কেবল উচ্চতাই নয়, আরও অনেক রেকর্ড গড়েছে চীনের এই সেতু। ক্যানিয়নের গভীরতম স্থান থেকে সেতুটি প্রায় ২০৫ তলা ভবনের সমান উচ্চতায়।
হতে সংগ্রহীত
সবার জন্য খুলে দেওয়া হল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতুটি। কেবল উচ্চতাই নয়, আরও অনেক রেকর্ড গড়েছে চীনের এই সেতু।
ক্যানিয়নের গভীরতম স্থান থেকে সেতুটি প্রায় ২০৫ তলা ভবনের সমান উচ্চতায়।
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতুর পাশাপাশি চীনের অন্যতম বড় অবকাঠামোগত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে দেশটির গুয়িজৌতে অবস্থিত ‘হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ নামের সেতুটি। নদীর উপরে দুই হাজার ৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ সেতুটি চীনের সবচেয়ে উঁচু ও পর্বতময় এলাকায় সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু, যার দৈর্ঘ্য চার হাজার ৬০০ ফুট।
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু সেতুও চীনের গুয়িজৌতেই রয়েছে, যার নাম ‘দুগে’। সেতুটি এক হাজার ৯০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।
‘হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ সেতুটি চীনের গুয়িজৌ অঞ্চলে পর্যটন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর চলমান এক প্রকল্পের অংশ, যা ক্যানিয়ন পার হওয়ার সময়কে দুই ঘণ্টা থেকে কেবল দুই মিনিটে নামিয়ে এনেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার।
এ সেতুর প্রযুক্তিবিদ তিয়ান হংরুই বলেছেন, “নতুন এক অধ্যায়ের শুরু এই সেতু।”
প্রায় চার কোটি মানুষের বসবাস চীনের গুয়িজৌ প্রদেশে। অঞ্চলটিতে পর্যাপ্ত মিঠা পানি ও উর্বর জমির অভাব থাকায় দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এক বড় অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করেছে চীনা সরকার।
এর অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে পর্বতময় অঞ্চলের সাড়ে সাত লাখ দরিদ্র পরিবারকে নতুন নির্মিত ঘরে পাঠানোর পাশাপাশি সেখানকার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রকে সংযোগ দিতে ৩২ হাজারটিরও বেশি সেতু নির্মাণ করেছে চীন।
সেতুটি নির্মাণে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে এবং এটি কেবল পরিবহনের জন্য নয়, বরং পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও তৈরি করেছে সরকার। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সেতুটিতে রয়েছে দেখার প্ল্যাটফর্ম, কাঁচের হাঁটাপথ ও কাচের লিফট। এ লিফটি দর্শকদের সেতুর খিলানের উপর অবস্থিত ক্যাফেতে নিয়ে যাবে।
সেতুটির নিচে প্রায় দুই হাজার ফুট নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বেইপান নদী। ফলে দৃশ্যটি যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমন একটু ভয়ও জাগায় মানুষের মনে। একজন দর্শনার্থী বলেছেন, ব্রিজ পার হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন মেঘ ছোঁয়া যাবে।
ব্রিজটি নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিভিন্ন সেতুকেও পেছনে ফেলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ভাসমান সেতুটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত।
যারা কেবল মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখেই সন্তুষ্ট হতে চান না তাদের জন্য ‘হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ সেতুতে রয়েছে আরও রোমাঞ্চকর কার্যক্রম, যেমন– বানজি জাম্পিং, স্ল্যাকলাইনিং ও পেশাদারদের জন্য বেইস জাম্পিং-এর ব্যবস্থাও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাধ্যমে কেউ কেউ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় নিয়ে অভিযোগ করলেও এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের কাছে এক অভূতপূর্ব স্থাপনা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে সেতুটি।
ওই গ্রামের ৬৭ বছর বয়সী বাসিন্দা লিয়াং জুডং বলেছেন, “আমার জীবনকে আরও সহজ করে দিয়েছে এই সেতু।”