ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে উঠে তখন জ্বলজ্বলে আলো ছড়ানোর মতো পার্সেইড উল্কাবৃষ্টির ঘটনা ঘটে।
তারার আলোয় মুগ্ধ হওয়ার জন্য এখন ঘরের ভেতর থেকে ডেকচেয়ার বের করে বাইরে বসার সময় এসেছে। কারণ বছরের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি দেখার এক সুন্দর মুহূর্ত উপভোগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তারাপ্রেমী মানুষেরা।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে সবচেয়ে বেশি পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে। তবে এ উল্কাবৃষ্টি জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে আসছে এবং আরও কয়েক সপ্তাহ ধরে আকাশে তারার ঝলকানি দেখাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।
পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি কী?
ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে উঠে তখন জ্বলজ্বলে আলো ছড়ানোর মতো পার্সেইড উল্কাবৃষ্টির ঘটনা ঘটে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড’-এর জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী ড. রিচার্ড পার্কার বলেছেন, “প্রতি বছর ‘কমেট ১০৯পি/সুইফট-টাটল’ নামের এক পুরানো ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ থেকে আসা ধূলাবালি দিয়ে ভরা এক পথ পাড়ি দেয় পৃথিবী। এ ধূমকেতুর বয়স প্রায় ৫০০ কোটি বছর, যা পৃথিবীর থেকেও বেশি।”
তিনি বলেছেন, ধূমকেতুটি প্রতি ১৩৩ বছর অন্তর অন্তর পৃথিবীর সৌরজগতের অভ্যন্তরীণ অংশে আসে এবং এইবারের পর ২১২৬ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছ দিয়ে যাবে এটি।
পার্কার আরও বলেছেন, “ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিকটবর্তী মহাজাগতিক বস্তু হলেও সৌভাগ্যক্রমে আগামী হাজার হাজার বছর পর্যন্ত আমাদের পৃথিবীর বিপজ্জনক কোনও দুরত্বে আসার আশঙ্কা নেই এর।”
পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি ঘটে কারণ ধূমকেতু থেকে আসা ধূলা ও ধ্বংসাবশেষ মহাকাশে দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায়।
কখন, কোথায় দেখা যায়?
প্রতিবছর পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায় উল্কাবৃষ্টির ঘটনা।
গ্রিনউইচের ‘রয়াল অবজারভেটরি’র একজন জ্যোতির্বিদ ড. এড ব্লুমার বলেছেন, “যেহেতু বছরের পর বছর ধরে আমরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করি তাই একই সময় ও একই দিক থেকে এ ধূলিকণার সঙ্গে সংঘর্ষ করি। ফলে আমাদের চোখে, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে দেখা গেলে, পার্সেইড যেন প্রতি বছর আকাশের একই জায়গা থেকে আসে বলে মনে হয়।”
মহাকাশের যেখান থেকে এসব উল্কা ঝলমল করতে শুরু করে তা ‘পার্সিয়াস’ নামের নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে অবস্থিত। ফলে এ উল্কাবৃষ্টির নাম রাখা হয়েছে ‘পার্সেইড’।
ব্লুমার বলেছেন, ‘পার্সিয়াস’ নক্ষত্রমণ্ডলী এখন উত্তর-পূর্ব আকাশে দেখা যাচ্ছে। তবে উল্কাবৃষ্টি ভালোভাবে দেখতে চাইলে পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তাকানো উচিত, যেখানে শনি গ্রহ অবস্থিত বা একটু উত্তরে তাকিয়ে ‘উর্সা মেজর’ নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে দেখতে পারেন আগ্রহীরা।
পূর্ণিমা চাঁদের আলোর কারণে আকাশ বেশ আলোকিত থাকায় ওই সময় দুর্বল বা কম উজ্জ্বল প্রকৃতির বিভিন্ন উল্কাপাত ভালো করে দেখা কঠিন হতে পারে। ফলে এ বছর উল্কাবৃষ্টির ছোট ছোট উজ্জ্বল অংশাবশেষ দেখা কিছুটা কঠিন হতে পারে।
ব্লুমার বলেছেন, উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে রাতের অন্ধকার পরিবেশ এবং যেখানে আকাশ পরিষ্কার সেখানে বসে চোখকে মানিয়ে নিতে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
বন্ধুদের সঙ্গে এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখার পরামর্শ দিলেও ব্লুমার সতর্ক করে বলেছেন, একেকটি উল্কা কেবল এক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ের জন্যই ঝলকাতে পারে।
“বিষয়টি এমন, যা মুহূর্তেই ঘটে চলে যায়, তাই পাশের কাউকে কাঁধে টোকা দিয়ে ‘ওইখানটায় দেখো’- এমন বলাটা মুশকিল। এক অর্থে, বেশ একান্তে অভিজ্ঞতা নেওয়ার বিষয় এটি। নির্জনে বসে কেবল চোখ খুলে রাখলেই হল, আর কিছু দরকার নেই।”