সহায়ক হতে পারে।
বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বক্সে লিখে রাখা
শুধু ‘রান্নাঘর’ বা ‘বসার ঘর’ না লিখে, বাক্সের ভেতরে থাকা প্রধান জিনিসগুলোর নাম লিখে রাখতে হবে।
যেমন- হাঁড়ি-পাতিল, বেইকিং ট্রে, চামচ ইত্যাদি। এতে নতুন বাড়িতে গিয়ে জিনিস খোঁজার ঝামেলা কমে যাবে।
এছাড়া বাক্সগুলো রং অনুযায়ীও গোছানো যেতে পারে। যেমন- রান্নাঘরের বাক্সে লাল টেপ, শোবার ঘরে নীল, বাথরুমে সবুজ।
এতে বাক্স খোলার সময় সাহায্যকারীরা সহজেই বুঝে যাবেন কোন বাক্স কোন ঘরে যাবে।
প্রথম রাতের ব্যাগ আলাদা রাখা
নতুন বাড়িতে পৌঁছে ক্লান্ত শরীরে সব বাক্স খুলে দরকারি জিনিস খুঁজে বের করা সত্যিই কষ্টকর। তাই আগেই একটি প্রথম রাতের ব্যাগ তৈরি করে রাখতে হবে।
এই ব্যাগে রাখা যেতে পারে ঘুমের পোশাক, টুথব্রাশ, সাবান, প্রয়োজনীয় ওষুধ, এক সেট জামা-কাপড় এবং কিছু হালকা খাবার।
এছাড়া মানিব্যাগ, চাবি, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মোবাইল চার্জার সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। এতে কোনো জরুরি জিনিস ভুল করে বাক্সে চলে গেলেও সমস্যায় পড়তে হবে না।
প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য নেওয়া
একা বাড়ি বদল মানে একেবারে একা সব কাজ করতে হবে তা নয়। বাজেট অনুযায়ী কিছু অংশে পেশাদার সহায়তা নেওয়া যায়।
যেমন- ভারী আসবাব তোলা বা গাড়িতে তোলার কাজটা পেশাদার কর্মীদের দিয়ে করানো উচিত। এতে সময় ও পরিশ্রম দুটোই বাঁচবে।
তবে মনে রাখতে হবে, পেশাদার পণ্য পৌঁছে দেওয়া সার্ভিস, ক্লিনার বা ট্রাক ভাড়া করতে হলে আগেভাগেই বুকিং দিতে হবে। দেরি করলে বাড়তি খরচ বা সেবা না পাওয়ার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে ব্যস্ত মৌসুমে।
মাপজোখে ভুল না করা
নতুন বাড়ির দরজা বা সিঁড়ির মাপ না নিয়ে আসবাব পাঠিয়ে দিলে বড় বিপত্তি ঘটতে পারে। তাই আগেই মাপ নিতে হবে। ঘরের সোফা, বিছানা বা আলমারি সহজে ভেতরে যাবে কি-না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ধীরে ধীরে কাজ শেষ করা
বাড়ি বদলের দিন একদম দৌড়ঝাঁপে সব কাজ শেষ করার চেষ্টা করা যাবে না। নিয়মিত বিরতি নিতে হবে, পানি খেতে হবে, হালকা খাবার খেয়ে শরীরে শক্তি রাখতে হবে।
কারণ বাড়ি বদল শুধু দৌড়ের নয়, এটা একটা ধৈর্যেরও কাজ।
একবারে সব বাক্স তোলার চেষ্টা না করে ধীরে ধীরে ভাগ ভাগ করে তুললে হবে। এতে শরীর ও মন দুটোই চাঙা থাকবে।
বক্স খোলার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নেওয়া
নতুন বাড়িতে গিয়ে বাক্সগুলো সপ্তাহের পর সপ্তাহ পড়ে থাকলে বাড়ির গোছনো পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই নিজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করতে হবে।
যেমন- প্রতিদিন দুইটি বাক্স খোলা। ধীরে হলেও প্রতিদিন একটু করে বক্স খোলা হলে গুছিয়ে নেওয়ার কাজ সহজ হবে।
