‘শান্তি চুক্তি’ হলেও কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে বিরোধ, তা নিরসনে এখানে কিছুই নেই।
সংগৃহিত
মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে একটি ‘শান্তি চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করেছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার দুই প্রধানমন্ত্রী।
নামে ‘শান্তি চুক্তি’ হলেও এটি আদতে দুই পক্ষের মধ্যে জুলাইয়ে সীমান্তে সংঘর্ষের পর আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি পরবর্তী কিছু কাজ ও সংঘাত এড়ানোর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব। সীমান্তে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে, তা নিরসনে এখানে কিছুই নেই, বলছে বিবিসি।
অনুষ্ঠানে ট্রাম্প স্বভাবসুলভভাবেই নিজের গুণগান গেয়েছেন, চুক্তিটিকে নানা বিশেষণে ভরিয়েও দিয়েছেন। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার নেতারাও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
“এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এক বিরাট পদক্ষেপ,” বলেন ট্রাম্প।
চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত থাকা তুলনামূলক দুই ‘লাজুক’ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব’ আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি জুলাইয়ে স্কটল্যান্ডে টার্নবেরি গলফ মাঠে থাকা অবস্থায় কী করে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত নিরসনে জড়িয়ে পড়লেন সে কথাও স্মরণ করলেন।
“আমি বলেছিলাম, এক রাউন্ডের গলফের চেয়ে এটা (যুদ্ধ থামানো) বেশি গুরুত্বপূর্ণ, গলফ খেলে আমি অনেক আনন্দ করতে পারতাম, কিন্তু এটা তারচেয়েও আনন্দের, লোকজনকে বাঁচানো ও দেশ বাঁচানো,” বলেন ট্রাম্প।
মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে তিনি থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া ‘শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান আয়োজন এবং তাতে থাকার আবদার করেন। এখানে এসে তিনি ফের নিজেকে ‘শান্তির ত্রাণকর্তা’ হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ পেলেন।
“আট মাসে আমার প্রশাসন ৮টি যুদ্ধ থামিয়েছে। এর আগে কখনোই এমনটা হয়নি। গড়ে প্রতিমাসে একটি করে, এটা অনেকটা শখের মতো, এমনটা যদিও বলা উচিত না, কারণ এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই বিষয়ে আমি বেশ ভালো, এবং এটা করতে (যুদ্ধ বন্ধ) আমি পছন্দ করি,” বলেছেন তিনি।
রোববার যাতে স্বাক্ষর করলেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার দুই সরকারপ্রধান, ট্রাম্পের ভাষায় সেই ‘কুয়ালা লামপুর শান্তি চুক্তিতে’ কী আছে?
মনে রাখা দরকার, জুলাইয়ে দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেছিল। সেই চুক্তির ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের চাপের ভূমিকা ছিল।
এরপর রোববার নতুন আরেকটি চুক্তি হল, যাতে দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধ নিরসনে বলার মতো কোনো অর্জন দেখা যাচ্ছে না।
এই ‘কুয়ালা লামপুর শান্তি চুক্তি’ অনুযায়ী দুই দেশ বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা থেকে ভারি অস্ত্রশস্ত্র প্রত্যাহার এবং তা পর্যবেক্ষণে একটি অন্তর্বর্তী পর্যবেক্ষক দল প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে।
তারা স্থলমাইন অপসারণের নতুন একটি প্রক্রিয়াতেও রাজি হয়েছে; দুই দেশ প্রতারণা কেন্দ্রের বিস্তার রোধ ঠেকাতে একটি যৌথ টাস্কফোর্সও বানাবে।
তারা সীমান্তের যেসব জায়গায় চিহ্ন নেই, সেসব জায়গায় অস্থায়ী চিহ্ন বসাবে।
দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে এসব ‘অগ্রগতিকে’ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে থাইল্যান্ডের কূটনীতিকরা, এ ‘অগ্রগতির’ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকাকেও ছোট করে দেখছে না তারা।
কিন্তু সীমান্ত নিয়ে যে ঐতিহাসিক বিরোধ ছিল তা রয়েই গেছে, এবং এই বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অনুষ্ঠান শেষে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেতকিও এই চুক্তিকে ‘শান্তি চুক্তি’ বলতে রাজি হননি, তিনি একে ডেকেছেন ‘কুয়ালা লামপুর বৈঠকের ফল নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যৌথ ঘোষণা’।
“আমি একে শান্তির পথে অগ্রযাত্রা বলবো,” বলেছেন তিনি।
রোববারে অনুষ্ঠানে দুই দেশের হয়ে স্বাক্ষর করা থাইল্যান্ডের আনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার হুন মানেট ট্রাম্পের প্রশংসাও করেছেন।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী মানেট মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার ‘অনন্য নেতৃত্ব’ ও শান্তিচুক্তিতে বাস্তবে পরিণত করার ‘ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টার’ জন্য ধন্যবাদ জানান।
“বিরোধ যত কঠিন ও জটিলই হোক না কেন, অবশ্যই তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে মীমাংসা সম্ভব,” বলেছেন তিনি।
থাই প্রধানমন্ত্রী চার্নভিরাকুলও যুদ্ধবিরতির কার্যকরে প্রচেষ্টার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দেন এবং থাইল্যান্ডের সদ্যপ্রয়াত রানিমার মৃত্যুতে ট্রাম্পের শোক গ্রহণ করেন।
বিতর্কিত সীমান্ত থেকে ভারি অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে নেওয়া, যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির কার্যক্রম ‘শিগগিরই’ শুরু হবে বলেও তিনি জানান।