“৩০ টাকার কাঁচামরিচ কিনলে আগে দুই-তিন দিন যেত বাসায়। আজ ৪০ টাকার কাঁচামরিচ নিলাম। তিনবেলার বেশি হবে না। হাতেই গোনা যাবে কয়টা দিল,” বলেন এক ক্রেতা।
হতে সংগৃহিত
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকার বেশি। টানা বৃষ্টিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরে আগের চেয়ে আরও চড়েছে শাক-সবজির দরও।
শুক্রবার রাজধানীর সাত তলা ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের এদিনের দর ছিল মান ভেদে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা।
এক লাফে এতটা দর বাড়ার কারণ হিসেবে সাত তলা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে মরিচগাছের ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে কৃষক পর্যায়েই দাম বেড়েছে। বাধ্য হয়েই আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
কিছুটা দূরের মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা ওলিউর রহমান বলেন, “কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচামরিচ কিনেছি বাড়তি দামে। তাই বিক্রিও বাড়তি। কী কারণে দাম বেড়েছে জানা নেই। তবে বৃষ্টির জন্য সরবরাহ কমে গেছে বাজারে। মরিচ কেনাই পড়েছে ৩২০ টাকা কেজি করে। এর সঙ্গে পরিবহন, দোকান ভাড়া যোগ করেই এই দাম।”
সাত তলা বাজারে কাঁচামরিচ কিনছিলেন সবুজ হোসেন নামের একজন। তিনি বলেন, “৩০ টাকার কাঁচামরিচ কিনলে আগে দুই-তিন দিন যেত বাসায়। আজ ৪০ টাকার কাঁচামরিচ নিলাম। তিনবেলার বেশি হবে না। হাতেই গোনা যাবে কয়টা দিল।”

পিছিয়ে নেই শাক-সবজিও
কয়েক মাস ধরেই বাজারে বাজারে শাক-সবজির দাম চড়া। দাম কমার লক্ষণই নেই, উপরন্তু দুই-তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে নতুন করে বেশ কিছু সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরের করল্লা শুক্রবার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকায়। একইভাবে বরবটিও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন আকৃতি ও মানের বেগুনও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য সবজির মধ্যে ঝিঙ্গা, কচুর লতি, পটল, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে গত সপ্তাহের মতোই পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, প্রতিটি লাউ আকার অনুযায়ী ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, হাইব্রিড গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি, মুলা আগের মতোই ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শিম শুক্রবার বিক্রেতারা চাইছিলেন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। বাজারে মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজি দরে এবং ফুল কপি ছোট আকারের ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি হালি লেবু ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধনে পাতা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, ক্যাপসিকাম মানভেদে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
এছাড়া লাল শাক ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নাপা, হেলেঞ্চা আর ঢেঁকি শাক পাওয়া যাচ্ছিল প্রতি আটি ২০ থেকে ৪০ টাকায়।

সাত তলা বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কিছুটা কম বাজারে। বৃষ্টি হলেই পরিবহন খরচও বেশি চায় পিক আপ চালকরা। সব মিলিয়ে সবজির দাম কিছুটা বেড়ে গেছে।”
তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। মহাখালী কাঁচাবাজারে করল্লা কিনছিলেন মোহাম্মদ শাহেদ নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, “বৃষ্টির জন্য আজকেই না দাম বাড়ল। সবজির দাম তো তিন মাস ধরেই বাড়তি। মাঝে বেশ কম ছিল। এখন যে উঠেছে, আর নামছেই না।”
ডাল-তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে
এদিকে মশলাজাত নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে দুই একটির দাম কিছুটা বেড়েছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের মাসুমা জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আল আমীনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার আলু আগের মতোই ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, মশুর ডাল (মোটা দানা) ৯৫ থেকে ১১০ টাকা, আমদানি করা চীনা আদা ১৪০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তবে চিকন দানার মশুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, আমদানি করা রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, কেজিপ্রতি দুই থেকে চার টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন আগের মতোই ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম উঠেছে ১৮০ টাকায়।