অপরিহার্য কেশ পরিচর্যার বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন না করাই হল চুলের ‘মিনিমালিজম’ যত্ন।
সংগৃহিত
চুলের যত্নে একসময় লম্বা দশ ধাপের রুটিন ছিল জনপ্রিয়। এখন সেই জায়গা নিচ্ছে ‘হেয়ার মিনিমালিজম’।
এটা এমন এক জীবনধারা, যেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য বা ধাপ বাদ দিয়ে সহজভাবে চুলের যত্ন নেওয়া হয়।
রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচির মতে, “চুলের যত্নের কিছু ধাপ সবার জন্য অপরিহার্য। আবার কিছু ধাপ সবার না করলেও চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।”
অপরিহার্য চুলের যত্ন
“চুলের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার। এই দুই ধাপ কখনও বাদ দেওয়া যাবে না। শ্যাম্পু চুলের ময়লা ও তেল পরিষ্কার করে, আর কন্ডিশনার চুলকে করে নরম ও মসৃণ”- বলেন শারমিন কচি।
শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার বা হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। এরপর চুলের ধরন অনুযায়ী রুটিন পরিবর্তন করা যায়।
কারও চুলে তাপ লাগে এমন স্টাইল করলে ‘হিট প্রোটেকশন’ ব্যবহার করা দরকার।
আবার কেউ যদি প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকাতে চান, তবে ‘লিভ-ইন কন্ডিশনার’ বা ‘কার্ল-ডিফাইনিং ক্রিম’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
অর্থাৎ চুলের মৌলিক যত্নের মূল হল পরিচ্ছন্নতা ও আর্দ্রতা বজায় রাখা।
যেসব ধাপ বাদ দেওয়া যায়-
প্রি-শ্যাম্পু ট্রিটমেন্ট: শ্যাম্পুর আগে চুলে তেল বা কন্ডিশনিং মাস্ক লাগানোর এই ধাপ সবার জন্য জরুরি নয়। যাদের চুল খুব শুকনা বা রাসায়নিক প্রক্রিয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত, শুধু তাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে। তবে সুস্থ চুলের জন্য এই অতিরিক্ত ধাপের প্রয়োজন নেই।
একাধিক কন্ডিশনার একসঙ্গে ব্যবহার: অনেকেই ভাবেন একদিনে কন্ডিশনার, ডিপ কন্ডিশনার ও লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল আরও ভালো থাকবে। তবে একদিনে একটিই যথেষ্ট। সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করলেই চুল ভালো থাকবে।
শুষ্ক আবহাওয়াতে বা খুব ঘন চুলের জন্য শ্যাম্পুর সঙ্গে নিয়মিত ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করাই যথেষ্ট যত্ন।
জট ছাড়ানো স্প্রে: এই স্প্রে মূলত সূক্ষ্ম, লম্বা বা কোঁকড়ানো চুলের জন্য তৈরি। যদি চুল সহজে আঁচড়ানো যায়, তবে এই ধাপ একদমই অপ্রয়োজনীয়।
হেয়ার অয়েলিং বা তেল দেওয়া: আয়ুর্বেদ পদ্ধতি অনুযায়ী মাথায় তেল দেওয়া চুলের গোড়া মজবুত করে ও মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। তবে যাদের চুল বা মাথার ত্বক সহজেই তেলতেলে হয়ে যায়, তাদের নিয়মিত তেল দেওয়া উচিত নয়। এতে স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল জমে গিয়ে চুল ভারী ও নিস্তেজ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ঘন ঘন তেল দেওয়ার অভ্যাস সবার জন্য নয়। শুধু ঘন, লম্বা ও শুষ্ক চুলের জন্য এটি উপযোগী।
স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েইশন: শুকনা বা টানটান মাথার ত্বকের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকে স্ক্রাব বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারে প্রদাহ ও শুষ্কতা বাড়তে পারে। বরং ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করাই বেশি উপকারী।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট: গরম তেল চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধোয়ার প্রচলন অনেক পুরানো। তবে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার চুলকে ভারী, নিস্তেজ ও প্রাণহীন করে তোলে। বিশেষ করে যারা ‘হট টুলস’ যেমন- স্ট্রেইটনার বা ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি আরও ক্ষতিকর হতে পারে।
ড্রাই শ্যাম্পু: যাদের চুল খুব ঘন বা ধোয়ার পর শুকাতে সময় লাগে, তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক। তবে চুল সামলানো সম্ভব হলে ড্রাই শ্যাম্পুর পরিবর্তে প্রয়োজন-মতো চুল ধোয়া বেশি কার্যকর।
হেয়ার মিনিমালিজম যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
এই নতুন ধারা শুধু চুলের যত্ন নয়, বরং একটি সচেতন জীবনধারার প্রতিফলন। প্রতিদিনের অতিরিক্ত যত্নের থেকে কম ধাপ ও সঠিক পণ্য ব্যবহারেই চুলকে সুস্থ রাখা যায়।
এছাড়া কম কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার করলে মাথার ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক তেল-ভারসাম্য বজায় থাকে। এতে চুল ভাঙা কমে, উজ্জ্বলতা বাড়ে। আর চুল থাকে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর।
