ডায়েট কোমল পানীয় কিংবা কৃত্রিম চিনি গ্রহণ করলেও ক্ষতি হতে পারে।
হতে সংগৃহিত
কৃত্রিম মিষ্টি অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাসের একটি বড় অংশ। বিশেষ করে যারা ডায়েট নিয়ে সচেতন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেন কিংবা ডায়াবেটিসে ভোগেন।
তারা কৃত্রিম চিনি দেওয়া ডায়েট সোডা, দই গ্রহণ করেন। অথবা চা, কফি বা বিভিন্ন খাবারে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করেন।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এগুলো হয়ত আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের জন্যও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।
গবেষণার নতুন তথ্য
সম্প্রতি ‘নিউরোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ‘রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- কৃত্রিম মিষ্টি ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ক্ষতির সম্পর্ক নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ব্রাজিলের ‘ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলো’র বিশেষজ্ঞ ক্লাউডিয়া কিমি সুয়েমোতো।
এই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় ব্রাজিলের ১২,৭৭২ জন প্রাপ্তবয়স্ককে আট বছর ধরে অনুসরণ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিতভাবে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত জরিপে উত্তর দিয়েছেন। আর বিভিন্ন সময়ে তাদের মানসিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য জ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ও বেশি পরিমাণে কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণ করেছেন তাদের চিন্তা, স্মরণশক্তি ও শেখার ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব আরও বেশি দেখা গেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বেশি ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কের বয়স গড়ে অতিরিক্ত ১.৬ বছর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কতটুকু ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ?
গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে প্রায় ১৯১ মিলিগ্রামের মতো কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করেছেন— যা একটি ডায়েট সোডার সমান— তাদের মস্তিষ্কের ক্ষয় সবচেয়ে বেশি হয়েছে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সম্পর্কটি মূলত ৬০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে একই ধরনের প্রভাব পাওয়া যায়নি।
যে কারণে ক্ষতিকর হতে পারে কৃত্রিম মিষ্টি
যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’-এর মুখপাত্র থেরেসা জেন্টায়ল এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছেন, “এই সমস্যার মূল কারণ হতে পারে ‘নিউরোইনফ্ল্যামেইশন’, বিপাকীয় প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “কিছু কৃত্রিম মিষ্টি, যেমন- ‘অ্যাসপারটেম’, শরীরে ভেঙে গিয়ে এমন যৌগ তৈরি করে যা মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
অন্যদিকে ‘স্যাকারি ‘ ও ‘সুক্রালোজ’ অন্ত্রের জীবাণুর ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয় এবং সেখান থেকেও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এমনকি এসব কৃত্রিম, মিষ্টি মস্তিষ্ক ও রক্তের মাঝে যে প্রতিবন্ধক থাকে, সেটা দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সঠিক বার্তা আদান-প্রদান কমে যায়।
দীর্ঘমেয়াদে এসব প্রভাব স্মৃতিভ্রংশ ও জ্ঞানীয় হ্রাসকে দ্রুততর করতে পারে।
এটি কি সরাসরি কারণ?
তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এটি সরাসরি কারণের প্রমাণ নয়। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত বিষয়ও মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ঝুঁকি নিয়ে সন্দেহ নেই।
গবেষক ক্লাউডিয়া কিমি সুয়েমোতো বলেছেন, “লো’ এবং ‘নো-ক্যালোরি’ মিষ্টি সাধারণত চিনির বিকল্প হিসেবে নিরাপদ মনে করা হয়। তবে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদে এগুলো মস্তিষ্কের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার কমাবেন যেভাবে
পুষ্টিবিদরা বলছেন, সবচেয়ে ভালো উপায় হল ধীরে ধীরে ব্যবহার কমানো।
সরাসরি বাদ দেওয়া কঠিন হলে কফি বা দইয়ে মিষ্টির পরিমাণ অর্ধেক করে দেওয়া যেতে পারে। পরে ধীরে ধীরে আরও কমানো সম্ভব।
এছাড়া ডায়েট সোডা বা ‘প্রসেসড’ অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোও গুরুত্বপূর্ণ।
থেরেসা জেন্টায়ল উল্লেখ করেছেন, “এগুলোর বেশিরভাগই অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহৃত হয়, যা স্বতন্ত্রভাবেও মস্তিষ্ক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।”
কোন বিকল্প ব্যবহার করবেন?
গবেষণায় দেখা গেছে, সব কৃত্রিম মিষ্টিই সমান ক্ষতিকর নয়। কিছু প্রাকৃতিক বিকল্প, যেমন-
টাগাটোজ, স্টিভিয়া, মঙ্কফ্রুট তেমন ঝুঁকি তৈরি করেনি।
পুষ্টিবিদরা আরও পরামর্শ দিয়েছেন—
- ওটমিল, দই বা কেক–বিস্কুটে কৃত্রিম মিষ্টির পরিবর্তে বেরি, কলা, আপল-সস বা খেজুর ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দারুচিনি, জায়ফল, ভ্যানিলা বা লেবুর খোসার গুঁড়া খাবারে প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি স্বাদ আনে।
- প্রয়োজনে অল্প পরিমাণে মধু, নারিকেল চিনি বা ম্যাপল সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।