নীহারিকার ভেতরে গ্যাস, ধুলা ও অন্যান্য উপাদান মাধ্যাকর্ষণের কারণে এক জায়গায় জড়ো হতে থাকে। এতে ঘন এলাকা তৈরি হয়, যা পরে এতটাই ভারী হয়ে ওঠে যে বিভিন্ন তারার জন্ম হয়।
সংগৃহীত
বিভিন্ন তারা জন্মের ঝলমলে আভাস মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের নতুন ছবিতে।
‘বিশৃঙ্খলা বা অগোছালো অবস্থা যদি এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি’ হয় তবে বিশৃঙ্খল গ্যাস ও ধুলা থেকে গঠিত উজ্জ্বল বিভিন্ন তারায় হতে এর চূড়ান্ত উদাহরণ। ‘পিসমিস ২৪’ নামের এক ছায়াপথের বিস্ময়কর ছবি তুলেছে জেমস ওয়েব, যেখানে ঘূর্ণায়মান ধুলা ও সদ্য জন্ম নেওয়া বিভিন্ন তারার ছবি নজিরবিহীন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
ছবিটি তোলা হয়েছে ওয়েব টেলিস্কোপের ‘এনআইআরক্যাম’ বা নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে। পরে এতে কৃত্রিম রং যোগ করেছে নাসা।
ছবিটিতে ‘পিসমিস ২৪’ নামের তারার ঝাঁক দেখা যাচ্ছে, যা ‘লবস্টার’ নীহারিকাতে অবস্থিত। নীহারিকাটি পৃথিবী থেকে প্রায় পাঁচ হাজার পাঁচশ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে, যেটি ‘স্করপিয়াস’ বা বৃশ্চিক তারামণ্ডলের অংশ।
এ তারার ঝাঁকের কেন্দ্রে রয়েছে ‘পিসমিস ২৪-১’ নামের তারা, যা ছবিটির ওপরের দিকে দেখা যাচ্ছে। আর নীহারিকার সবচেয়ে উঁচু ধুলার চূড়া বা শিখরটি সোজা এই তারাটির দিকে নির্দেশ করছে। আসলে এখানে একটি নয়, দুটি তারা রয়েছে। তবে টেলিস্কোপ দিয়ে আলাদা করে দেখা যাচ্ছে না। এ দুটি তারার ভর যোগ করলে তা দাঁড়ায় সূর্যের ভরের প্রায় একশ ৪০ গুণ।
ছবিটির ধুলোয় ভরা নিচের অংশে নীহারিকার ভেতরে কিছু অতিমাত্রায় গরম তারা রয়েছে, যেগুলোর তাপমাত্রা সূর্যের প্রায় আট গুণ। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএ-এর মতে, এসব তারা ভয়ংকর বিকিরণ ও শক্তিশালী বাতাস আশপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এ তাপ ও বিকিরণ আসলে নীহারিকার প্রাচীরের মধ্যে গুহার মতো খোদাই করা ফাঁকা জায়গা তৈরি করেছে। সেই জায়গা থেকে গরম ও আয়নিত বা বিদ্যুৎ পরিবাহী গ্যাসের ধারা চারদিকে বেরিয়ে আসছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এনগ্যাজেট।
নীহারিকার সবচেয়ে উঁচু চূড়াগুলোর আশপাশে যে সাদা আলো ঝলমলে রেখা দেখা যাচ্ছে সেটি আসলে গ্যাস ও ধুলার তীক্ষ্ম পর্দা, যেগুলো তারার আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে।
নীহারিকার ভেতরে গ্যাস, ধুলা ও অন্যান্য উপাদান মাধ্যাকর্ষণের কারণে এক জায়গায় জড়ো হতে থাকে। এতে ঘন অঞ্চল তৈরি হয়, যা পরে এতটাই ভারী হয়ে ওঠে যে, সেখানে বিভিন্ন তারার জন্ম হয়।
এসব তারা যখন ফিউশন বা অণু ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু করে এবং অনেকগুলো তারা তৈরি হয় তখন তারা নীহারিকার ওপর প্রভাব ফেলে। হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত মানে বিদ্যুৎ পরিবাহী করে তোলার পাশাপাশি তারা বিশাল সৌর বায়ুও তৈরি করে। এ বাতাস ধুলাবালিকে চেপে ধরে আবার নতুন নতুন তারা গঠনের পথ তৈরি করতে সাহায্য করে।
নীহারিকাটি ওয়েব টেলিস্কোপের ‘এনআইআরক্যাম’ ক্যামেরার দৃষ্টিসীমার অনেক বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত। মাপের ধারণার ক্ষেত্রে বলা যায়, ছবিতে যে সবচেয়ে উঁচু চূড়া দেখা যাচ্ছে তা উপরের মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত প্রায় ৫.৪ আলোকবর্ষ লম্বা। এর মাথার প্রস্থের মধ্যে আমাদের দুইশোটিরও বেশি সৌরজগৎ অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে।
সংগৃহীত