বিশেষ ধরনের শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখমণ্ডল কোনো কোনো নারীকে আকর্ষণ করলেও, কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
হতে সংগৃহিত
পুরুষদের দাড়ি গজাবেই। আর সেই দাড়ি রাখা বা কামিয়ে ফেলার নানান কারণ থাকতে-ই পারে।
কারও দাড়ি ওঠে অল্প কারও ওঠে ঘন; কেউ রাখে চাপ দাড়ি, কেউ বা পুরো দাড়ি।
এই দাড়ি রাখার বিষয়ে নানান মতবাদ যেমন রয়েছে, তেমনি দাড়ির স্টাইল ভেদে নারীদের পছন্দের মাপকাঠিও ওঠা-নামা করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা একটি বিশেষ ধরনের দাড়িতে পুরুষদের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করে।
‘ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস’য়ের ‘ইভোলিউশন অ্যান্ড ইকোলজি রিসার্চ সেন্টার’য়ের গবেষকরা প্রায় ৪শ’ জন নারীকে ১০ জন পুরুষের ছবি দেখিয়ে, তাদের মতে সেরা নির্বাচন করতে বলা হয়।
‘ইভোলিউশ অ্যান্ড হিউমেন বিহেইভিয়র’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ২০১৩ সালের এই গবেষণার জন্য চার ধরনের মডেলের ছবি দেখানো হয়, যাদের মধ্যে ছিল – ‘ক্লিন শেইভড’, ‘হালকা দাড়ি’, ‘ঘন দাড়ি’ এবং ‘সম্পূর্ণ দাড়ি’।
দেখা গেছে নারীরা হালকা দাড়ির পুরুষদের মাঝে সবচেয়ে কম আকর্ষণ খুঁজে পান। আর তুলনামূলক ঘন দাড়ির পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং হালকা দাড়ির পুরুষেরা তুলনামূলকভাবে কম আকর্ষণ করেছিল তাদের।
যেসব পুরুষের দাড়ির বয়স ১০ দিন ছিল তাদের দেখে নারীরা বেশি আকর্ষিত হন। আর যাদের দাড়ির বয়স পাঁচ দিন ছিল তাদের প্রতি কম আকর্ষণ অনুভব করেন।
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী- বড় দাড়ি ও সম্পূর্ণ দাড়ি কামানো পুরুষেরা পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয়তে অবস্থান করেছিল।
গবেষকদের বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে ‘বেস্টলাইফ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- এমনও হতে পারে যে এই নেতিবাচক ‘রেটিং’ হালকা ও কোঁকড়ানো দাড়ির বিরুদ্ধে ছিল। আর অপেক্ষাকৃত ঘন ও মোটা দাড়ি রাখা পুরুষদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
সহজ ভাষায় বলা যায়- হালকা ও কোঁকড়ানো দাড়ি নারীদের মাঝে মোহ সৃষ্টি করে না।
সাধারণত, বড় দাড়ির পুরুষদের দেখে অভিভাবকসুলভ অনুভূতি কাজ করে। সমীক্ষারে ফলাফলে সেরকমই দেখা গেছে।
মহিলারা প্রকৃতপক্ষে অভিভাবকীয় দক্ষতার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দাড়িওয়ালা পুরুষদের সর্বোচ্চ রেটিং দিয়েছেন। এর কারণ হতে পারে পুরো দাড়িওয়ালা পুরুষদের মুখের চুলের অন্য ধরনের পুরুষদের চেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং বেশি পুরুষালী বলে মনে হয়েছিল।
অন্যদিকে হালকা দাড়িওয়ালা পুরুষদের দেখে কম অভিভাবকীয় দক্ষতাসম্পন্ন এবং স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অপেক্ষাকৃত দুর্বল মনে হয়।
আবার গবেষকরা একইভাবে ১৭৭ জন পুরুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখতে পান- তারা সম্পূর্ণ দাড়ি ও ঘন দাড়ির পুরুষদেরকে বেশি আকর্ষণীয় বলে বিবেচনা করেন।
আর দাড়ি কামানো পুরুষরা কম আকর্ষণীয় এবং হালকা দাড়ির পুরুষদের সবচেয়ে কম আকর্ষণীয় বলে বিবেচনা করে থাকেন।
তবে নারীর দৃষ্টি আকর্ষণ বা নিজের জন্য- দাড়ি রাখার কারণ যাই হোক না কোনো, এর কিছু সুবিধা অসুবিধাও রয়েছে।
সুবিধা
দাড়ির পরিচর্যার প্রসাধনী তৈরির যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মো ব্রো’স’- এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাড়ি রাখার নানান সুবিধা সম্পর্কে জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
সূর্যালোক থেকে ত্বকের সুরক্ষা: ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড’য়ের গবেষকদের মতে- দাড়ি শুধু রোদপোড়া থেকেই রক্ষা করে না, পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতিকর অতি-বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারে।
তাই বলা যায়, দাড়ি রাখলে ত্বক বৃদ্ধ হওয়ার গতি কমিয়ে বরং তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
শীতে দেয় উষ্ণতা: শীত মৌসুমে মুখে উষ্ণ আমেজ দিতে সাহায্য করে দাড়ি। ঠাণ্ডা বাতাস পুরো মুখে যে কামড় বসায়, সেটা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে শ্মশ্রুশোভিত মুখ।
অ্যাজমা ও অ্যালার্জি থেকে রক্ষা: যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ ধুলা-ময়লা কিংবা ফুলের রেণু নাক দিয়ে প্রবেশে বাধা দিতে পারে মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ। অনেকটা ‘ফিল্টার’য়ের মতো কাজ করে।
প্রাকৃতিক আর্দ্রতা: মুখের ত্বক আর্দ্র রাখতে ‘সেবেইশাস’ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তেল কাজ করে। তবে নানান সময় মুখ মোছার কারণে এই তেল সঠিক পরিমাণে হয়ত থাকে না। তবে দাড়ি থাকলে, এই তেল হাতের ঘষাতেও মুছে যায় না। ফলে শুষ্ক বাতাসেও ত্বক থাকে আর্দ্র।
ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে পারে: শেইভ করলে ত্বকে অল্প পরিমাণে হলেও আঁচড় পড়ে। যেখানে ত্বকে থাকা ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে দাড়ি এই সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
অসুবিধা
ওয়েবএমডি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন চিকিৎসক ডা. ব্রেনান, দাড়ি রাখার বেশি কয়েকটি অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন। যেমন-
ব্রণ হওয়া: যাদের দাড়ি রয়েছে তাদের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। কারণ দাড়ির কারণে ত্বকের তেল ত্বকেই আটকে রাখে। এর সাথে মড়া চামড়া মিলে লোমকূপ আবদ্ধ করে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
তাই দাড়ি রাখলে মৃদু সাবান বা পরিষ্কারক দিয়ে ভালোমতো মুখ ধুতে হবে নিয়মিত।
খুশকি: শুধু মাথার চুলে নয়, দাড়িতেও খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে চুলকানি, মুখের ত্বকে লালচেভাব, চামড়া ওঠা-সহ নানান সমস্যা দেখা দেয়।
দাড়ির খুশকি ‘মালাসেজিয়া’ নামক এক ধরনের ইস্টের কারণে হয়। আর এই সমস্যার সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কামিয়ে ফেলতে না চাইলে, দাড়ি ছোট করে ‘অ্যান্টি ড্যানড্রাফ’ শ্যাম্পু ব্যবহার করলে পরিত্রাণ মিলবে।
ত্বকে অস্বস্তি: কয়েক দিনের দাড়ি কামিয়ে ফেলতে চাইলে ভালো মানের ও ধারালো রেইজর ব্যবহার করতে হবে। ব্লেডে ধার না থাকলে ত্বকে অস্বস্তি তৈরি করবে।
আর শেইভ করতে হবে যে দিকে দাড়ি গজায় সেদিকে, উল্টা টানা যাবে না। আর অবশ্যই শেইভের পর সুগন্ধহীন ভালো মানের ‘আফটার শেইভ’ ব্যবহার করতে হবে।
ফলিকিউলাইটিস: এই অবস্থা তখনই হয় যখন দাড়ির লোমকূপ ফুলে যায়। ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক কিংবা যে কোনো পরজীবীর কারণে দাড়ির লোমকূপ আটকে গিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি করে।
সাধারণত দাড়ি ও ত্বকের ভালো মতো পরিচর্যা করলে এই সমস্যা দূর হয়। তবে সমস্যা বাড়লে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
টিনিয়া বার্বে: মুখের লোমকূপে ‘ডার্মাটোফাইট’ ফাঙ্গাসের সংক্রমণে এই অবস্থা হয়। কারণ দাড়ি রাখলে আর ভালো মতো পরিষ্কার না করলে, ময়লা জমে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- ত্বক লালচে হওয়া, ফুলে যাওয়া, খোসার মতো আস্তর ওঠা। সাধারণত থুতনি ও চোয়ালের নিচের অংশে এই সংক্রমণ দেখা দেয়।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে অবশ্যই চর্মরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।