সে সময় সেখানে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা নির্বিকার থাকায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা।
হতে সংগৃহিত
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়ে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন বিএনপি ও এনসিপির নেতারা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ঘিরে ইউনূসবিরোধী স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি তুমুল গালিগালাজ করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের গায়ে ডিমও ছোড়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটসের ফ্লাইট নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৩টার পর।

জেএফকে বিমানবন্দরে ডিম হামলার শিকার এনসিপি নেতা আখতার হোসেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির; এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও একই ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কে পৌঁছান।
মুহম্মদ ইউনূস সরকারপ্রধান হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তায় অন্য একটি গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেলেও তার সফরসঙ্গী বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণের বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন।
বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনালে জড়ো হওয়া আওয়ামী লীগকর্মীরা এ সময় ইউনূসকে ‘জামায়াত-শিবিরের নেতা’ আখ্যা দিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ও হুমায়ূন কবির পাশাপাশি হেঁটে পার্কিং স্পটের দিকে যাওয়ার সময় তাদেরকে ‘বাংলাদেশের দুশমন’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ‘হত্যা’, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজের জন্য দায়ী করে স্লোগান দেওয়া হয়।

জেএফকে বিমানবন্দরে নেমে আওয়ামী লীগ কর্মীদের স্লোগানের মুখে বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপি ও এনসিপি নেতারা।
বিএনপির দুই নেতাকে অনুসরণ করছিলেন এনসিপির আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা। বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে তাদের অনেকটা সঙ্কুচিত দেখাচ্ছিল।
এর মধ্যে তাদের কয়েক দফা থামিয়ে দেওয়া হয় এবং অকথ্য গালিগালাজের মধ্যে পরপর কয়েকটি ডিম ছুড়ে মারা হয়। সেসব ডিম আখতার হোসেনের পিঠে লেগে ফেটে যায়।
বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ সময় তাদের ঘিরে ‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী, একাত্তরের রাজাকারের পোষ্যপুত্র’–ইত্যাদি কটূক্তি করতে থাকেন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি ও এনসিপির নেতারা দৃশ্যত অনেকটা ঘাবড়ে যান। তবে কোনো উচ্চবাচ্য না করে তারা গাড়ির দিকে এগোতে থাকেন।
তাদের কয়েক ফুট পিছনে ছিলেন জামায়াত নেতা মুহাম্মদ তাহের। ৩০/৩৫ জন প্রবাসী জামায়াত কর্মী তাকে স্বাগত জানিয়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়ে গাড়ির দিকে যান।
তাদের কেউ বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার মির্জা ফখরুল কিংবা আখতার হোসেনের পাশে দাঁড়াননি কিংবা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেননি।

জেএফকে বিমানবন্দরে নেমে আওয়ামী লীগ কর্মীদের স্লোগানের মুখে বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপি ও এনসিপি নেতারা।
একেবারে শেষ পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ও আখতার হোসেন গাড়িতে ওঠার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। তখনও ডিম ছুড়ে, গাড়িতে থুথু দিয়ে ধিক্কার জানাতে থাকেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতা তানভির কায়সার এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের নেতা হৃদয় মিয়া এ সময় গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লে চালক কৌশলে গাড়ি পেছনে নিয়ে পুলিশের সহায়তায় এয়ারপোর্ট ত্যাগ করতে সক্ষম হয়।
প্রবাসী একজন বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে শেখ হাসিনা যতবার জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গেছেন, প্রতিবারই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
“শতশত প্রবাসীর বিক্ষোভ কখনো শালীনতা ছাড়ায়নি কিংবা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া টার্মিনাল পেরিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়নি।”
মুহম্মদ ইউনূসের আগমনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আগেই ‘যেখানে ইউনূস-সেখানেই প্রতিরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। সে অনুযায়ী এয়ারপোর্ট পুলিশের প্রহরায় বেলা ১টা পর্যন্ত ৮ নম্বর টার্মিনালের কাছে একটি নির্দিষ্ট স্থানে তারা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।

বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী।
এরপর তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সেখানে ‘স্বাগত সমাবেশ’ করার সুযোগ দেওয়া হয়। মির্জা ফখরুলসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের স্বাগত জানাতে তারা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা নামেন বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল। আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্বাগত-সমাবেশ করছিলেন ৮ নম্বর টার্মিনালে।
এদিকে ৮ নম্বর টার্মিনালে বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষ করে আওয়ামী লীগের অনেকেই হেঁটে ৪ নম্বর টার্মিনালে এসে ইউনূসের সফরসঙ্গীদের নাজেহাল করেন।
সে সময় সেখানে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা ছিলেন। মির্জা ফখরুল ও আখতারদের হেনস্তার শিকার হতে দেখেও তারা নির্বিকার থাকায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা।
অবশ্য মির্জা ফখরুলরা যখন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন, সে সময় লন্ডন থেকে আসা বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন এবং সোশাল মিডিয়ায় তা সরাসরি সম্প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন।

বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলের সামনে থেকে মিজানুর রহমান নামে যুবলীগের এক কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনকে ডিম মারার অভিযোগ রয়েছে।
জেএফকে বিমানবন্দরের ঘটনার পর বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুহাম্মদ ইউনূসের হোটেলের সামনেও বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে ছিলেন ড. সিদ্দিকুর রহমান, ড. প্রদীপ কর, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল হাসিব মামুন, আব্দুল কাদের মিয়া, ইমদাদ চৌধুরী, মমতাজ শাহনাজ, জন শিকদার, সাখাওয়াত বিশ্বাস, দরুদ মিয়া রনেল, জাহাঙ্গীর এইচ মিয়া, শফিকুল ইসলাম সেবুল মিয়াসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দক্ষিণাঞ্চলীয় কমিটির সভাপতি এম ফজলুর রহমানও ফ্লোরিডা থেকে আসেন এই সমাবেশে যোগ দিতে।

ডিম হামলায় জড়িত সন্দেহে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে নিউ ইয়র্কের পুলিশ।
অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু এবং চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভূইয়া, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন, সেক্রেটারি সাইদুর রহমান সাঈদ, সিটি বিএনপির (দক্ষিণ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোরহাব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উত্তরের সভাপতি আহব্বাব চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়েস চৌধুরী, বাফেলো বিএনপির সভাপতি সিরাজ উল্লাহ বাবুল, সহ-সভাপতি সোহেল মতিন, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী এবং সেক্রেটারি আবু সাঈদ আহমেদ, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান।