“গণভোট নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি হয়েছে, তবে একটা জটিলতা তৈরির চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।
সংগৃহিত
বিএনপির ‘প্যাঁচে’ না পড়ে নভেম্বরের শেষদিকে গণভোট আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুলাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “গণভোট নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি হয়েছে, তবে তারা একটা জটিলতা তৈরির চেষ্টা করছে। তারা বলছে, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হতে হবে।
“দুইটা একেবারে আলাদা জিনিস। একটা হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হয়ে দেশ চালাবে সেটার সিদ্ধান্ত। আর গণভোট হচ্ছে আমাদের কতগুলো সংস্কার, যেগুলো কীভাবে সরকার পরিচালনা হবে, কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকবে, এসব মৌলিক বিষয়। এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নাই।”
তাহের বলেন, “গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারকে আলাদাভাবে পাস করতে হবে। জনগণ যদি চায়, তাহলে পাস হবে; না চাইলে পাস হবে না। কারণ এটা জনগণেরই সর্বোচ্চ ক্ষমতার।”
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “তারা শুরুতে গণভোট চায় নাই, জনগণের চাপে, সেন্টিমেন্ট দেখে তারা রাজি হয়েছে। কিন্তু প্যাঁচ একটা লাগায় রাখছে। আমরা বলে আসছি, কোনো প্যাঁচ-ম্যাচ এখানে আমরা বুঝি না, সহজ সরলভাবে গণভোট আগে হতে হবে।”
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আমরা বলেছি, নভেম্বরের শেষে গণভোট করেন, প্রায় এক মাসের বেশি সময় আছে, তারপর আরও আড়াই মাস থাকবে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এখানে সময়ের কোনো সমস্যা নাই। দেশের কল্যাণে কিছু টাকা খরচ করে যদি একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনে যেতে পারি, তাহলে এটা সবচেয়ে উত্তম।
“আমরা খুব সহজ সরলভাবে যেটা সঠিক, সেভাবে আমরা অবশ্য চাচ্ছি। কারণ আমরা চাই এই জাতি আজ যে পরিস্থিতি এবং অবস্থা তৈরি করছে, এখানে একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক, জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন আমাদের জন্য জরুরি। দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না করে আমরা সবাই মিলে যেন ফেব্রুয়ারিতে একটা আনন্দঘন নির্বাচনে যেতে পারি।”
ছবি: পিআইডি
দেশের ৭০ শতাংশ আমলাই বিএনপি পছন্দমতো বসিয়েছে মন্তব্য করে তাহের বলেন, “নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসনে আজ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কর্মকর্তাই একটি দলের আনুগত্য করছে। তাদের মাধ্যমে এটা হচ্ছে। আমরা গেলে তারা বলে, ‘প্রচণ্ড চাপ’। তো চাপ কোত্থেকে? পুলিশে একই অবস্থা। সারা বাংলাদেশ তো এ ‘ইমব্যালেন্সটা’ হয়ে আছে।
“আমরা বলেছি আপনি এটাকে লেভেল প্লেইং ফিল্ড করেন, সবার জন্য সমতল ভূমি তৈরি করেন এবং নির্বাচনের আগে আপনি যেখানে যেখানে রদবদল করা দরকার, আপনি করেন।”
সম্প্রতি বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে শিবিরের নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছে দাবি করে জামায়োতের নায়েবে আমির বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। কবিরহাট নামে নোয়াখালী একটা জায়গা আপনারা দেখেছেন, দুই দিন আগে ছাত্রশিবির একটা মিটিং হইতেছিল। সেখানে বিএনপির লোকেরা প্রকাশ্যে হামলা করেছে। এরকম যদি এখনই শুরু হয়, তাহলে নির্বাচনে কী হবে!
“এটা যদি আপনি না থামাইতে পারেন, তাহলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।”
তাহের বলেন, “সরকারের যারা উপদেষ্টা আছেন, তাদের ব্যাপারে বলেছি, তবে সবার ব্যাপারে নয়। আমরা বলেছি, আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার কিছু লোক আপনার পাশে আপনাকে বিভ্রান্ত করে এবং ওরা কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করে।
“তাদেরকে আমরা সময় দিচ্ছি, আপনাকেও সুযোগ দিচ্ছি, যদি না হয় তাহলে আমরা যা যা করণীয়, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা চিন্তা করব।”
এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল।
