“আমাদের সাথে এনসিপির নেতাদের একটা সম্পর্ক আছে। আমরা জুলাই আন্দোলনে একসাথে লড়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছি,” বলেন বাগছাসের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাকিব।
সংগৃহিত
আত্মপ্রকাশের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মারামারি, আত্মপ্রকাশের আট মাসের গঠনতন্ত্র ঠিক করতে না পারা, ডাকসু নির্বাচনে ভরাডুবি, এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস তাদের নাম, নেতৃত্ব ও কাঠামোগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির নেতাদের নিয়ে গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির অনুপ্রেরণায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করা বাগছাস দলটির স্বীকৃতি না পেলেও নেতাকর্মীরা বলছেন, এখন তারা এনসিপির পুরনো প্ল্যাটফর্ম ‘ছাত্রশক্তি’ নামে ফিরছেন।
তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আয়োজিত জাতীয় বার্ষিক সভায় নাম পরিবর্তন ও সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
তবে আগের মতো সংগঠনের নাম ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নাম এখনো ঠিক হয়নি। এখন দুটি নাম আলোচনায় আছে। সেক্ষেত্রে হয় ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ হবে। না হলে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ হবে। তবে কোনোটাই এখনো চূড়ান্ত না।”
২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ অন্যতম নেতা আখতার হোসেনের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশ করে।
শিক্ষা-শক্তি-মুক্তির স্লোগান সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি, একটি জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রগঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া এবং রাজনৈতিক পরিসর নির্মাণ ও নাগরিকমুখী রাজনীতির মাধ্যমে সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন এ ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছিল।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আখতার হোসেনের সঙ্গে ছিলেন নাহিদ ইসলাম।
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া ও সদস্য সচিব মো. আবু বাকের মজুমদার।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবং সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগে দেখা যায় সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের ছাত্রনেতাদের।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তাদের মধ্যে দুজন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ক্ষমতার পালাবদলে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন। পরে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নাহিদ এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন। দলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব নিয়েছেন আখতার হোসেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কর্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের কেউ কেউ এনসিপিতে যুক্ত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ যুক্ত হয়েছেন বাগছাসে।
চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করে বাগছাস। তার আগে ৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
বাগছাস প্রতিষ্ঠার দিন থেকে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দুর্বলতার বিষয়টি সামনে আসে।
সেই দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন করে সাংগঠনিক অবস্থান তৈরি করতে সংগঠন সংস্কারের দিকে যাওয়ার কথা বলেছেন নেতাকর্মীরা।
এ নিয়ে বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “আমাদের সাংগঠনিক গতিশীলতার লক্ষ্যে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমরা দেখেছি, অনেকে আমাদের সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে কীভাবে আমাদের ক্ষতি করেছে। সেইসব জায়গায় নিজেদের শুধরে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই।
“তাই, আমাদের মিশন, ভিশনকে শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট করতে চাই। তাই, আমরা আমাদের সাংগঠনিক সংস্কারের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এদিকে ছাত্র সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সংগঠক বলেছেন, এনসিপি বাগছাসকে এতদিন তাদের ছাত্র সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে, এখন এনসিপি তাদের ছাত্র সংগঠন হিসেবে চায়। তাই, বাগছাসের নাম বদলে ‘ছাত্রশক্তিতে’ ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
তবে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিব বলেন, “আসলে আমরা এনসিপির ছাত্র সংগঠন হিসেবে যোগ দিচ্ছি বা আমাদেরকে এনসিপি চাচ্ছে, বিষয়টা এমন না। আমাদের সাথে এনসিপির নেতাদের একটা সম্পর্ক আছে। আমরা জুলাই আন্দোলনে একসাথে লড়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছি। তাই, আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। সেটা ঠিক।”
গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আত্মপ্রকাশের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেক পক্ষের হট্টগোল হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
‘নেতৃত্বে পরিবর্তন, হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি’
বাগছাসের কয়েকজন নেতাকর্মী বলেছেন, সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ‘ছাত্রশক্তি’ নামে কর্মকাণ্ড শুরু করবে।
তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন জাহিদ আহসান ও আবু বাকের মজুমদার। তাদের দুইজনের মধ্য থেকে যেকোনো একজন আসতে পারেন এ পদে। এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদে মহির আলম ও তাহমিদ আল মুদ্দাসসির আলোচনায় আছেন।
আর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরের ছাত্ররাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। ‘ছাত্রশক্তির’ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাগছাসের আহ্বায়ক কমিটির আল আমিন সরকার ও লিমন মাহমুদ হাসান আলোচনায় আছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসতে পারেন মোহাম্মদ সাকিব।
এ বিষয়ে আব্দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে এসব বিষয়ে। আমরা আজ রাতে হয়ত একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।”
‘মধ্যমপন্থি রাজনীতি করবে ছাত্রশক্তি’
বাগছাস গেল আট মাসে তাদের মতাদর্শিক অবস্থান ঠিক করতে পারেনি। ফলে সাংগঠনিক এক ধরনের দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সংগঠনটির যুগ্ম-সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাকিব।
তিনি বলেন, “কোনো নতুন ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশের পরে তাদের মতাদর্শিক অবস্থান তুলে ধরতে পারে না। তাই, আমাদেরও গত আট মাসে সমস্যা ছিল। অনেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যুক্ত হয়ে আমাদের ব্যানারে গুপ্ত রাজনীতি করেছে। আমরা এখন সেটা থেকে বেরিয়ে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্থির হতে চাই।
“আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে, আমরা ‘কল্যাণ রাজনীতির’ পরিবর্তে ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ করতে চাই। তাই, না ডানে না বামে, আমরা মধ্যমপন্থি রাজনীতি করবো।”
ডাকসু নির্বাচনে বাগছাসের প্যানেল ঘোষণা। এ নির্বাচন ঘিরে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ান কয়েকজন, সংগঠনের বাইরে গিরে প্রার্থী হন কয়েকজন। ফাইল ছবি
‘নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে আসবে গঠনতন্ত্র’
বাগছাসের আট মাসেও তারা গঠনতন্ত্র ঠিক করতে পারেনি। ডাকসু নির্বাচনে অনেকে সংগঠনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নিলেও গঠনতন্ত্র না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংগঠনটি।
তবে এবার নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে গঠনতন্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা বলেছেন মোহাম্মদ সাকিব।
সংগঠনটির এই যুগ্ম-সদস্য সচিব বলেন, “আমাদের আগে গঠনতন্ত্র ছিল। তবে সেটা খসড়া, যা পাবলিক হয়নি। আমরা আট মাসে সেটাকে সংস্কার করেছি। যা পরবর্তী নেতৃত্বের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হবে।”