জনসমক্ষে প্রকাশিত নতুন এ নথিগুলোতে ইন্টারনেট উদ্যোক্তা পিটার থিয়েল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের নামও দেখা যাচ্ছে।

হতে সংগৃহীত
মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিন সংশ্লিষ্ট নতুন কিছু নথি প্রকাশ করেছে, যেখানে ধনকুবের ইলন মাস্ক ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম এসেছে।
প্রশাসনিক দুর্নীতি, সরকারি নথি, আর্থিক অপব্যবহার নিয়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটিকে জেফ্রি এপস্টিন এস্টেটের দেওয়া এসব নথিতে দেখা যাচ্ছে, মাস্ককে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এপস্টিনের দ্বীপে যেতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
পৃথকভাবে ২০০০ সালের মে মাসের এক ফ্লাইটের যাত্রী তালিকায় পাওয়া গেছে ব্রিটিশ প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম।
এ প্রসঙ্গে মাস্ক ও অ্যান্ড্রুর মন্তব্য চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু এর আগে কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেছিলেন। মাস্কও আগে বলেছিলেন, এপস্টিন তাকে তার দ্বীপে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
নতুন যেসব নথি প্রকাশিত হয়েছে তা মিলেছে জেফ্রি এপস্টিন এস্টেটের দেওয়া তৃতীয় ব্যাচের নথি থেকে। এসব নথিতে ফোন ম্যাসেজের লগ, ফ্লাইট লগের অনুলিপি, উড়োজাহাজের যাত্রী তালিকা, আর্থিক হিসাবপত্রের অনুলিপি ও এপস্টিনের দৈনন্দিন কার্যতালিকা আছে।
মাস্ক এবং অ্যান্ড্রু ছাড়াও জনসমক্ষে প্রকাশিত নতুন নথিগুলোতে ইন্টারনেট উদ্যোক্তা পিটার থিয়েল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের নামও এসেছে।
নথিগুলোর মধ্যে ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বরের একটিতে এক লাইনে বলা হচ্ছে- ‘মনে করানো: ৬ ডিসেম্বর দ্বীপে ইলন মাস্কের যাওয়ার কথা (এটা কী আদৌ হচ্ছে?)’।
আর ১২ মে ২০০০ সালে নিউ জার্সির টেটারবোরো থেকে ফ্লোরিডার পাম বিচের এক ফ্লাইটের যাত্রী তালিকায় এপস্টিন ও তার সহযোগী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম দেখা যাচ্ছে। এপস্টিনের সঙ্গে মিলে যৌনকর্মের জন্য মেয়েদের পাচারের ষড়যন্ত্রের দায়ে ২০২১ সালে ম্যাক্সওয়েল দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
এপস্টিন ফাইলস যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত কেলেঙ্কারির এক গোপন নথি। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এসব নথি প্রকাশের দাবি উঠেছিল। পরে সেই ফাইলের একটি অংশ প্রকাশ্যে এনেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি।
যৌনদাসী কেনাবেচা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌনদাসী সরবরাহের অভিযোগ আছে এপস্টিনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে- এপস্টিনের পিডো দ্বীপের বিলাসবহুল প্রাসাদে চলত অবৈধ সম্পর্ক। নাবালিকা, এমনকি শিশুদের দিয়েই চালানো হতো যৌন সম্পর্কের কাজ।
অনেক অংশ মুছে ফেলা এক হিসাবপত্রে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি ও মে-তে ‘অ্যান্ড্রু’ নামে একজনের ‘ম্যাসাজের’ দুটি পেমেন্টের উল্লেখ রয়েছে।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের রেকর্ড, ছবি ও সংবাদ প্রতিবেদন থেকে যায়, এপস্টিন সংশ্লিষ্ট নতুন প্রকাশিত নথিগুলোতে যে যে সময়ে অ্যান্ড্রুর পেমেন্টের কথা বলা হচ্ছে সেসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। যদিও হিসাপত্রে থাকা ‘অ্যান্ড্রু’-ই ব্রিটিশ রাজপুত্র কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২০০০ সালের ১১ মে বাকিংহাম প্রাসাদ তাদের ওয়েবসাইটে বলেছিল, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ‘ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু চিলড্রেনের’ এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গিয়েছেন। পরে ১৫ মে তার যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার খবরও দিয়েছে তারা।
নতুন প্রকাশিত নথিগুলোর একটিতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে পিটার থিয়েলের সঙ্গে একটি মধ্যাহ্ণভোজের পরিকল্পনার কথাও আছে। আরেক জায়গায় ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে ব্রেকফাস্টের পরিকল্পনার কথাও পাওয়া গেছে।
নথিগুলোতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে একটি ব্রেকফাস্ট পার্টির প্রাথমিক পরিকল্পনারও উল্লেখ রয়েছে।
পরে ২০২২ সালে গেটস বিবিসিকে বলেছিলেন, জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ‘ভুল হয়েছিল’।
তবে এপস্টিন সংশ্লিষ্ট নথিগুলোতে যাদের নাম এসেছে তারা কুখ্যাত ওই যৌন অপরাধীর অপরাধ সম্বন্ধে জানতেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
যৌনপাচার সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের অগাস্টে নিউ ইয়র্কের একটি কারাগারের কক্ষে আত্মহত্যা করেন এপস্টিন।
ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটদের মুখপাত্র সারা গেরেরো এপস্টিন সংশ্লিষ্ট আরও নথি প্রকাশে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
“জেফ্রি এপস্টিন যে বিশ্বের কিছু ক্ষমতাবান ও অর্থশালী লোকের বন্ধু ছিলেন তা প্রত্যেক আমেরিকানের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত। প্রত্যেকটি নতুন নথি নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছে। তার হাত থেকে বেঁচে ফেরা ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।
কমিটির রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ‘ভিকটিমদের নিয়ে রাজনীতির’ অভিযোগ তুলেছেন। বলেছেন, নথিগুলোর পূর্ণাঙ্গ সেট শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।