“গণভোট জাতির একটা ম্যান্ডেট পাওয়ার মাধ্যম। এটাকে কোনো অবস্থায় বিলম্ব করার সুযোগ নেই।”
হতে সংগৃহিত
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর নভেম্বরে গণভোট আয়োজন করার দাবি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, “গণভোট জাতির একটা ম্যান্ডেট পাওয়ার মাধ্যম। এটাকে কোনো অবস্থায় বিলম্ব করার সুযোগ নেই। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে।”
সরকার শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিলেও এর বাস্তবায়নের পথ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়ে গেছে। সেই মতপার্থক্য মিটিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের নিয়ে এই জরুরি বৈঠকে বসেন ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তার সভাপতিত্বে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন ও দলের আলোচনার কথা তুলে ধরে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “আমি মনে করিম মতের পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রে ঐক্যকে সুদৃঢ় করে। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে সেটা শ্রদ্ধা করি।…নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে ঐকমত্যের মাধ্যমে।”
তিনি বলেন, “এ সনদ তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় দলগুলো পাশাপাশি বসে আলোচনা করেছে। পরস্পরের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই, তারাও একসাথে বসেছে। এটা ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে থাকবে।
“জনগণের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে। আজ বলব-জুলাই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে যেসব পয়েন্টে আমরা একমত হয়েছি সেগুলো নিয়ে সনদে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। এ সনদ স্বাক্ষরের পর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য যে গণভোটের কথা বলা হয়েছে, আমার দলের স্পষ্ট বক্তব্য ইসিকে পেশ করা হয়েছে।”
শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের তরফে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের কাছে চূড়ান্ত জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়।
এসব দল ও জোটের পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে; দিয়েছে নোট অব ডিসেন্ট।
জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে ৮৪ দফা, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন।
জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে ৪০ পৃষ্ঠার সনদে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর রাখা হয়েছে স্বাক্ষরের জায়গা।
তবে সনদের কিছু বিষয় এবং বাস্তবায়নের বিষয় নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও পদ্ধতি আর ভোটের সময় নিয়ে মতভিন্নতা আছে।
জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরেই গণভোট চায়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলনও করছে।
অন্যদিকে পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির আপত্তি প্রবল। দলটি বলছে, জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট এক দিনে হলে তবেই তারা রাজি।
নভেম্বরেই গণভোট করার দাবি তুলে ধরে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আশা করি, জাতির সে অপেক্ষায় রয়েছে।”
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
