আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জেনেছে, এই চক্রটি প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে বহু নারীকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করে আসছে।
হতে সংগৃহিত
মোটা বেতনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাচার করে ‘যৌনপেশায় বাধ্য করার’ অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেছেন, এই চক্রের মূল হোতা আব্বাসসহ ৪ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারা হলেন- আব্বাস মোল্লা (৩৬), জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৩১),মিনার সরদার (৩০) ও রিপন শেখ (২৮)।
আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জেনেছে, এই চক্রটি প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে বহু নারীকে আর্কষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে চীনে চাকরি দেওয়ার নাম করে পাচার করে আসছে।
“অনেক সময় তারা ভিকটিমদেরকে চীনা নাগরিকদের সাথে বিয়ে এবং সে দেশের নাগরিকত্ব ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, “আর্ন্তজাতিক মানবপাচার চক্র যারা বিশেষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার অল্প বয়সী নারীদেরকে আর্কষণীয় বেতনে চায়নাতে চাকরি দেওয়ার নাম করে পাচার করে এবং সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে নির্যাতন চালিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে।”

গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর শাহ আলী থানায় চীন থেকে ফিরে আসা এক তরুণীর মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “এই ঘটনার ভিকটিম এবং মামলার বাদী আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় যে, সে এবং তার খালাতো বোন একটি নারী পাচারকারী চক্রের শিকার হয়ে চায়নায় পাচার হয়েছিলেন এবং তার খালাতো বোন এখনও চায়নাতে বন্দি অবস্থায় আছে এবং প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম, এই ঘটনার ভুক্তভোগী এবং মামলার বাদী একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন।
“কয়েক মাস আগে ফেইসবুকে ভিকটিম ও তার খালাত বোনের সঙ্গে এই মামলার অন্যতম আসামী বাবুর সাথে পরিচয় হয়। ভিকটিম বাবুর কাছে ঢাকায় একটি ভালো কাজের সন্ধান চায়। বাবু তাদেরকে জানায় চায়নাতে আর্কষণীয় বেতনে চাকরি আছে, বিশেষ করে যারা পার্লারের কাজ জানে এবং তাদেরকে চায়নায় আকর্ষণীয় বেতনে কাজের প্রস্তাব দেয়। তারা এই প্রস্তাবে রাজি হলে, তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং এই চক্রের মূলহোতা আব্বাস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
“আব্বাস তাদেরকে আশ্বাস দেয়, চায়নাতে ভালো কাজ আছে এবং তাদেরকে সেখানে পাঠানো যাবে। তাদেরকে সেখানে ১ লাখ টাকা বেতনে কাজ দেওয়া হবে এবং সেখানে পৌঁছানোর পরপরই ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এই প্রলোভন দেখানোর পর তাদেরকে পাসপোর্ট ও ভিসা করে সিলভি নামের এক মেয়ের মাধ্যমে চায়নাতে পাঠিয়ে দেয়।”
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, “পরবর্তীতে তারা চায়নায় যাওয়ার পর তাদেরকে বিউটি পার্লারে কাজ না দিয়ে তাদের দুই বোনকে আলাদা দুইটি বাসায় রেখে চক্রের সদস্যরা জোর করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে এই মামলার বাদী বাদী নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাকে বিভিন্ন শর্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।”বাং
বাংলাদেশে ফিরে এসে ওই নারী আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন যে, চীনে আটকে থাকা তার বোনকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। তখন আসামি আব্বাস বাদীর বোনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়ে ওই নারীকে ‘অনৈতিক কাজে বাধ্য করে’ বলে জানিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে ভিকটিম বুঝতে পারে সে মিথ্যা আশ্বাসে ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তখন ভিকটিম থানায় একটি মামলা রুজু করে এবং র্যাবের কাছেও সহযোগিতা চায়।”
