“আসুন, আমরা প্রতিটি কন্যাশিশুর সাহস, তার স্বপ্ন এবং পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়ার শক্তিকে উদযাপন করি।”
হতে সংগৃহিত
কিশোরীদের জন্য সহিংসতামুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার ওপার জোর দিয়ে তাদের ‘কণ্ঠস্বর আরও উচ্চকিত’ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অনুগ্রহ করে কিশোরীদের কণ্ঠস্বর আরও উচ্চকিত করুন, তাদের মতামত প্রকাশ করতে দিন এবং তাদের অগ্রাধিকারগুলোকে লক্ষ্যভিত্তিক ও বাস্তব পদক্ষেপে, বাস্তব প্রয়োগে রূপ দিন।”
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, সরকার, সমাজ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো কিশোরীদের জন্য সহিংসতামুক্ত, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে আরও কাজ করতে পারে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবা দিতে পারে এবং কিশোরীদের সুরক্ষার জন্য যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো শুধু খাতা কলমে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি বলেন, কন্যাশিশুদের নেতৃত্বের বিকাশ এবং অংশগ্রহণ বাড়াতে কন্যাশিশুদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
“কন্যাশিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা, শিখতে এবং বিকাশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে কন্যাশিশুদের এগিয়ে যাওয়ার পথের বাধাগুলো দূর করা জরুরি।”
একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে বাংলাদেশের কিশোরীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রাখতে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ কাজ করে যাবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের এই সপ্তাহে ইউনিসেফ তোমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে, তোমাদের সাফল্য উদযাপন করছে এবং তোমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তা দূর করার অঙ্গীকার করছে।
“আসুন, আমরা প্রতিটি কন্যাশিশুর সাহস, তার স্বপ্ন এবং পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়ার শক্তিকে উদযাপন করি। আসুন, আমাদের ভবিষ্যতের নির্মাতাদের জন্য দরজা খুলে দিই এবং নিশ্চিত করি যে তাদের জীবন নিয়ে যেখানে যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার প্রতিটি টেবিলে যেন তাদের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়।
বাংলাদেশে কিশোরীদের সমস্যা ও সংকটের চিত্রও উঠে আসে তার বিবৃতিতে।
বলা হয়, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়, এমন কন্যাশশিুর সংখ্যা অনেক বেশি। বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে না পারা কন্যা শিশুর সংখ্যাও অনেক বেশি। ঘরে সহিংসতার শিকার হওয়া কন্যাশিশুর সংখ্যাও নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২৫ পালনে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এই বিশেষ সময়ে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি কন্যাশিশুর অসাধারণ শক্তি, নেতৃত্ব ও সাহসকে আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সম্মান জানাই।
“শহরের শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে যেসব কন্যাশিশু উঠে দাঁড়ায়, কথা বলে, নিজের মতামত তুলে ধরে এবং পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেয়, এমনকি অকল্পনীয় প্রতিকূলতার মুখেও তারা এগিয়ে চলে – তারা প্রতিদিন আমাদের অনুপ্রাণিত করে।”
তিনি বলেন, ” কন্যাশিশুরা ভুক্তভোগী নয়, বরং স্বপ্নদ্রষ্টা- যারা আরও ভালো একটি আগামী নির্মাণে কাজ করছে। তাদের কণ্ঠস্বর, চিন্তাভাবনা ও নেতৃত্ব শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি তৈরি করা বহুমুখী সংকট উত্তরণের জন্য অপরিহার্য। এসব সংকটের মধ্যে ক্ষতিকর সামাজিক রীতি-নীতি থেকে শুরু করে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এমনমাত্রার সহিংসতা, দারিদ্র্য ও জলবায়ু জনিত অভিঘাতের মতো বিষয়গুলো রয়েছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে কিশোরী কন্যাশিশুরা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়, যার পেছনে থাকে সমাজের গভীরে বিদ্যমান বৈষম্য ও দারিদ্র্য। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। নিরক্ষরতার হার কমে আসার পরও অনেক কন্যাশিশু বিকশিত হওয়ার এবং স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য প্রতিটি পরিসংখ্যানের পেছনে রয়েছে একেকজন শিশু, যার স্বপ্ন থেমে গেছে; একজন তরুণী যার সম্ভাবনা বাংলাদেশ হারাতে বসেছে। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কন্যাশিশুরা নানাবিধ ঝুঁকির মুখোমুখি হয়–যেমন শিশুবিবাহ, অকাল গর্ভধারণ, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত থাকা।
“এসব চ্যালেঞ্জ শুধু তাদের শৈশব ও আশা কেড়ে নেয় না, অনেক ক্ষেত্রে জীবননাশের ঝুঁকিও তৈরি করে। ঘরে, জনসম্মুখ বা অনলাইনে যেখানেই সহিংসতা হোক না কেন, তা গ্রহণযোগ্য নয় এবং একটি বড় হুমকি।”
কন্যাশিশুদের জন্য ‘মানসিক স্বাস্থ্য আরেকটি নীরব সংকট’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটি গভীর উদ্বেগের জায়গা। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ১২ শতাংশ এবং অবিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ৯ শতাংশের মধ্যে মাঝারি মাত্রার বিষণ্নতার লক্ষণ রয়েছে।
“এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, অনেক কন্যাশিশু নীরবে ধুঁকছে এবং তাদের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা জরুরিভাবে প্রয়োজন। অভিভাবকেরা প্রায়ই কন্যাশিশুদের এই একাকিত্ব ও মানসিক চাপ সম্পর্কে যথেষ্টভাবে অবগত নন। আর অনলাইন বুলিং ও নিপীড়নের কারণে এই সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে।”
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “আমাদের অবশ্যই তাদের কথা শুনতে হবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সহমর্মিতা ও যত্ন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে আর নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা একা নয়।”
