বিজ্ঞানীদের দাবি, মঙ্গল গ্রহে যাত্রার সময় অনেক কমিয়ে আনতে এবং সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশেও ভ্রমণ সম্ভব করতে পারে এ নতুন পদ্ধতি।
হতে সংগৃহীত
মঙ্গল গ্রহে যাত্রার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে পারমাণবিক রকেট– এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের।
পারমাণবিক জ্বালানীতে রকেট চালনার নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, মঙ্গল গ্রহে যাত্রার সময় অনেক কমিয়ে আনতে এবং সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশেও ভ্রমণ সম্ভব করে তুলবে এ পদ্ধতি।
এ ‘যুগান্তকারী’ উদ্ভাবনটি করেছেন ‘ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি’র একদল গবেষক, যেখানে তরল ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে রকেটের প্রপেল্যান্টকে সরাসরি উত্তপ্ত করছেন তারা, যাতে কম জ্বালানি খরচে আরও দ্রুত ভ্রমণ করা যায়।
গবেষকরা বলছেন, ‘সেন্ট্রিফিউগাল নিউক্লিয়ার থার্মাল রকেট’ বা সিএনটিআর নামের সিস্টেমটি বর্তমান রকেট প্রযুক্তি ও অন্যান্য পারমাণবিক চালিত ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
‘ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি’র যান্ত্রিক ও মহাকাশ প্রকৌশলের সহকারী অধ্যাপক ডিন ওয়াং বলেছেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারমাণবিক তাপচালিত প্রপালশন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়েছে। কারণ আমরা আবার মানুষকে চাঁদে নিয়ে যেতে এবং চাঁদ ও পৃথিবীর মাঝামাঝি অঞ্চলে কাজের বিষয়ে ভাবছি।
“তবে এর বাইরেও নতুন এক সিস্টেমের প্রয়োজন। কারণ প্রচলিত বিভিন্ন রাসায়নিক ইঞ্জিন সম্ভবত আর কার্যকর হবে না।”
এ গবেষণায় আংশিক অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, পরবর্তী প্রজন্মের ইঞ্জিনে বিভিন্ন ধরনের প্রপেল্যান্ট ব্যবহার হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে মিথেনের মতো রাসায়নিক যৌগ, যা বিভিন্ন গ্রহাণু থেকেও নেওয়া সম্ভব।
এ সিস্টেমটি নিয়ে সঠিকভাবে পরীক্ষার আগে এখনও বেশ কয়েকটি কারিগরি ও প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ পেরোতে হবে গবেষকদের এবং এ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে আরও প্রায় পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এ প্রযুক্তি সফল হলে এর উন্নত সক্ষমতা মানুষের মঙ্গল গ্রহে যাতায়াতের সময় প্রায় তিন বছর থেকে কমিয়ে এক বছরে নামিয়ে আনতে পারে। একইসঙ্গে, শনি ও নেপচুনের মতো দূরের বিভিন্ন গ্রহতে রোবটিক মিশন পরিচালনাও সম্ভব করে তুলবে।
‘ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি’র প্রকৌশল বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী স্পেন্সার ক্রিশ্চিয়ান বলেছেন, “যেমন– আপনি মঙ্গলে নিরাপদ একমুখী যাত্রা কেবল ছয় মাসে করতে পারবেন, যেখানে আগে সেই একই মিশনে লাগত এক বছর।
“সিস্টেমটি কতটা ভালো কাজ করে তার ওপর নির্ভর করে এর প্রোটোটাইপ সিএনটিআর ইঞ্জিন আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
প্রযুক্তিটি ল্যাবরেটরিতে প্রদর্শনের আশা করছে গবেষণা দলটি। যাতে এটি চরম পরিস্থিতিতে কতটা ভালো কাজ করে তা দেখতে পারে তারা।
পারমাণবিক জ্বালানী ব্যবহার সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য আরও অর্থায়নের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গবেষণা দলটি বলেছে, বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থার জন্য ‘ধারাবাহিক অগ্রাধিকার’ হওয়া উচিত এ প্রযুক্তি।
‘অ্যাড্রেসিং চ্যালেঞ্জ টু ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিবিলিটি অফ দ্য সেন্ট্রিফিউগাল নিউক্লিয়ার থার্মাল রকেট’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাক্টা অ্যাস্ট্রোনটিকা’র সেপ্টেম্বর সংখ্যায়।