ব্যাংকগুলো চেক নিষ্পত্তির আগে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বিএফআইইউকে অবহিত করেছিল।
হতে সংগৃহিত
বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকে থাকা হিসাব থেকে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের ২৮৭ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখায় ডা. ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন প্রিমিয়ার প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, প্রিমিয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ইকবাল সেন্টার, প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও বুখারা রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন হিসাবে জমা থাকা অর্থ তুলে নিতে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে চেক জমা দিয়েছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী, অন্য কোনো ব্যাংকে চেক জমা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের মাধ্যমে স্বাক্ষর ও টাকার পরিমাণ যাচাই করে ছাড় করা হয়। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাব ব্যবহার করা হয়।
পরবর্তীতে একই কার্যদিবসে তা চূড়ান্তভাবে দুই ব্যাংকের মধ্যে হিসাব-টু-হিসাব নিষ্পত্তি করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটা অনলাইনে স্বয়ংক্রিভাবে সম্পাদিত হওয়ায় তাৎক্ষণিক ধরা যায় না বলা যায়।
এই সুযোগটি নিতে চেয়েছিলেন ডা. ইকবাল।
কিন্তু বিএফআইইউ এর হস্তক্ষেপে লেনদেনগুলো মাঝপথেই আটকে যায়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চেক নিষ্পত্তির আগে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বিএফআইইউকে অবহিত করেছিল।
যদিও নিয়ম অনুযায়ী, অবরুদ্ধ থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।
নিষেধাজ্ঞায় থাকা হিসাবের বিপরীতেও ফের চেক গ্রহণ করে অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করার বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরো ব্যাপারটি বিএফআইইউ তদন্ত করছে। দু’একদিনের মধ্যেই তারা আমাদের নির্দেশনা দেবে আশা করছি। পেলেই আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো। এখন যাই বলবো তা হবে অনুমানভিত্তিক যা, সঠিক নাও হতে পারে।’’
ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী, তিন সন্তান মঈন উদ্দিন ইকবাল, ইকরাম ইকবাল ও নওরীন ইকবাল এবং আরেক সদস্য জামাল জি আহমেদের সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রয়েছে।
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্য প্রকাশ্যেও দেখা যায় না। তারা বিদেশে অবস্থান করছেন, এমন খবর হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক খাতের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসে।
ব্যাংক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ গঠন করে দেওয়ার সময়কালে নিজে থেকেই সরে দাঁড়ান প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. ইকবাল।
প্রায় ২৬ বছর অর্থাৎ প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৯৯ থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা ডা. ইকবাল নিজ থেকেই স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন চলতি বছরের গত ১২ জানুয়ারি। দুদিন পর তা গ্রহণ করা হয়।
সেসময় তার সঙ্গে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা তার আরেক ছেলে মঈন ইকবালও পদত্যাগ করেন। তিনি কোনো কারণ না দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পিতা-পুত্র দুজনই পরিচালক হিসেবেও সরে দাঁড়ান।
এরপর তার আরেক ছেলে মোহাম্মাদ ইমরান ইকবালকে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়।
ব্যাংকাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য নিজে সরে গিয়ে কৌশলে পর্ষদে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পদত্যাগ করেছিলেন।
গেল ১৯ অগাস্ট বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির পর্ষদে ‘সুশাসনের ঘাটতি’ থাকাকে কারণ দেখিয়ে তা ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ইকবালের পরিবার মুক্ত হয় প্রিমিয়ার ব্যাংক।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এইচ বি এম ইকবাল বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক বলছে, “ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ২০১১ সাল থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থাকার পাশাপাশি গুলশানে হোটেল রেনেসাঁ, গুলশান-২ এ হিলটন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা নির্মাণ করেছেন।”
এসময়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সদস্যও ছিলেন তিনি।
ডা. ইকবাল গত এক যুগে এমন অসংখ্য কোম্পানির মালিক হয়েছেন এবং ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে থেকে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে।
আগেও নিষেধাজ্ঞার হিসাব থেকে টাকা তোলা হয়
চলতি বছরের গত এপ্রিলে ডা. ইকবাল বিদেশে অবস্থান করেই প্রিমিয়ার ব্যাংকের হিসাব থেকে স্থানীয় মুদ্রা ও বৈদেশিক মুদ্রা মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলে নেন।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়।
অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের ২৩–এর ৬ ধারা অনুযায়ী প্রিমিয়ার ব্যাংককে তুলে নেওয়া অর্থের সমপরিমাণ ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ও ৩০ হাজার ডলার জরিমানা করে বিএফআইইউ।
আগের খবর: