গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সহজ হবে না।
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় এক সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধবিরতি সহিংসতার কারণে নড়বড়ে হয়ে পড়ার পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জারি রাখতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে ধরে রাখার লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন মার্কিন কূটনীতিকরা।
এ লক্ষ্যে সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেছেন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
রোববার গাজার রাফায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। এর জেরে গাজায় হামাসের বিভিন্ন লক্ষ্যস্থলে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হন। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এসব সহিংসতা ও পদক্ষেপে গাজা যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিরাজমান যুদ্ধবিরতি ধরে রাখতে সক্রিয় হয় উদ্বিগ্ন ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের চাপে ইসরায়েল গাজায় ফের ত্রাণ সরবরাহ শুরু করার প্রস্তুতি নেয় বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
রয়টার্স লিখেছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব বারবার সহিংসতার ঝলকানিতে নড়বড়ে হয়ে উঠছে। সোমবারও গাজায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় গাজা যুদ্ধ শেষ করার প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামাস ও ইসরায়েলের ওপর চাপ ধরে রাখতে পারবে কি না, তা পরিষ্কার হয়নি।
গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সহজ হবে না। বেশ কিছু বাধা এখনও রয়ে গেছে, এগুলো দুই বছর স্থায়ী একটি যুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এক্ষেত্রে প্রধান প্রশ্নগুলো হল হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া ও ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির ভবিষ্যৎ শাসক কারা হবে। এসব প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে বৈদেশিক নীতিতে অর্জিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সাফল্য ধরে রাখতে হামাস ও ইসরায়েল, উভয়ের উপর চাপ বজায় রেখেছেন। সোমবার তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
‘হামাসের পরিস্থিতি’ দ্রুত সামাল দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে ‘বিষয়টি দেখার কথা’ বলেননি তিনি। হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করলেও তিনি বলেছেন, সংগঠনটি তাদের কয়েকটি পদে ‘কিছু বিদ্রোহের’ মুখোমুখি হলেও হামাসের নেতৃত্ব এর জন্য দায়ী নয় বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, যদি হামাসের নেতারা এর সমাধান না করেন ‘দরকার হলে তাদের আমরা নির্মূল করবো’। তবে এ ধরনের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে মার্কিন সেনারা সরাসরি যুক্ত হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার থেকে ইসরায়েল সফর শুরু করেছেন উইটকফ ও কুশনার। তারা যুদ্ধবিরতিকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপর তারা ট্রাম্পের ২০ ধাপের শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী পর্বগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। এই পর্বগুলো আরও কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ইসরায়েলে যাচ্ছেন। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, মার্কিন দূতরা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সোমবার রাত থেকে মিশরে হামাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয়েছে।
গাজাকে ঘিরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে গাজা যুদ্ধবিরতিকে টেকসই করতে ট্রাম্প কতোটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা বোঝা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষিত হওয়ার পর ট্রাম্প একে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
সংগৃহিত