একীভূত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এর মধ্যে কোন দলগুলো নিবন্ধন যোগ্য আর কোন দল নিবন্ধন শর্ত পূরণ করেনি-তা ইসির কাছে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
সংগৃহীত
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় বাছাইয়ে বাদ পড়া দলগুলোকে কারণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সেই সঙ্গে টিকে থাকা দলগুলোর কেন্দ্রীয় অফিস, জেলা-উপজেলা দপ্তর ও কমিটি, সমর্থক তালিকা যাচাইসহ মাঠ প্রতিবেদন আসতে শুরু করেছে।
সব কিছু পর্যালোচনা করে যোগ্যদের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে চলতি মাসে নতুন দল নিবন্ধনের কাজ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধন রয়েছে অর্ধশত দলের। নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী এবার ১৪৩টি দল আবেদন করে। বাছাইয়ে ঝরে পড়ে ১২১টি দল।
নিবন্ধন শর্ত পূরণ করছে কী না তা যাচাইয়ে বাকি ২২টি দলের গঠনতন্ত্র, দলিলাদি, অফিসের অস্তিত্বসহ সামগ্রিক বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করছে ইসির কেন্দ্রীয় ও মাঠ কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “২২টি দলের বিষয়ে জেলাভিত্তিক তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছি। ৬৪ জেলায় যার যে এরিয়ায় রয়েছে, সে ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেবে। এর মধ্যে কিছু রিপোর্ট পাইপলাইনে আছে, কিছু রিপোর্ট আসছে।”
একীভূত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এর মধ্যে কোন দলগুলো নিবন্ধন যোগ্য আর কোন দল নিবন্ধন শর্ত পূরণ করেনি–তা ইসির কাছে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
ইসির উপ সচিব মাহবুব আলম শাহ বলেন, “তদন্ত চলছে ২২ দলের। সরেজমিন প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।”
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি থাকতে হবে। প্রতিটি কমিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণও থাকতে হয়।
প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে থাকা ২২ দল
ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
বাদ পড়াদের অনেকে ক্ষুব্ধ
ইসির উপ সচিব মাহবুব আলম শাহ জানিয়েছেন, প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়া ১২১টি দলকে তাদের নিবন্ধন আবেদন ‘না-মঞ্জুর’ করার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
‘উপযুক্ত কারণ’ তুলে ধরার পাশাপাশি নিবন্ধন শর্ত পূরণ না করার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের তালিকা ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।
বাদ পড়া দলগুলোর নানা ধরনের ক্ষোভের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ কর্মকর্তা বলেন, “ইসির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও করার কিছু নেই। চিঠিতেই নিবন্ধন না পাওয়ার সুষ্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।”
নিবন্ধন আবেদন বাছাইয়ে ঝরে পড়া দল বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি (বাজপ) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার একরামুল হক খানের কাছে অগাস্টের শেষ সপ্তাহে চিঠি দেওয়া হয়।
দুই পৃষ্ঠার এ চিঠিতে বলা হয়, বাজপের কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা, দলের বিধিমালাসহ ছয়টি বিষয়ে তথ্য ঘাটতি ছিল। ঘাটতিপূরণের সুযোগ দিলে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে যেসব জবাব দিয়েছে, তাতেও ৫টি তথ্যের দলির যুক্ত করা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে বাজপ আরপিও বিধান অনুযায়ী আবেদন জমা দিলেও ‘শর্তাদির পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র দাখিল করে নি’ জানিয়ে দলটিকে ‘না’ করে দিয়েছে ইসি।
এ বিষয়ে বাজপের মুখপাত্র কাজী শামসুল ইসলাম বলেন, “ইসির চিঠি পেয়েছি আমরা। দলের আবেদন না-মঞ্জুর করার চিঠি পেয়েছি। গেল সপ্তাহে সিইসি, সচিব ও ইসির উপ সচিবকে আইনি নোটিস দিয়েছেন আমাদের দলের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করেছি।”
আগামী সপ্তাহে বাজপের নামে ‘কলম প্রতীক ও ইসির নিবন্ধন’ পেতে সিইসিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংগৃহীত