জেলেদের দাবি, প্রনোদনা না পাওয়ায় এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে নদীতে নেমেছেন তারা।
সংগৃহিত
পদ্মা পাড়ে গিয়ে নদীর দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই মা ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলছে। বরং মনে হতে পারে পদ্মায় যেন ইলিশ ধরার উৎসব হচ্ছে।
পদ্মা নদীর এই জেলেদের মধ্যে ফরিদপুর ও রাজবাড়ির উভয় জেলার বাসিন্দারাই আছেন। তাদের দাবি- প্রনোদনা না পাওয়ায় এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে নদীতে নেমেছেন তারা।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিয়মিতই তারা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। এর মধ্যেই অর্ধশতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরদার বলেন, “ইলিশ আহরণে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমার নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, অসাধু মাছ শিকারীদের দেওয়া হচ্ছে জেল জরিমানা।”
তবে ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের জেলে সাইফুল্লাহ, রবিউল শেখ, হিরামন দাসসহ আরও বেশ কয়েকজন বলছে, সরকারি সহায়তা সব জেলেদের জন্য নয়, এমনকি যাদের কার্ড আছে তাদের মধ্যেও অনেকেই এখনো চাল পায়নি।
এছাড়া বলা হয়েছে ২৫ কেজি কিন্তু যে চালটুকু জেলেরা পেয়েছে তার পরিমাণ ২০ কেজির বেশি নয়।
তাই আর্থিক চাহিদা আর পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য ঝুঁকি হলেও পদ্মায় অর্ধশত পয়েন্টে জাল ও নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকারে নামছে শতাধিক জেলে।
পদ্মার পাড় ঘুরে এমন কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে শুধু ২৫ কেজি চাল দিয়ে পরিবার নিয়ে চলাটা কষ্টকর হয়ে যায়।
তারা অনেকেই নৌকা ও জাল মেরামতের জন্য বিভিন্ন আড়ৎ ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় ঋণের কিস্তির চাপে পড়েছেন, তাই নদীতে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় নাই- বলেন এই জেলেরা।
জেলেরা আরো বলেন, তারওপর নদীতে এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। শুধু ইলিশ নয়, অন্য মাছেরও দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরদার জানান, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত জেলের সংখ্যা ৮ হাজার ১২ জন। এর বাইরেও দুই জেলায় কমপক্ষে পাঁচ হাজারের বেশি জেলে রয়েছে। যাদের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম মাছ শিকার।
তিনি বলেন, “ইলিশের প্রজননের সময়ে যে নিষেধাজ্ঞা, এই সময়ে সরকারি যে মানবিক সহায়তা দিয়েছে তা আমরা জেলেদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি।”
