এক নজরে চাকসু নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

হতে সংগ্রহিত

 

সাড়ে তিন দশক পর বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন।

এর মধ্য দিয়ে এক বছরের জন্য গঠিত হচ্ছে ২৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় সংসদ। একই মেয়াদে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলেও গঠিত হচ্ছে সংসদ। আর চাকসু মনোনীত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—সিনেটের সদস্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন
পদের সংখ্যা

২৬

মোট প্রার্থী

৪১৫

পুরুষ প্রার্থী

৩৬৮

নারী প্রার্থী

৪৭

পদের নাম প্রার্থী সংখ্যা
সহ-সভাপতি (ভিপি) ২৪
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ২২
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ২১
খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১২
সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১৪
সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক ১৭
সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক ১৫
দপ্তর সম্পাদক ১৭
সহ-দপ্তর সম্পাদক ১৪
ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ১৩
সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ১০
বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ১১
গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক ১২
সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ২০
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ১৫
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ১৭
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ১৬
যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ১৭
সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ১৪
আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক
পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক ২০
৫ সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী ৮৫

১৯৭৩ সালের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। যদিও ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার।

এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনটি হয় ১৯৭০ সালে; আর সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ফলে এখন যারা ভোট করছেন, তাদের কেউই আগে ছাত্র সংসদ দেখার সুযোগ পাননি।

  • ১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব।
  • ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন।
  • ১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন।
  • ১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী।
  • ১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেসময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার।
  • ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪টি আবাসিক হল রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ছাত্রদের এবং পাঁচটি ছাত্রীদের। এর বাইরে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল রয়েছে। এই ১৫টি আবাসনের নামে একটি করে ভোট কেন্দ্র থাকছে পাঁচটি ভবনে।

হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন
হল সংসদ

১৪

হোস্টেল সংসদ

মোট পদ

২০৬

প্রতি হলে পদ

১৪

হোস্টেলে পদ

১০

মোট প্রার্থী

৪৯৩

৯ ছাত্র হলের প্রার্থী ৩৫০

৫ ছাত্রী হলের প্রার্থী ১২৩

পদের নাম প্রার্থী সংখ্যা
এ এফ রহমান হল ৩৮
আলাওল হল ৩২
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল ৩৭
শাহ আমানত হল ৪৩
শহীদ আবদুর রব হল ৩১
শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ৪৫
শাহজালাল হল ৩৪
সোহরাওয়ার্দী হল ৫৩
মাস্টা‌রদা সূর্যসেন হল ৩৭
বিজয় ২৪ হল ২৮
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল ৩০
নবাব ফয়জুন্নেসা হল ১৭
প্রীতিলতা হল ২৬
শামসুন্নাহার হল ২২
শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল ২০

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত অবস্থায় থাকলেই কেবল ভোটার হতে পেরেছেন, যাদের সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। আর ভোটার হতে পারলেই তিনি চাকসু বা হল সংসদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।

তাদের ভোটে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ জন নির্বাচিত হবেন। আর প্রতিটি হল সংসদে নির্বাচিত হবে ১৪ জন। কেবল হোস্টেল সংসদের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন।

কোন কেন্দ্রে কত ভোট
কেন্দ্র হল হলের ভোট কেন্দ্রের মোট ভোট
আইটি ভবন

(ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ)

সোহরাওয়ার্দী হল ৪,০৩৬ ৪০৩৬
শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন

(কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ নতুন ভবন)

শাহজালাল হল ২,৬৬৬ ৫২৬৩
এ এফ রহমান হল ১,৩০৭
আলাওল হল ১,২৯০
বিজ্ঞান অনুষদ ভবন শাহ আমানত হল ২,২৪৭ ৪৫৩৮
শহীদ আবদুর রব হল ১,৭৭৫
মাস্টারদা সূর্য সেন হল ৫১৬
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভবন

(সমাজবিজ্ঞান অনুষদ)

নবাব ফয়জুন্নেছা হল ১,১৭৯ ৬৬০৬
শামসুন নাহার হল ২,২৯১
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল ২,৪৮৭
অতীশ দীপঙ্কর হল ৬৪৯
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন প্রীতিলতা হল ২,৫৫৫ ৭০৭৩
বিজয়-২৪ হল ২,৬০৪
শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ১,৭৬০
শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল ১৫৪
মোট ভোটার ২৭,৫১৬

নির্বাচন কমিশন

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ১৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন ভোট পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।

ব্যালট: ওমএমআরে ভোট, গণনা মেশিনে

ওএমআর ফর্মে গ্রহণ করা হবে চাকসু ও হল সংসদের ভোট। বুধবার সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

ব্যালট দেখতে যেমন

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপারে থাকছে নিরাপত্তা কোড, যা ভুয়া ব্যালট ঠেকাতে কাজে দেবে। ব্যালটে প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বর থাকছে; একই নামের ক্ষেত্রে থাকবে ডাকনাম।

ফল ঘোষণা: ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় চাকসু নির্বাচনে মোট ১৩টি আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। নিচে প্যানেলগুলোর শীর্ষ পদের প্রার্থীদের পরিচয় দেওয়া হলো—

কোন প্যানেলে প্রার্থী কারা
ছাত্র সংগঠন প্যানেল ভিপি জিএস এজিএস
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় শাফায়াত আইয়ুবুর রহমান তৌফিক
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট ইব্রাহিম হোসেন রনি সাঈদ বিন হাবিব সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল ( বিএমএসসি), বাংলাদেশ বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, নারী অঙ্গন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম (টিএসএফ) বৈচিত্রের ঐক্য ধ্রুব বড়ুয়া সুদর্শন চাকমা জশদ জাকির
স্যাড ও ছাত্র ফেডারেশন বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য আবির বিন জাবেদ চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ পলাশ দে
ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দ্রোহ পর্ষদ ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ ইফাজ উদ্দিন ইমু জোনায়েদ কবির শায়র
সাবেক সমন্বয়কদের প্যানেল স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন মাহফুজুর রহমান রশিদ দিনার জান্নাতুল ফেরদৌস
ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র মজলিস সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ তামজিদ উদ্দিন সাকিব মাহমুদ রুমি রোমান রহমান
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ আব্দুর রহমান রবিন মোহাম্মদ আব্দুর রহমান আমিনুল ইসলাম রাকিব
রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী সর্বজনীন শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ সাইদ মো. রেদওয়ান জিহাদ আরাফাত আব্দুল্লাহ আল মামুন
‘অরাজনৈতিক’ শিক্ষার্থী সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য তাওসিফ মুত্তাকি চৌধুরী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন সাইদ মোহাম্মদ মুশফিক হাসান
সুফিপন্থি শিক্ষার্থী অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য ফরহাদুল ইসলাম ইয়াসিন উদ্দিন সাকিব শহীদুল ইসলাম শাহেদ
বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি কেফায়াত উল্লাহ শাহরিয়ার উল্লাহ জোনায়েদ শিবলী
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী

(শীর্ষ তিন পদ বাদে)

ভয়েস অব সিইউ দপ্তর সম্পাদক পদপ্রার্থী: মুসলেমা খানম আঁখি

যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক প্রার্থী: আশিকুর রহমান আশিক

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী

পূর্বাপর

গেল ২৮ অগাস্ট চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ১ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর যাচাই-বাছাই শেষে ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।

একই মাসের ১৪ তারিখ শুরু হয় মনোনয়ন পত্র বিতরণ; যা শেষ হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ২১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর নির্বাচনের জন্য ১২ অক্টোবর দিন ঠিক করা হলেও পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেটি পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়।

চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিবেশ ভালো। শেষ মূহুর্তের যেসমস্ত টুকিটাকি কাজ থাকে, সেগুলো চলছে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন সম্পর্কিত বড়ো কাজগুলো ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ যা-যা প্রস্তুতি আছে, সেগুলোও সম্পন্ন হয়ে গেছে।”