স্টারলিংক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখন বিশাল ক্ষমতা হাতে পেয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক। ফলে, স্পেসএক্সের এই আধিপত্য অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সংগৃহিত
১০ হাজারতম স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে এখন পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নিয়ন্ত্রণ করছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক।
রোববার সফলভাবে ৫৬টি নতুন স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে পাঠানোর মাধ্যমে মোট ১০ হাজার তম স্টারলিংক স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠিয়েছে মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স।
অলাভজনক স্যাটেলাইট ট্র্যাকার ‘সেলেস্ট্র্যাক’-এর তথ্য অনুসারে, এ মাইলফলক ছুঁয়ে এখন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো সব সক্রিয় স্যাটেলাইটের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছেন স্পেসএক্স প্রধান মাস্ক।
২০ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা মোট ১২ হাজার ৯৫৫টি সক্রিয় স্যাটেলাইটের মধ্যে ৮ হাজার ৫৬২টি, অর্থাৎ প্রায় ৬৬ শতাংশেরও বেশি স্পেসএক্সের স্টারলিংক নেটওয়ার্কের অংশ।
এ ছাড়া, প্রায় দেড় হাজারটি স্টারলিংক স্যাটেলাইট বর্তমানে নিষ্ক্রিয় বা পৃথিবীর কক্ষপথে আর নেই বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
তবে, স্পেসএক্সের এই আধিপত্য অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ স্টারলিংক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখন বিশাল ক্ষমতা হাতে পেয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক।
২০২৩ সালে মাস্ক দাবি করেছিলেন, মার্কিন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা টেসলা, স্পেসএক্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণের ফলে ‘একজন ব্যক্তির মাথায় থাকা সবচেয়ে বেশি রিয়েল-টাইম বৈশ্বিক অর্থনৈতিক তথ্য’ রয়েছে তার কাছে।
স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের আকারের দিক থেকে বর্তমানে স্পেসএক্সের সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটিশ স্যাটেলাইট কোম্পানি ‘ওয়ানওয়েব’। কোম্পানিটির ৬৫১টি সক্রিয় স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে। তবে আগামী ২০৩০-এর দশকের মধ্যে ১০ হাজারটিরও বেশি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে বেশ কয়েকটি চীনা প্রকল্প।
ভবিষ্যতে স্টারলিংক নেটওয়ার্কে মোট ৪২ হাজার স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে স্পেসএক্স। তবে এখন পর্যন্ত কেবল ১২ হাজারটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অনুমতি পেয়েছে তারা।
পৃথিবীতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সিগনাল পাঠানোর জন্য তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্টারলিংক স্যাটেলাইট। এগুলোর আয়ু প্রায় পাঁচ বছর। এরপর এগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে থ্রাস্টার চালিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে ও প্রবেশের সময় সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়, যাতে মহাকাশে আবর্জনা না বাড়ে।
গত কয়েক সপ্তাহে রাতের আকাশে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ পুড়ে যাওয়ার বহু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডাওয়েল-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুইটি স্পেসএক্স স্যাটেলাইট কক্ষপথ ত্যাগ করছে, যা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পথে পুড়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকস’-এর ড. জনাথন ম্যাকডাওয়েল বলেছেন, এই সংখ্যা বেড়ে দিনে প্রায় পাঁচটি স্যাটেলাইটে পৌঁছাবে। কারণ নিজেদের স্টারলিঙ্ক নেটওয়ার্কের পরিসর আরও বড় করছে স্পেসএক্স।
