এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ তাদের হাতে থাকা ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বন্ধ কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ারে দুই দফায় প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।
সংগৃহিত
ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ বিনিয়োগের অভিযোগে দেশের অন্যতম শীর্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজারে ‘আজীবন নিষিদ্ধ’ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
পাশাপাশি ওই ছয় মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
একই ঘটনায় ‘যোগসাজশের’ অভিযোগে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকেও পুঁজিবাজারে ‘আজীবন নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে বেক্সিমকোর বন্ডে অনিয়মের ঘটনাতেও শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন অনিয়মের আরেক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হল।
বিএসইসি জানিয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের হাতে থাকা ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে শেয়ারবাজারে ওটিসি বাজারে থাকা বন্ধ কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ারে দুই দফায় প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়।
প্রথম দফায় বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারের ৫১ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। পদ্মা প্রিন্টার্সের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ২৮৯.৪৮ টাকা দরে কেনে এলআর গ্লোবাল।
এরপর পদ্মা প্রিন্টার্সের নাম বদলে করা হয় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড। এরপর কোয়েস্ট বিডিসির মূলধন বাড়াতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন শেয়ার ইস্যু করে ছয়টি ফান্ড থেকে দ্বিতীয় দফায় ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়।
বিএসইসি বলছে, বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার চড়া দামে কিনে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এই অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলত ফান্ডগুলোর ইউনিটধারীদের ‘স্বার্থ ক্ষুণ্ন’ করা হয়েছে। সে কারণেই এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওই ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড হল– এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেলটা মিউচুয়াল ফান্ড।
এসব ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ এবং সুদসহ ৯০ কোটি টাকা ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামকে এই অর্থ ফান্ডগুলোতে ফেরত আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অর্থ ফেরত আনতে না পারলে রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের পরিচালক জর্জ এম স্টক ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।
পাশাপাশি এই অনিয়মের ঘটনায় ছয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ৯ কোটি ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তারা হলেন এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শরীফ আহসান, মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা, ওমর শোয়েব চৌধুরী ও বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)।
এর মধ্যে বিজিআইসিকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ছয় ব্যক্তিকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এই ১ কোটি টাকার বাইরে রেজাউর রহমান সোহাগকে আরও ১০ লাখ টাকা এবং শরীফ আহসানকে আরও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে বিএসইসি।
