“কোনো কারণে নির্বাচন যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদেরকে জাতির কাছে এই দায়িত্ব নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।”
হতে সংগৃহিত
তিন মাস আগে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হওয়ার পরও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিলম্ব কেন হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেছেন, “যারা সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন অথবা সংস্কার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে ডিলে করা হচ্ছে, কোনো কারণে নির্বাচন যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদেরকে জাতির কাছে এই দায়িত্ব নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।”
মঙ্গলবার সকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাহের।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের ব্যাপারে যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সেগুলোকে আইনি ভিত্তি দিয়ে ‘সংস্কারের ভিত্তিতেই’ নির্বাচন হতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিষয়ে অত্যন্ত দ্রুত এবং দৃঢ়তার সাথে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর ভিতরে একটা হচ্ছে, আমাদের জুলাই চার্টার যেটা বলছি, জুলাই সনদ যে কতিপয় বিষয়ে, আমরা রিফর্মস করেছি সংস্কার করেছি। এটা (সংস্কার) আরো তিন মাস আগে হয়ে যেতে পারত… সকল দল একমত হয়েছি নীতিগতভাবে।
‘‘তারপরেও এটা বাস্তবায়নে বিলম্ব করা হচ্ছে…এইভাবে-সেভাবে। এই রকম যদি ষড়যন্ত্র চলে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সমাধান না করে তাহলে তো সবকিছুই প্রশ্নবোধক হয়ে যায়।”
ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তার দল কোনো ‘শঙ্কা দেখছেন না’ বলে জানিয়েছেন তাহের।
তিনি বলেন, “কিন্তু ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে কতিপয় বিষয়ে আমাদের সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিউ ইয়র্কে যেহেতু অনেক উপদেষ্টা ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন… আমরা সকলকে বলেছি যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া দরকার।
‘‘ তবে একটা যেন-তেন নির্বাচন সমস্যার সমাধান দেবে না। নির্বাচন তো ’১৮ সালে হইছে না, ’২৪ সালে হইছে, ’১৪ সালে হইছে। এই নির্বাচন কি সমস্যা বাড়াইছে না কমাইছে? এজন্য নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়া উচিত কারণ একটি ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপ্রেজেন্টেটিভ গভার্মেন্ট আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে, একটা সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠ নির্বাচনটাই হচ্ছে সমস্যার সমাধান।”
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের এবার নিউ ইয়র্ক সফর করেন দেশের তিন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বাকিরা হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারাও ছিলেন।
নিউ ইয়র্ক থেকে তাদের যুক্ত হন মতিউর রহমান নিজামীর ছেলের মোহাম্মদ নকিবুর রহমান।
‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে’
তাহের বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হইতে হবে। তার আগে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে সংস্কারের ব্যাপারে যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সেগুলোকে আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কারের ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। এটা খুব পরিষ্কার।
‘এআই দিয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা’
তাহেল নিউ ইয়র্ক অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের সেনা প্রধানের সাথে তার সাক্ষাতের যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে নিউ ইয়র্ক গিয়েছিলাম। এরপরে শিকাগোতে আমার মেয়ে পড়ালেখা করে, তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। দ্যাট অল। প্রশ্নটার জবাব আপনি দিয়ে দিছেন একটা শব্দ দিয়ে গুজব।
“যখন আমার নামে গুজব হইছে, দেখতে গিয়ে দেখলাম… একটা নাচ দেখলাম। নাচটা হচ্ছে কি? বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের মাননীয় নেত্রী, সকলের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় প্রিয় নেত্রী। তার সাথে নাচতেছেন আমাদের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা…. এটা কী গুজব? এটা গুজবও না। এটা হচ্ছে, এখন ‘এআই’ এর একটা আবিষ্কার হইছে।
“এগুলো মানুষ বুঝে যে, এগুলো সব বাজে জিনিস, এগুলো খুবই একটা ন্যাক্কারজনক একটা কাজ।এগুলো মানুষ বিশ্বাস করে না, এগুলো ‘এআই’ কাণ্ড, চরিত্রহননের একটা অপচেষ্টা।”
‘প্রবাসীদের ভোট প্রসঙ্গে’
তাহের বলেন, প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
“এবার আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রথম এই দাবি করেছি, জোরদার আছে। সরকারও নীতিগতভাবে একমত হয়েছে প্রবাসীদেরকে ভোটার করার জন্য।
“সেখানে আমি বলেছি এটাকে সহযোগিতার করার জন্যে। আমাদের ন্যাশনাল আইডির মাধ্যমে তারা ভোটার হচ্ছে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু আমি বলেছি, ন্যাশনাল আইডি করতে যদি কিছুটা জটিলতা হয় সময় লেগে যায়, তাহলে আরো শর্ট কোসো ডকুমেন্ট দিয়ে যেটা বাংলাদেশের নাগরিক এটাই প্রমাণ করা যথেষ্ঠ যেমন পাসপোর্ট আছে, অন্য কোনো যদি কোনো কার্ড ইস্যু করে সেভাবে… যেভাবেই হোক এবার যেন তারা পরিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে এই বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বেশি করে আলোচনা করেছি।”
বিমানবন্দরে জামায়াতের নায়েবে আমিরকে স্বাগত জানিয়েছে দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদের মতিউর রহমান আকন্দ, কুমিল্লা জেলা আমির মুহাম্মদ শাহজাহানসহ কুমিল্লার চৌদ্ধগ্রামের নেতারা। তারা জামায়াতের নায়েবে আামিরকে ফুলের দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।