মিরপুরের স্পিন-স্বর্গে অনন্য নজির গড়ে ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার ৫০ ওভারই স্পিন দিয়ে শেষ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংগৃহিত
ম্যাচের শুরুটাই একটি ইতিহাস গড়ে। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার দুই প্রান্তেই স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর স্পিনই চলতে থাকল। শুধু স্পিন আর স্পিন। ইনিংসের শেষ ওভারটি যখন শেষ করলেন আকিল হোসেন, নিজেদের দলের সীমানা ছাড়িয়ে ওয়ানডে ইতিহাসেই অনন্য এক নজির গড়ে ফেলল ক্যারিবিয়ানরা।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সব ওভারই স্পিন দিয়ে শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রায় ৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো দল পুরো ৫০ ওভার শেষ করল স্পিনে।
একসময় অবশ্য ৬০ ওভার, ৫৫ ওভারের ওয়ানডে ম্যাচও হয়েছে। তবে আগে কখনোই স্পিন দিয়ে ৪৫ ওভার বোলিংও হয়নি।
মিরপুরের স্পিন-স্বর্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দিন একাদশ সাজায় কোনো বিশেষজ্ঞ পেসার ছাড়াই। আগের রাত আড়াইটায় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া আকিল মাঠে নেমে যান ম্যাচ খেলতে। বোলিংয়ের শুরুও করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। আরেক প্রান্তে শুরু করেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রোস্টন চেইস।
এরপর আক্রমণে আসেন দুই বাঁহাতি স্পিনার খ্যারি পিয়ের ও গুডাকেশ মোটি। পঞ্চম বোলার হিসেবে আক্রমণে আনা হয় অনিয়মিত স্পিনার আলিক আথানেজকে। এই পাঁচ বোলারই ১০ ওভার করে বোলিং করেন। এই ম্যাচেই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান আকিম ওগিস লেগ স্পিন করতে পারেন। তবে তাকে ব্যবহার করা হয়নি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাদশে বিশেষজ্ঞ পেসার না থাকলেও পেস বোলিং অলরাউন্ডার জাস্টিন গ্রেভস ছিলেন, যিনি নিয়মিতই বোলিং করেন। এছাড়া ব্যাটসম্যান শেরফেন রাদারফোর্ডও মিডিয়াম পেস করে থাকেন মাঝেমধ্যেই। তাদের কাউকেই বোলিংয়ে আনেননি অধিনায়ক শেই হোপ।
এক ওয়ানডেতে স্পিন বোলিংয়ে সবচেয়ে বেশি বোলিং হয়েছিল আগে ৪৪ ওভার। তিন দফায় ৪৪ ওভার স্পিন ব্যবহার করেছিল শ্রীলঙ্কা- ১৯৯৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ত্রিনিদাদে, ১৯৯৮ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে কলম্বোয় ও ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডাম্বুলায়।
বাংলাদেশের মাঠে আগে সর্বোচ্চ ৪০ ওভার স্পিন হয়েছিল দুই দফায়। দুটিই করেছিল বাংলাদেশ- ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ও ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই মিরপুরেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ স্পিনারের মধ্যে একমাত্র অনিয়মিত বোলার যিনি, সেই আলিক আথানেজই ছিলেন এ দিন সবচেয়ে ক্ষুরধার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আগে মোটে দুই ম্যাচে মোট চার ওভার বোলিং করেছিলেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫ ম্যাচ খেলে বোলিং করেছেন স্রেফ চার ইনিংসে। সেই আথানেজ এই ম্যাচে যেন রহস্য স্পিনারে রূপ নিয়েছিলেন। তার বোলিংয়ে রান বের করার পথই পাচ্ছিল না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
তার ১০ ওভারের ৫০টি থেকেই রান নিতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলিং ফিগার – ১০-৩-১৪-২!
বাংলাদেশের বিপক্ষে স্পিন বোলিংয়ে পুরো ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার নজির এটিই। আগের রেকর্ডটি ছিল মোহাম্মাদ হাফিজের। ২০১১ সালে মিরপুরেই ১০ ওভারে ১৫ রান দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ২০১৬ সালে মিরপুরে ১০ ওভারে ১৬ দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের মোহাম্মাদ নাবি।
পেস-স্পিন মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের কীর্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই আরেকজনের। ২০০৪ সালে জ্যামাইকায় ১০ ওভারে ১১ রান দিয়েছিলেন সাবেক বাঁহাতি পেসার ইয়ান ব্র্যাডশ। পরে ২০০৬ সালে জয়পুরে ১০ ওভারে ১৪ রান দিয়েছিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। তার পাশেই এখন আথানেজের নাম।
