অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে ‘কেস স্টাডি’ হিসেবে তুলে ধরে মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট বলেন, বিপুল সংখ্যক অভিবাসী পশ্চিমা দেশগুলোর সামাজিক বুনন বদলে দিচ্ছে, এটা থামাতে হবে।
হতে সংগৃহিত
জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে দেওয়া আক্রমণাত্মক এক বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে অভিবাসনের মাত্রা কমানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারের এ ভাষণে তিনি বিশ্বনেতাদের তীব্র সমালোচনাও করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তার ৫৬ মিনিটের ভাষণটি ছিল বৈশ্বিক এ সংস্থার প্রতি তিরস্কারে ভরা। ভাষণে পাওয়া গেছে পুরনো ট্রাম্পকে, যিনি তার প্রথম মেয়াদে নিয়মিতই জাতিসংঘকে কটাক্ষ করতেন।
অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় তার উদ্দেশ্যে নেতাদের মৃদু করতালি শোনা যায়।
গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যার’ মধ্যে মিত্ররা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে ভাষণে তার সমালোচনাও করেন ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেইনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে বাধ্য করতে তার প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বানও জানান।
“তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অর্থ দিচ্ছে। এর আগে এরকম কে কবে শুনেছে? রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধে প্রস্তুত না হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর খুবই শক্তিশালী শুল্ক আরোপের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সেই শুল্ককে কার্যকর হাতিয়ার বানাতে হলে এখানে উপস্থিত সব ইউরোপীয় দেশকে আমাদের সঙ্গে মিলিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে,” বলেন তিনি।
ভারত ও চীনের মতো রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর চড়া শুল্ক আরোপের কথা যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে বলে কয়েক সপ্তাহ আগেই গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল। ইউরোপের দেশগুলোর রুশ তেল কেনা নিয়েও ট্রাম্প নারাজ। ইউরোপের মধ্যে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও তুরস্ক রাশিয়ার তেলের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।
নিজেকে নোবেল পুরস্কার পাওয়া যোগ্য ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাওয়া ট্রাম্প জাতিসংঘের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-সংঘাত থামাতে তার প্রচেষ্টায় বৈশ্বিক এ সংস্থাটি সহযোগিতা করেনি।
মার্কিন এ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বেশিরভাগ সময় খেয়েছে অবশ্য তার সবচেয়ে বড় দুই ‘শত্রু’—অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন।
তিনি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে ‘কেস স্টাডি’ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, বিপুল সংখ্যক অভিবাসী পশ্চিমা দেশগুলোর সামাজিক বুনন বদলে দিচ্ছে, এটা থামাতে হবে।
যদিও মানবাধিকারকর্মীরা এ যুক্তি শুনতে নারাজ। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, অভিবাসীরা ইউরোপ, আমেরিকার মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ছুটছে উন্নত জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়, সামাজিক কাঠামো বদলে দেওয়ার লক্ষ্যে নয়।
“আমি এসব বিষয়ে খুবই ভালো,” নিজের পদক্ষেপ নিয়ে গর্ব করে ট্রাম্প বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের দেশগুলো নরকে পরিণত হচ্ছে।”
দিনকয়েক আগেই উইন্ডসর প্রাসাদে ব্রিটেশের ‘পরিবেশ সচেতন’ রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ঠগবাজি’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিশ্বকে ফের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তবে বিজ্ঞানীরা মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকে আসল এবং মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেই মনে করেন।
“অভিবাসন এবং তাদের আত্মঘাতী জ্বালানি ভাবনা পশ্চিম ইউরোপের মৃত্যু ডেকে আনছে,” বলেন ট্রাম্প।
কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মানবিক সুরক্ষাবলয়ের কাঠামো ভেঙে দিয়ে দেশে দেশে আশ্রয় পাওয়ার অধিকার সীমিত করার আহ্বান জানাতে যাচ্ছে বলে আগেই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল রয়টার্স।
গাজা প্রসঙ্গে তিনি ইসরায়েলের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে হামাসকে তাদের বর্বরতার জন্য ‘পুরস্কৃত করছে’। ফিলিস্তিনি এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি যেন সব জিম্মিকে শিগগির মুক্তি দেয় সেই তাগাদাও দিয়েছেন তিনি।
“আমাদের যত দ্রুত সম্ভব গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করতে হবে,” বলেছেন তিনি।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান সেখানে ‘শরিয়া আইন’ কায়েম করতে চান, মুল্যস্ফীতি বেড়েছে—ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এমনটা বলার ছয়দিন পর দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রে ‘মুল্যস্ফীতি পরাজিত হয়েছে’, ভাষণে এরকম অনেক উল্টোপাল্টা বিভ্রান্তিকর গালগপ্পোও ফেঁদেছেন ট্রাম্প।
তিনি জাতিসংঘ ভবনের অবকাঠামো নিয়েও ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ ঝেড়েছেন। বলেছেন, তিনি ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প জাতিসংঘের এক এস্কেলেটরে কিছুক্ষণের জন্য আটকা পড়েছিলেন, এবং শুরুর দিকে তার টেলিপ্রম্পটারও কাজ করছিল না।
“জাতিসংঘ থেকে আমি দুটো জিনিস পেয়েছি, বাজে এস্কেলেটর আর বাজে টেলিপ্রম্পটার,” এস্কেলেটর হুট করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেলানিয়া ‘প্রায় পড়েই গিয়েছিলেন’ জানিয়ে বলেন ট্রাম্প।
