“আইজকা সারা শহরেই মোটামুটি জ্যাম দেখলাম। তবে দুপুরের দিকে জ্যাম কিছুটা কমেছে।”
হতে সংগৃহিত
ভোররাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সড়কে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়েছে যানবাহন। সড়কে গাছ উপড়ে পড়েও যান চলাচল বাধা পেয়েছে।
সব মিলিয়ে সোমবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জট বাড়ায় রাস্তায় ভুগতে হয়েছে মানুষকে।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার মতিঝিল, রাজারবাগ, গ্রিনরোড, পান্থপথ, ধানমন্ডি, বিজয় সরনি, মিরপুর ১০ নম্বর, কাজীপাড়া, কালসী রোড, মিরপুর ১ থেকে টেকনিকেল মোড়ে যাওয়ার সড়ক, বিমানবন্দর সড়কের বলাকার সামনের সড়ক, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও, দক্ষিণ বনশ্রীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে।
এছাড়া টেকনিকেল মোড়ে সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত বনানী থেকে মহাখালী হয়ে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়ক, রামপুরা থেকে বাড্ডামুখী সড়ক, পান্থপথ, কারওয়ানবাজার, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, আউটার সার্কুলার রোড, প্রেসক্লাব, এলিফ্যান্ট রোডে যানজট ছিল।
বনানী এলাকায় অটোরিকশা চালক মুরাদ হোসেন দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকায় ধানমন্ডি এলাকায় যেতেই পারেননি তিনি।
“পুরা রাস্তায় পানি আর পানি। রাস্তায় গাড়ি চলেই না। ধানমন্ডির যাত্রী নিয়া গেছিলাম। ওই এলাকায় ঢুকতে না পাইরা পান্থপথ থাইকা গাড়ি ঘুরাইয়া চইলা আসছি। আইজকা সারা শহরেই মোটামুটি জ্যাম দেখলাম। তবে দুপুরের দিকে জ্যাম কিছুটা কমেছে।”
মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল সোমবার সকাল ১০টায় মুগদা থেকে মহাখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। অন্য সময় ওই পথটুকু পার হতে তার দেড় ঘণ্টা লাগে। সোমবার আড়াই ঘণ্টায় মহাখালী পৌঁছান তিনি।
“মুগদা মেইন রোড থেকে রামপুরা আবুল হোটেল পর্যন্ত আসতেই সময় লাগছে দুই ঘণ্টা। বাস চলেই না, পুরা রাস্তা জ্যাম। এছাড়া রাস্তায় পানি ছিল। আবুল হোটেল থেকে লিংক রোড হয়ে আরও ৪০ মিনিট সময় লেগেছে।”
মহাখালী দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আকাশ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে বের হতেই দেখি ঝুম বৃষ্টি। দক্ষিণপাড়া এলাকায় আধা ঘণ্টা একনাগাড়ে বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়। মূল সড়কেও বৃষ্টির জন্য যানজট ছিল। অনেক কষ্টে সেই পানি আর যানজট ঠেলে অফিসে পৌঁছেছি।”
সোমবার দুপুর দেড়টার দিকেও মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
দিলকুশা পেট্রল পাম্পের কর্মী মাহমুদুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে বৃষ্টির কারণে এখানে পানি জমে ছিল। সে কারণে আমরা কোনো গাড়িতে তেল দিতে পারিনি। ১০টার পরপর পানি নেমে গেলে গাড়িতে তেল দেওয়া শুরু হয়। আর সড়কে এত পানি জমে ছিল যে মেট্রোরেল বা বাস থেকে নেমে অফিসে যেতে লোকজনকে বাধ্য হয়ে রিকশা নিতে হয়েছে।”
গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল এলাকায় সকালের দিকে যানজট ছিল। তবে দুপুরে ওই এলাকায় যানজট কিছুটা কমে আসে।
ডিএমপি ট্রাফিকের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ফজলুল করিম দুপুর ২টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃষ্টির কারণে শান্তিনগর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের এক ও দুই নম্বর গেট, শাহজাহানপুর চৌরাস্তা, মতিঝিল এলাকায় পানি জমেছে। ফলে ওইসব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
“প্রচুর বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন কন্ট্রোল করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের এক ও দুই নম্বর গেটের সামনের সড়কে এখনও পানি জমে আছে, পানি ধীরে ধীরে যাচ্ছে। ফলে ওই সড়কে এখনও যানজট।”
বৃষ্টির কারণে সোমবার বেলা ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত মিরপুরগামী যানবাহন আটকে ছিল। এ সময় বেশিরভাগ বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পানির মধ্যে হাঁটা ধরেন। একই অবস্থা দেখা যায় মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁওমুখী সড়কের কাজীপাড়া পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক, মিরপুর বিভাগ) উপ-কমিশনার গৌতম কুমার বিশ্বাস বেলা সাড়ে ১১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১ নম্বরের সড়কে এখনও পানি জমে আছে। বিভিন্ন সড়কে প্রচুর যানবাহন বিকল হয়েছে। এখনও সড়কে চারটা বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। টেকনিক্যাল মোড়ে সড়কে গাছ পড়ে গেছে। এ কারণে এই এলাকায় এখনও বিভিন্ন সড়কে যানজট।”
ট্রাফিক পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আনোয়ার সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালের বৃষ্টিতে বিমানবন্দরের সামনের সড়ক, কাওলা, আশকোনা এলাকায় পানি জমেছিল। অফিস সময়ের আগের ওই জলাবদ্ধতায় সড়কে যানজট তৈরি হয়।
“তবে এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আমি আসার পর থেকেই দেখছি বিমানবন্দরের সামনে বলাকা, ডমেস্টিক টার্মিনালের সামনে পানি জমে। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি জমে যায়।”
