“দেড় বছর ধরে এ ব্রিজের কাজ চলছে। মানুষের দুর্ভোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সীমাহীন বললেও কম হবে।”
হতে সংগৃহিত
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় জি কে সেচ খালের ওপর সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও বিকল্প পথের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দরা।
১৮ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি। ফলে প্রায় দেড় বছর ধরে উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।
জেলার মিরপুর পৌর পশুহাট, উপজেলা পরিষদ ও মিরপুর-দৌলতপুর সড়কের একমাত্র সংযোগস্থল জি কে খালের উপরে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের মতামত উপেক্ষা করে সড়ক বিভাগ ‘ভুল স্থানে’ সেতুটি নির্মাণ করছে। ফলে ভবিষ্যতে যেভাবে সংযোগ সড়ক তৈরি হবে, তাতে সেতুটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য কার্যকর হবে না; বরং তা অচল অবকাঠামোয় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ-সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলছেন, সেতুটি নিয়ে স্থানয়ীদের শঙ্কা বা অন্তোষের কোনো কারণ নেই। সবকিছু ‘বিবেচনা করেই’ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সওজের তথ্য অনুযায়ী, সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে যৌথভাবে কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে কাজ শুরু করে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান- ‘কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস’ ও ‘রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। নির্ধারিত সময় হিসেবে সেতুটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের সময় ছিল চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত।
তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নির্মাণ কাজ ব্যাহত হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্মাণকাল ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ এগিয়েছে।
মিরপুর উপজেলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবলু চৌধুরীর অভিযোগ, “উপজেলা সদরের প্রধান বাণিজ্যিক গুরুত্বের এই ঈগল চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
“নিয়ম অনুযায়ী, সেতু নির্মাণকালীন স্বাভাবিক চলাচল অব্যাহত রাখতে বিকল্প বেইলি ব্রিজ করার কথা। কিন্তু সেখানে কোনো বেইলি ব্রিজ না থাকায় সীমাহীন জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ রকম একটা টেকসই ও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে এমন একটা সংকীর্ণ স্থান নির্বাচন করা চরম ভুল হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ শেষে ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবরে পড়বে।”
উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের ভ্যান চালক আইনাল মিয়া বলেন, “দেড় বছর ধরে এ ব্রিজের কাজ চলছে। মানুষের দুর্ভোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সীমাহীন বললেও কম হবে। বিকল্পভাবে চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। একমাত্র উপায় হলো বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে হেঁটে পার হওয়া। সেটাও আনেক ঝুঁকিপূর্ণ।”
তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “সরকার এতো টেকা খরচ কইরে এই ব্রিজ বানাচ্ছে কার জন্যি? আমরা যেদি ভ্যান চালা উঠতিই না পারি চড়া মাইরি তালি আমারে কী লাভ হবি?”
সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস’ এর সাইট ম্যানেজার আলিফ হোসেন বলেন, “সেতুর দৈর্ঘ্য ৫৭ মিটার। এখানে ৩০০ ফিট ড্রাইভেশন রাস্তা নির্মাণ হবে। এখানে দোকানপাট এবং নতুন করে স্থাপনা তৈরির কারণে সেতুর সামনে রাস্তা করা সম্ভব না। রাস্তা হলেও রাস্তাটি সেতুর সঙ্গে সোজা হবে না। যার কারণে সেতুটি সুন্দর হওয়ার কথা থাকলেও হবে না।”
রেলের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ের কারণে, বৈদ্যুতিক লাইন, পুরাতন ব্রিজের পাইল উঠানোর কারণে কাজ দেরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সড়ক বিভাগ যেভাবে নির্দেশনা দেবে, আমরা সেই ভাবেই কাজ করে দিব।”
এ বিষয়ে মিরপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “নির্মাণাধীন সেতু প্রকল্পের আওতার মধ্যেই এক ব্যবসায়ী নেতার বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছিল। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন স্থাপনা করা যাবে না বলে ওই ব্যবসায়ীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
“তাছাড়া ওই স্থাপনা নির্মাণে কোন নীতিমালা অনুসরণ না করায় তাকে ১৩টি বিষয়ে শর্তারোপ করা হয়েছে। সেগুলি পালন না করলে নির্মাণাধীন ভবন করতে দেওয়া হবে না।”
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, “ব্রিজটি যথাযথ ড্রয়িং-ডিজাইন অনুসরণ করেই করা হচ্ছে। শঙ্কা বা অসন্তোষ হওয়ার জন্য তো আর সরকার এতো টাকা ব্যয় করে এই ব্রিজ নির্মাণ করছেন না। নির্মাণ শেষ হলেই সব শঙ্কার অবসান হয়ে যাবে।”
