সাদার শুভ্রতা মাড়িয়ে এখন বেছে নেওয়া হচ্ছে রঙিন পাদুক।
সংগৃহীত
একসময় সাদা স্নিকার্স ছিল আধুনিকতার প্রতীক। তবে এখন ফ্যাশন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে।
এই সময় সাদার সরলতা নয়, বরং রঙিন স্নিকার্সই দিচ্ছে ফ্যাশনে নতুন মাত্রা।
বিভিন্ন রংয়ের সমন্বয়ে তৈরি এই জুতাগুলো শুধুমাত্র সাজসজ্জার অংশ নয়, বরং মানসিক অবস্থারও প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানী জেনিফার হেইনেন সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “সাদা স্নিকার্স জনপ্রিয় ছিল তখন, যখন আমরা ছিলাম অনিশ্চয়তার সময়ে। সেগুলো ছিল মানসিক নিরাপত্তার প্রতীক। কিন্তু এখন আমরা ফিরে গেছি আত্মপ্রকাশের দিকে।”
তিনি আরও বলেন, “রঙিন স্নিকার্স আসলে আনন্দ, ব্যক্তিত্ব এবং নতুন করে বাঁচার মানসিকতা প্রকাশ করছে। পোশাকের মাধ্যমে নিজের জন্য তৈরি করছি ‘ডোপামিনের ডোজ’— অর্থাৎ সাজসজ্জা থেকেই পাচ্ছি আনন্দের অনুভূতি।”
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানী শাকাইলা ফোর্বস-বেল বলেন, “খেলাধুলাপূর্ণ মনোভাব ও সৃজনশীলতার সাথে রঙিন স্নিকার্সের সম্পর্ক গভীর। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি খেলোয়াড় মনোভাবের তারা আশাবাদী হয়, সৃজনশীলতায় এগিয়ে থাকে এবং জীবনের প্রতি উচ্ছ্বাস অনুভব করে। আবার এই মনোভাব মানসিক চাপও কমাতে সাহায্য করে।”
রংয়ের মনস্তত্ত্ব ও ফ্যাশনে প্রতিফলন
ফ্যাশন কেবল বাহ্যিক নয়, এটি অন্তর্দুনিয়ারও আয়না। রঙিন স্নিকার্স আসলে এক ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতীক।
আগে যেখানে সাদা রং ছিল নিরপেক্ষতার প্রতীক এখন সেখানে লাল, সবুজ, গোলাপি, নীল, এমনকি ধাতব রংও জায়গা করে নিয়েছে।
কানাডার অন-এয়ার ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ ও সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট সিন্ডি কনরয় বলেন, “রঙিন স্নিকার্স আসলে ব্যক্তিত্ব প্রকাশের এক দুর্দান্ত উপায়। কেউ চাইলে নরম রং বেছে নিতে পারে, আবার কেউ চাইলে তীব্র বৈপরীত্য রং মিলিয়েও পরতে পারে। এতে প্রতিদিনের পোশাকে যোগ হয় প্রাণচাঞ্চল্য।”
পুরানো ধারার সঙ্গে নতুনের মেলবন্ধন
রঙিন স্নিকার্স কেবল আধুনিকতার প্রতীক নয়, এতে আছে নস্টালজিয়ার ছোঁয়াও।
ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানী শাকাইলা ফোর্বস-বেল ব্যাখ্যা করেছেন, “অতীতের স্মৃতি বা নস্টালজিয়াকে আঁকড়ে ধরা মানুষের মনে সন্তুষ্টি ও সামাজিক সংযুক্তি বাড়ায়। তাই ’৭০ বা ’৮০ দশকের অনুপ্রেরণায় তৈরি রঙিন স্নিকার্স আবারও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।”
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরীক্ষামূলক লেখক ও স্টাইল বিশেষজ্ঞ মিশেল রে উয়ি জানান, “এগুলো শুধু ফ্যাশনের অংশ নয়, বরং আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন ব্যবহারে মন ভালো রাখার জন্যও কার্যকর।”
পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ারড্রোব স্টাইলিস্ট’ এলিসা এলিস পরামর্শ দেন, “স্নিকার্স বেছে নেওয়ার আগে প্রথমে নিজের পোশাকের সংগ্রহ খুঁটিয়ে দেখা উচিত।”
তিনি বলেন, “আপনি কোন পোশাকের সঙ্গে স্নিকার্স পরবেন— ড্রেস, জিন্স, স্কার্ট, নাকি সাধারণ প্যান্ট- সেটা ভাবুন আগে। রংও সেই অনুযায়ী নির্বাচন করলে জুতাটা হবে প্রতিদিনের সঙ্গী।”
এলিস আরও বলেন, “যারা নিরপেক্ষ রং পছন্দ করেন, তাদের জন্য হালকা ধাতব রং বা লাল রং হতে পারে আদর্শ। আর যারা সাহসী, তারা চেষ্টা করতে পারেন উজ্জ্বল গোলাপি, সবুজ বা কোনো প্রাণীর ছাপযুক্ত ডিজাইন।”
দৈনন্দিন জীবনে রঙিন স্নিকার্সের প্রভাব
ফ্যাশন মানসিক সুস্থতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। লন্ডন-ভিত্তিক ফ্যাশন মনোবিজ্ঞানী শাকাইলা ফোর্বস-বেল মনে করিয়ে দেন- খেলাধুলা ও আনন্দ কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। রঙিন স্নিকার্স সেই খেলাধুলাপূর্ণ মনোভাবকে প্রতিদিনের জীবনে ফিরিয়ে আনছে।”
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্টাইল বিশেষজ্ঞ রেবেকা কাহানে প্যানকো নিজে লক্ষ করেছেন কীভাবে রঙিন স্নিকার্স একটি সাধারণ পোশাককেও নতুন মাত্রা দেয়।
তার মতে, “এটি শুধু একটি ট্রেন্ড নয়, বরং এক ধরনের মানসিক পুনর্জাগরণ।”
সংগৃহীত