মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফরের সময় এ সম্মতি দিল নেসেট।
সংগৃহিত
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আইন বলবৎ করার একটি বিলে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট।
তেল আবিবের নতুন এ পদক্ষেপ আদতে সেই ভূখণ্ডটিকে ইসরায়েলের মানচিত্রে অঙ্গীভূত করার চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে, যে ভূখণ্ডকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ বিবেচনা করে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, পার্লামেন্টে আনা বিলটি আইনে পরিণত হতে চারটি ভোট পার হতে হবে, তার মধ্যে বুধবার প্রথমটি গেল। তাও এমন এক সময়ে যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করছেন।
অথচ মাসখানেক আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর অঙ্গীভূত করতে দেবেন না।
যে বিলটি আনা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি তাতে সমর্থন দেয়নি। বিলটি এনেছে নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটের বাইরের সদস্যরা, এবং বুধবার সেটি ১২০ সদস্যের নেসেটে মাত্র ২৫-২৪ ভোটে জয়ী হয়েছে।
বিরোধী দলের আনা মা’আলে আদুমিম বসতিকে অঙ্গীভূত করার অন্য একটি বিল পাস হয়েছে ৩১-৯ ভোটে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের জুইশ পাওয়ার পার্টি ও অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মতরিচের রিলিজিয়াস জায়োনিজমের সদস্যরাসহ নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটের কিছু সদস্য এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সব বাধা অতিক্রম করে বিলটি পুরোপুরি পাস হতে দীর্ঘ পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়া পার হতে হবে।
বাইবেল ও ঐতিহাসিক যোগসূত্রকে কারণে দেখিয়ে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
তেল আবিবের যুক্তি হচ্ছে, তারা ভূখণ্ডটি ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করেছে, আর এটি অবৈধ দখল হবে না কারণ ভূখণ্ডটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কর্তৃত্বকে অবৈধই মনে করে আসছে।
২০২৪ সালে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, পশ্চিম তীরসহ যেসব ফিলিস্তিনি এলাকা ইসরায়েল দখল করেছে সেগুলো এবং সেখানে তাদের বসতিগুলো অবৈধ এবং যত দ্রুত সম্ভব তেল আবিবকে সেখান থেকে সরে যেতে হবে।
সেপ্টেম্বরে একাধিক পশ্চিমা মিত্র দেশ যখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সেসময় এর পাল্টায় পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে মানচিত্রে অঙ্গীভূত করে নেওয়ার কথা ভেবেছিল নেতানিয়াহুর সরকার, কিন্তু পরে ট্রাম্পের বিরোধিতায় সেখান থেকে দৃশ্যত পিছু হটে।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেসেটের বুধবারের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলের কোনো ধরনের সার্বভৌম অধিকার থাকবে না।
“পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোরের সঙ্গে বলছে, জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও গাজা উপত্যকা একটি অভিন্ন ভৌগোলিক একক, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই,” বলেছে তারা।
বুধবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, পশ্চিম তীর ও মা’আলে আদুমিম নিয়ে বিলে ইসরায়েলিদের ভোটে ‘ঔপনিবেশিক দখলের কুৎসিত মুখের’ প্রতিফলন।
ইসরায়েলের সঙ্গে দুই বছরের যুদ্ধে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়া হামাস এখন গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তৎপর। পশ্চিম তীরে প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটির (পিএ) সীমিত শাসন চলে।
পশ্চিম তীর অঙ্গীভূত করার এ চেষ্টায় ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে হওয়া ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ওই চুক্তির বলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আরব আমিরাত গত মাসে সতর্ক করে বলেছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করে নিলে সেটি হবে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য ‘রেড লাইন’।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হওয়া এই আব্রাহাম অ্যাকর্ডকে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বড় বিজয় হিসেবে প্রচার করেছিল।
