প্রাথমিকভাবে সফল হলেও এ দুটি ওষুধের কয়েক বছর ধরে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও পরিমার্জন দরকার, তারপরই এগুলো চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করা যাবে।

সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সম্ভাব্য নতুন দুটি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছে, যেগুলো ওষুধ প্রতিরোধী গনোরিয়া ও এমআরএসএ নামের ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
বিবিসি লিখেছে, একটি একটি করে পরমাণু বা অ্যাটম সাজিয়ে অর্থাৎ পরমাণু থেকে শুরু করে এসব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের গঠন তৈরি করেছে এআই। ল্যাব ও প্রাণীর দেহে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এগুলো গনোরিয়া ও এমআরএসএ-এর বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াকে সফলভাবে ধ্বংস করতে পারে, যেগুলোর চিকিৎসায় প্রচলিত ওষুধ অকার্যকর।
প্রাথমিকভাবে সফল হলেও এ দুটি ওষুধের কয়েক বছর ধরে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও পরিমার্জন দরকার, তারপরই এগুলো চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করা যাবে।
এ গবেষণাটি করেছেন ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ বা এমআইটির একদল গবেষক। দলটি বলেছে, অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবনে ‘দ্বিতীয় স্বর্ণযুগ’ শুরু করতে পারে এআই।
অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ সারাতে সাহায্য করলেও এখন অনেক ব্যাকটেরিয়ায় সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। এ ধরনের প্রতিরোধী সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে এবং এখন প্রতি বছর এ কারণে এক লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে।
এর আগে, এআই ব্যবহার করে হাজার হাজার পরিচিত রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা, যাতে এমন উপাদান খুঁজে বের করা যায় যেগুলো থেকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হতে পারে।
এবার এমআইটি’র দল আরও এক ধাপ এগিয়ে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে একেবারে শুরু থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করেছে, যা যৌনবাহিত রোগ গনোরিয়া ও প্রাণঘাতী এমআরএসএ বা ‘মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফিলোককাস অরিয়াস’ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করবে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেল’-এ। গবেষণায় তিন কোটি ৬০ লাখ রাসায়নিক পদার্থ পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা, যার মধ্যে অনেক নতুন ও অজানা রাসায়নিকও রয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, বিজ্ঞানীরা এআইকে বিভিন্ন পরিচিত রাসায়নিকের গঠনশৈলী দেখিয়েছেন ও জানিয়েছেন, কোন রাসায়নিকগুলো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে কমাতে পারে বা ঠেকাতে পারে। এ তথ্যের সাহায্যে এআই শিখেছে কীভাবে নতুন কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করতে হয়।
তারপর এআই শিখেছে, বিভিন্ন রাসায়নিকের আকার ও গঠন, যা পরমাণু বিশেষ করে কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন দিয়ে তৈরি তা ব্যাকটেরিয়ার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, কোন গঠন ব্যাকটেরিয়া মারতে পারে বা এদের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে।
এরপর নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ডিজাইনের জন্য এআই’কে দুই ধরনের পদ্ধতি দিয়ে ওষুধ বানানোর চেষ্টা করিয়েছেন গবেষকরা। প্রথম পদ্ধতিতে, লাখ লাখ ছোট রাসায়নিক থেকে ভালো অংশ বেছে নিয়ে সেখান থেকে নতুন অণু তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তারা। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, এআইকে পুরোপুরি স্বাধীনভাবে নতুন অণু তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের ডিজাইন প্রক্রিয়ার সময় পুরানো ওষুধের মতো একই ধরনের কিছু তৈরির বিষয়টি বাদ দিয়েছে এআই। পাশাপাশি মানুষের ক্ষতি করতে পারে এমন পদার্থও খুঁজে বের করে ফেলে এআই, যাতে নিরাপদ ওষুধ বানানো যায়।
এর মাধ্যমে এআই ব্যবহার করে গনোরিয়া ও এমআরএসএ-এর অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এমআরএসএ এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত ত্বকে কোনো ক্ষতি না কলেও দেহের ভেতরে প্রবেশ করে মারাত্মক রোগ তৈরি করতে পারে।
এআইয়ের সাহায্যে ওষুধ তৈরি হয়ে গেলে তা প্রথমে ল্যাবের ব্যাকটেরিয়ায় ও তারপর সংক্রমিত ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা, যার ফলে দুইটি সম্ভাব্য নতুন ওষুধ মিলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এমআইটি’র অধ্যাপক জেমস কলিন্স বলেছেন, “আমরা রোমাঞ্চিত, কারণ জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে পুরোপুরি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ডিজাইন করা যে সম্ভব, তা আমরা দেখাতে পেরেছি।
“দ্রুত ও কম খরচে আমাদের নতুন অণু তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে এআই, এতে আমাদের ওষুধের ভাণ্ডার বাড়াতে পারব, যা সুপারবাগদের মতো জটিল ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে শক্তিশালী করবে।”
তবে নতুন এসব ওষুধ এখনও মানুষের ওপর পরীক্ষার পর্যায়ে আসেনি। এগুলোকে আরও উন্নত ও নিরাপদ করতে সময় লাগবে। তারপরই এগুলোকে নিয়ে মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
‘ফ্লেমিং ইনিশিয়েটিভ অ্যান্ড ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন’-এর ড. অ্যান্ড্রু এডওয়ার্ডস বলেছেন, “ওষুধ উদ্ভাবন ও উন্নয়নে বড় পরিবর্তন আনতে পারে এআই। তবে ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য এখনও আমাদের কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।”