“প্রত্যেকটা ফাইল ওখানে দিন শেষে আটকায় দেয়।”
সংগৃহিত
সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন চাইলেও, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব জায়গায় ‘গুণ্ডামি’ চলায়’ বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
জুলাই আন্দোলনের পর ‘আমলারা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিলেও’ চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে তাদের ‘কোনো পরিকল্পনা নেই’ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
রোববার দুপুরে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসির সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধি দলের বিসিএস পরীক্ষার অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা শেষে কথা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন হাসনাত।
তিনি বলেন, “পিএসসি চায় আর্থিক অটোনমি, পিএসসি চায় ফাংশনাল অটোনমি, আর আমরা দেখি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সব জায়গায় এক ধরণের গুন্ডামি। সব জায়গায়। এরা একটা গুণ্ডামি চালায়, সব কিছুতে। প্রত্যেকটা ফাইল ওখানে দিন শেষে আটকায় দেয়।
“আমার মনে হয় যারা বর্তমানে আমলা রয়েছেন তারা বাস্তবতা ধারণ করতে পারছেন না। সময়কে পড়তে পারছেন না। সময়ের প্রয়োজন যদি আপনি পড়তে না পারেন, আপনি যদি মান্ধাতার আমলের সিস্টেমকে বলবৎ করার জন্য পশ্চাৎপদতা থাকে, তাহলে এ সময়কে আপনি কখনওই ধারণ করতে পারবেন না। আর আপনি যদি যুগকে ধারণ করতে না পারেন, তাহলে এই যুগে আমরা যারা আছি তাদের ক্রোধ অবশ্যই বিস্ফোরিত হবে।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সংস্কারের মধ্যে দিয়ে এসব জটিলতা নিরসনের আহ্বান জানিয়ে হাসনাত বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কারের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল সেটির মধ্যে আমার এক ধরণের অনীহা পেয়েছি। আর এই ফাইলও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লেজুড় বৃত্তি, এই টেবিল থেকে ওই টেবিল, এটাও ছয় মাস লেগে যাবে।”
তিনি বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত, পোস্টিং প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত। ৫ অগাস্টের পর কেউ সবচেয়ে বেশি বেনিফিট পেয়ে থাকলে তা আমলারা।”
হাসনাত বলেন, “কিন্তু আমরা দেখতে পেরেছি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসির মধ্যে সমন্বয় নেই। চাকরি প্রার্থীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নোট বুকের মধ্যে প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যেই নেই।”
অনেক আমলা নিজেরাই নিজেদের দুইটা তিনটা ‘পদোন্নতি দিয়েছেন’ অভিযোগ তুলে এনসিপি নেতা বলেন, “কিন্তু তাদের নোটবুকে চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে কোন পরিকল্পনা নাই “
চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজের দীর্ঘসূত্রিতা তুলে ধরে হাসনাত বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জুন মাসের ১৯ তারিখ ৪৩০টি পদের রিকুইজিশন দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল, যেটা ৪৪ এর জন্য। কিন্তু এর মধ্যে ৪৪ এর ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, আবার পুনরায় ফলাফল প্রকাশিত হতে পারে। কিন্তু সচিবালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পর্যন্ত ৫ মাস সময় চলে গেছে। বিষয়টির সুরাহা হয়নি।”
বিসিএসের বিষয়ে পিএসসির তরফ থেকে আন্তরিকতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চাকরি বিধি সংশোধন প্রয়োজন। যার এখতিয়ার রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে।”
এর আগে সকালে চলমান বিসিএস পরীক্ষাগুলোর অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা করতে পিএসসিতে আসেন হাসনাত আবদুল্লাহ, দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া।
এনসিপির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে পিএসসির কাছে ১৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
>> ২০২৩ এর নন-ক্যাডার বিধি সংশোধন। যা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পিএসসি থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর যেন চিঠি ইস্যু করা হয়। ৪৩ বিসিএস থেকেই যেন সমন্বয় করা হয়।
>> জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কতৃক পিএসসিতে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের জন্য অধিযাচিত পদসমূহে দ্রুততম সময়ে সুপারিশ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
>> ৪৪তম বিসিএসে অধিযাচিত ৮৭০ পোস্ট বৃদ্ধিসহ চলমান সপ্তাহেই ৪৪ এর পুনফলাফল দেওয়া। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই বিসিএস চলমান থাকায় চলতি বছরেই যেন গেজেট প্রকাশিত হয়।
>> ২০২৩ এর নন-ক্যাডার বিধির সংশোধন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে চলমান (৪৩, ৪৪,৪৫,৪৬ ও ৪৭তম) সব বিসিএস থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নন-ক্যাডার পদে সুপারিশের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
>> ৪৩তম বিসিএস নন ক্যাডার যারা পূর্বে ১২ গ্রেডের হেড টিচার হিসেবে সুপারিশ পেয়েছে তাদের যেন মেধার ভিত্তিতে নতুন সার্কুলারে যুক্ত করা হয়।
>> ৪৫তম বিসিএস ভাইভার হাজিরা পত্রে ভাইভা মার্কস ১০০ নম্বর লেখা। এটার আপডেট।
>> স্বচ্ছতা রক্ষার্থে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভার মার্কস প্রকাশ করা।
>> চূড়ান্ত নম্বরপত্র ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর দিয়ে দেখার সুযোগ করে দেওয়া।
>> পুলিশ ভ্যারিফিকেশন জটিলতা হ্রাস। ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়া এক মাসের মধ্যে সম্পন্নকরণ।
>> ক্যালেন্ডার ইয়ারে প্রতিটি বিসিএস শেষ করা।
>> শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে স্পেশাল বিসিএসগুলোতে প্যানেল সিস্টেম রাখা।
>> মৌখিকে বোর্ডভিত্তিক মার্কসের তারতম্য হ্রাসে কয়েকটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি করা (ভাষা দক্ষতা, পঠিত বিষয়, ক্যাডার চয়েজ, সমসাময়িক ইস্যু, রাষ্ট্রীয় পলিসি, প্রার্থীর বাহ্যিক ও মানসিক যোগ্যতা ইত্যাদি)।
>> প্রিলিমিনারি থেকে লিখিত পরীক্ষার মধ্যবর্তী যৌক্তিক সময়সীমা। অন্তত দুই মাস বা ৫০ দিন পূর্বে লিখিত রুটিন প্রকাশ।
>> চুড়ান্ত রেজাল্ট দেয়ার আগে ক্রস চেক করা যাতে সম ক্যাডার বা নিচের ক্যাডার কেউ না পায়। যেটা পুর্বের কমিশন করত।
>> পিএসসির অধীনে হওয়া পরীক্ষাগুলো গ্রেডভিত্তিক (ক্লাস্টার/ সমন্বিত) নেওয়া।
