অন্যদের থেকে নিজের জীবনে পার্থক্য আনার জন্য বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
হতে সংগৃহীত
মানুষ তার জীবনে অর্থ খোঁজে। দৈনন্দিন ব্যস্ততার ভিড়ে হয়ত ভাবা হয়, “আমি কি সত্যিই কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারছি?”
তবে পার্থক্য তৈরির মানে সবসময় বড় কোনো বিপ্লব ঘটানো নয়। কখনও কখনও সেটি হতে পারে খুব ছোট একটি আচরণ, যেমন- দেরি করে এলেও কেউ যদি লিফটের দরজা ধরে রাখে, বা অচেনা একজন আপনাকে দেখে হেসে দেওয়া।
এসব ছোট মুহূর্তই দিনটিকে বদলে দিতে পারে।
পার্থক্য তৈরি করা মানে কী?
“অনেকেই মনে করেন, পার্থক্য তৈরি মানে হয়ত একটি বড় অ-লাভজনক সংস্থা শুরু করা, বিশাল তহবিল সংগ্রহ করা বা চাকরি ছেড়ে সামাজিক কাজে ঝুঁকে পড়া”- মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট কাম ডটকম’য়ে এভাবেই মন্তব্য করেন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ক্রিস মোসুনিক।
অবশ্যই এগুলো বড় ধরনের প্রভাব ফেলে, তবে প্রতিদিনের জীবনে ছোট মুহূর্তেও সমানভাবে পার্থক্য তৈরি করা সম্ভব।
মোসুনিক বলেন, “এটি হতে পারে শোকগ্রস্ত বন্ধুর পাশে থাকা, উত্তেজিত মুহূর্তে ধৈর্য ধরা, কারও সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, কিংবা নিজের যত্ন নেওয়া। যাতে অন্যদের জন্যও সচেতনভাবে উপস্থিত থাকা যায়।”
আসলে, বড় পরিবর্তন আনা নয় বরং ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবনকে অর্থপূর্ণ করা-ই হল প্রকৃত পার্থক্য তৈরি।
কেন পার্থক্য তৈরি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
অন্যের জন্য কিছু করা মনের ভেতরও আনন্দ জাগায়।
মোসুনিক বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, সহায়ক আচরণ মানসিক চাপ কমায়, জীবনের সন্তুষ্টি বাড়ায় এবং এমনকি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায় যেমন রক্তচাপ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।”
মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন “হেল্পার’স হাই”, যেখানে মস্তিষ্কে সুখদায়ক রাসায়নিক নিঃসৃত হয় এবং আমাদের সহনশীলতা বাড়ায়।
এর বাইরেও রয়েছে মানবিক দিক। যখন অন্যদের সাথে সংযুক্ত হই, তখন নিজের সমস্যাগুলোকে ছাড়িয়ে বৃহত্তর জীবনের অংশ হিসেবে নিজেকে দেখতে পারি। এতে একাকিত্ব কমে, জীবনে অর্থ বাড়ে, আর মানসিক স্থিতি ফিরে আসে।
অন্যকে খুশি করার একটি আচরণ আবার সেই মানুষকেও অনুপ্রাণিত করে অন্য কারও প্রতি সদয় হতে— এভাবেই তৈরি হয় ইতিবাচকতার শৃঙ্খল।
বন্ধু ও প্রিয়জনদের জীবনে পার্থক্য আনা
বন্ধু বা প্রিয়জনের পাশে দাঁড়ানোই হতে পারে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।
মাঝে মাঝে শুধু খোঁজ নেওয়া, তাদের শক্তির কথা মনে করিয়ে দেওয়া, বা প্রিয় খাবার দিয়ে ছোট সারপ্রাইজ দেওয়া- এসব তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
বিচার না করে মন দিয়ে শোনা, কথোপকথনে মনোযোগ দেওয়া, এমনকি ভুল হলে দ্রুত ক্ষমা চাওয়াও সম্পর্ককে মজবুত করে।
শারীরিকভাবে সহযোগিতা করা, যেমন- বেড়াতে নিয়ে যাওয়া বা রান্না করে দেওয়া, আবার মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়া। দুটোই তাদের জীবনে প্রশান্তি আনে।
আর মাঝে মাঝে একসঙ্গে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
কর্মক্ষেত্রে পার্থক্য আনা
কর্মক্ষেত্রেও ছোট উদ্যোগ বড় পরিবর্তন আনে। সহকর্মীর কাজের জন্য নির্দিষ্টভাবে ধন্যবাদ জানানো, নতুন সহকর্মীর জন্য পরামর্শদাতা হওয়া কিংবা যারা অদৃশ্য শ্রম দেন তাদের স্বীকৃতি দেওয়া।
এসব কর্মস্থলকে উষ্ণ করে তোলে।
চাপের মুহূর্তে পরিবেশ হালকা করা, সীমারেখা বজায় রাখা, বা আন্তরিকভাবে খোঁজ নেওয়া সহকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মিটিংয়ে ফোন সরিয়ে রেখে পুরোপুরি উপস্থিত থাকা, প্রশংসা প্রকাশ করা বা ছোট টিপস আদান প্রদান করা— এসবই দলগত সম্পর্ককে দৃঢ় করে।
বড় কোনো প্রকল্প শেষ হলে সাফল্য ও শেখার বিষয়গুলো একসঙ্গে উদযাপন করাও দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে।
সম্প্রদায়ের জন্য পার্থক্য আনা
যে সমাজে বাস করা হয়, সেখানে অবদান রাখা জীবনের অর্থ বাড়ায়। স্থানীয় ব্যবসা সমর্থন করা, দক্ষতা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবা করা, কিংবা প্রতিদিন অল্প কিছু আবর্জনা কুড়িয়ে ফেলা।
এসব ছোট কাজও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রতিবেশীর সঙ্গে পরিচিত হওয়া, পারস্পরিক সাহায্যের উদ্যোগে যুক্ত হওয়া, অথবা বাড়তি জিনিস দান করা— এসবই সম্প্রদায়কে একে অপরের কাছাকাছি আনে।
কখনও কখনও অচেনা কাউকে দেখে হাসি দেওয়া বা শুভেচ্ছা জানানোও মানবিক বন্ধন তৈরি করে।
একইভাবে, যৌথ স্থানকে সম্মান জানানো বা স্থানীয় সাফল্য প্রচার করাও সম্প্রদায়ের মনোবল বাড়ায়।
বৃহত্তর বিশ্বের জন্য পার্থক্য আনা
শুধু নিজের পরিবার বা সমাজ নয়, বৃহত্তর বিশ্বেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
পুনর্ব্যবহার ও অপচয় কমানো, পরিবেশ সংরক্ষণ বা মানবিক সংস্থায় যুক্ত হওয়া পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখে।
নেতিবাচক খবর পড়ার পাশাপাশি ইতিবাচক গল্প পড়া, অন্যের কষ্টে সহানুভূতি দেখানো, ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, কিংবা প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার জায়গা তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।