অধিনায়কত্ব নিয়ে পাকিস্তানের চিরকালীন অনিশ্চয়তার পথ ধরেই মঞ্চস্থ হলো নতুন নাটক।
রাওয়ালপিন্ডিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন চলছে পাকিস্তানের টেস্ট। এর মধ্যেই ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে এলো বড় পালাবদল। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সরিয়ে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক করা হলো শাহিন শাহ আফ্রিদিকে।
রাওয়ালপিন্ডিতে চলতি টেস্টে খেলছেন এই দুজনই। টেস্ট চলার মাঝেই যেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এবং যে প্রক্রিয়ায় তা হলো, পাকিস্তান ক্রিকেটের চিরকালীন অনিশ্চয়তার পথ ধরেই যেন মঞ্চস্থ হলো নতুন নাটক।
রিজওয়ানকে বাদ দেওয়ার কোনো কারণ সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বিবৃতিতে। সেখানে এমনকি ৩৩ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটারের নামই উল্লেখ করা হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামাবাদে নির্বাচক কমিটির সঙ্গে পাকিস্তানের সাদা বলের কোচ মাইক হেসনের বৈঠকের পর নতুন অধিনায়ক চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের তিন সংস্করণের যে তিন অধিনায়ক, সেখানে টেস্ট অধিনায়ক শান মাসুদ ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সালমান আলি আগার চেয়ে রিজওয়ানের অবস্থানই তুলনামূলক নিশ্চিক মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশিত হতে থাকে, রিজওয়ানকে সরিয়ে আফ্রিদিকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হতে পারে। এর মধ্যেই গত শনিবার পিসিবি বিবৃতি দিয়ে জানায়, সামনের সিরিজের জন্য অধিনায়ক চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবেন দায়িত্বশীলরা। তখনই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় রিজওয়ানের পরিণতি।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, স্রেফ কোচ মাইক হেসনের চাওয়াতেই নয়, পিসিবির দায়িত্বশীল কর্তাদের সায় আছে এই পরিবর্তনে।
গত বছর নেতৃত্ব পাওয়ার পর রিজওয়ানের শুরুটা ছিল অসাধারণ। গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়াতে স্মরণীয় সিরিজ জয়ের পর জিম্বাবুয়েতে সিরিজ জেতে পাকিস্তান, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠেই হোয়াইটওয়াশ করে তারা। তবে দেশের বাইরে দুর্দান্ত সাফল্যের পর এই বছর থেকে পাল্টে যায় চিত্র।
বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে দেশের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হেরে যায় তারা নিউ জিল্যান্ডের কাছে। পরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে পাকিস্তান ছিটকে পড়ে গ্রুপের তলানিতে থেকে। মার্চে নিউ জিল্যান্ড সফর থেকে রিজওয়ানের দল হোয়াইটওয়াশড হয়ে ফেরে খর্বশক্তির কিউই দলের কাছে। পরে অগাস্টে সিরিজ হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
সব মিলিয়ে তার নেতৃত্বে ২০ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৯টি, হার ১১টি। অধিনায়ক হিসেবে তার ব্যাটিং রেকর্ড অবশ্য ভালো। এই সময়ে তার রান দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২৫। তার চেয়ে স্রেফ চার রান বেশি সালমান আলি আগার। অধিনায়ক হিসেবে রিজওয়ানের ব্যাটিং গড় (৪১.৬৬) তার ক্যারিয়ার গড়ের (৪০.৪৯) চেয়ে বেশি।
আফ্রিদির নেতৃত্বের অভিজ্ঞতাও খুব সুখকর নয় এখনও পর্যন্ত। টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর স্রেফ একটি সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। নিউ জিল্যান্ডে ওই সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারার পর নাটকীয়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে, অনেকটা এবার রিজওয়ানের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেই।
২৫ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পেলেন প্রথমবার। বল হাতে তিনি দারুণ ফর্মে আছেন এই সংস্করণে। গত বছর তিনি ছিরেন দলের সেরা উইকেট শিকারি। ২০২৩ বিশ্বকাপের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২২ ওয়ানডে খেলে ৪৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি, পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
নভেম্বরের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরু হবে আফ্রিদির নেতৃত্বের অধ্যায়।
