এসব কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে, বলা হয় অধ্যাদেশে।

হতে সংগৃহিত
ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার বিকালে এ অধ্যাদেশ প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামত চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ইমেইলে (ds_univ1@moedu.gov.bd) বা সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব বরাবর লিখিতভাবে এ খসড়ার বিষয়ে মতামত দেওয়া যাবে।
৭ ক্যাম্পাস ব্যবহার হবে ৬ ঘণ্টা করে
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠিত হবে।
অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস সাতটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস থাকবে। সাতটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচালিত হবে। যেমন- ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেন্দ্র, অডিটোরিয়াম, স্বাস্থ্যকেন্দ্র একটি স্বতন্ত্র স্থান থেকে পরিচালিত হবে।
শিক্ষাদান পদ্ধতি হবে ‘হাইব্রিড’
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি হাইব্রিড পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোর্স থাকবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ক্লাস হবে অনলাইনে; বাকি ৬০ শতাংশ সশরীরে। তবে সব পরীক্ষা সশরীরে দিতে হবে।
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পদ্ধতি ইন্টারডিসিপ্লিনারি হবে। কোনো একটি স্কুলের স্নাতক পর্যায়ে প্রথম চারটি সেমিস্টারে ‘সাধারণ বিষয়গুলো’ অধ্যয়ন করতে হবে।
পরবর্তী চার সেমিস্টারে বিষয়গুলো হবে ‘ডিসিপ্লিনভিত্তিক’। স্নাতক পর্যায়ের কোনো শিক্ষার্থীর চাহিদার ভিত্তিতে প্রথম চারটি সেমিস্টার শেষে শর্তপূরণ সাপেক্ষে নিজ ক্যাম্পাসে ডিসিপ্লিন পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া যাবে।
কোন কলেজে কোন বিভাগ
খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়, সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ, স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসে বিভক্ত করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানো হবে।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস, ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে স্কুল অব সায়েন্স।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে অ্যাপ্লাইড ম্যথেমেটিক্স, জুলোজি, ড্যাটা সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিজিক্স, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, বোটানি ও ফরেনসিক সাইন্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে সাইকোলজি, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ স্কুলটি সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে।
এই ক্যাম্পাসে জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইকোনোমিকস, ফিল্ম স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব বিজনেস স্কুলটি সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। এ ক্যাম্পাসে অ্যাকাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ব্যাংক অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস স্কুলটি কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ল ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে। ক্রিমিনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে।
অধ্যাদেশের খসড় দেখুন এখানে-
শিক্ষকদের আপত্তি
এদিকে খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের আগে বুধবার দুপুরে সাত কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে মানববন্ধন করেন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদ বিলুপ্ত হওয়া, কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে তারা এ আপত্তি জানাচ্ছেন।
সরকারি তিতুমীর কলেজের সামনে মানববন্ধনে কলেজটির শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এম আতিকুজ্জামান বলেন, “এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে এই সাত কলেজের দিকে কেন নজর দেওয়া হলো? আমি জানি এর পেছনে কী কারণ আছে? একটি স্বার্থান্বেষী মহল চাচ্ছে, এই সাত কলেজকে ভ্যানিশ করে দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চালু করার জন্য।”
মানববন্ধন থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
>> সাত কলেজের নাম (সাইনবোর্ড) বা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না। অর্থাৎ কলেজ কাঠামোর মৌলিক রূপ ভেঙে অনুষদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যাবে না।
>> কলেজের লোগোসহ স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পত্তি স্ব-স্ব কলেজের নামে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কোনোভাবেই জোর করে এসব সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর গ্রহণযোগ্য নয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
>> সাত কলেজকে পরীক্ষাগার বা গিনিপিগ বানিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সাতটি সরকারি কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাখা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে এবং সব পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
>> বিদ্যমান কোনো বিষয় বিয়োজন করা যাবে না। বিশেষত আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বাদ দেওয়ার চেষ্টা ইসলামবিদ্বেষের সামিল এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
>> ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ‘ঈর্ষণীয়’ সাফল্য অর্জন করে আসছে। তাই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হবে না।
>> সাত কলেজে ইতোমধ্যেই উচ্চশিক্ষা ব্যাপক সংকোচন করা হয়েছে। বিশেষত ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ বহু বছর ধরে নারীদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়ে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় নারী শিক্ষার ব্যাপক সংকোচনের পরিকল্পনা স্পষ্ট, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
>> সাত কলেজে কর্মরত কোনো কর্মচারীর চাকরি বা অন্য কোনো স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
>> সাত কলেজ সরকারের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের আগে সব অংশীজনের মতামত গ্রহণ ও যৌক্তিকতা যাচাই করা আবশ্যক। এজন্য প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্কা অধিদপ্তর, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, আইন পেশাজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সব পর্যায়ের বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রিভিউ কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করতে হবে।