“যারা এই ঐতিহ্যের বিপরীতে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, তারা চায় বইমেলা বাধাগ্রস্থ হোক, ও ব্যর্থ হোক এর আয়োজন।”
হতে সংগৃহিত
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করা না হলে সরকার ‘ব্যর্থ হবে’ বলে মনে করছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস)।
প্রকাশকদের এই সমিতি শুরু থেকেই বলে আসছে-অনাকাঙ্ক্ষিত বিশেষ সময় ও পরিস্থিতির কারণে কেবল এবছর বইমেলা আয়োজন করতে হবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে।
তাদের ভাষ্য, “সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি। এই সময়ের মধ্যে মেলা না হলে, ১৯৮৩ সালের পর এটাই হবে দ্বিতীয় বছর যখন জাতির প্রাণের মেলা-অমর একুশে বইমেলা আয়োজনে ব্যর্থ হবে সরকার।”
বাংলা একাডেমি গত ১৮ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বইমেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হবে। তার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ দুটো বিষয় মাথায় রেখে একুশে বইমেলার তারিখ চূড়ান্ত করার কথা বলেছিল বাংলা একাডেমি।
গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃংখলা সংক্রান্ত এক সভায় ‘অমর একুশে বইমেলা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে’ বলে সিদ্ধান্ত হয়।
সেই সিদ্ধান্ত ‘প্রস্তাব আকারে’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলা একাডেমিকে জানানো হয়। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে মেলার পূর্বনির্ধারিত তারিখ ‘স্থগিত’ ঘোষণা করে বাংলা একাডেমি।
প্রকাশক ও অন্য অংশীজনদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে নতুন তারিখ ঠিক করা হবে বলে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়।
এ নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়ে রোববার বাংলা একাডেমির সামনে মানবন্ধন করে ৩১টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’। পরে তারা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে স্মারকলিপিও দেয়।
বইমেলা অনিশ্চিত: জাতির সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের শেকড়ে আঘাত
সোমবার বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা যেন সময়মত, নিরাপদে এবং যথাযথ মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়।”
এটি কেবল প্রকাশক বা লেখকের বিষয় নয়-এটি গোটা জাতির আত্মার বিষয় মন্তব্য করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অমর একুশে বইমেলা কেবল একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়; এটি বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি ঐতিহ্য। যারা এই ঐতিহ্যের বিপরীতে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, তারা চায় বইমেলা বাধাগ্রস্থ হোক, ও ব্যর্থ হোক এর আয়োজন। উত্তরকালে তারা ইতিহাসের কাছে ক্ষমা পাবেন না।”
১৯৮৩ সালে এরশাদের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এছাড়া বইমেলা বন্ধ থাকার নজির নেই। তবে কোভিড মহামারীর সময় ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে বইমেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।
একুশে বইমেলা অনিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি ‘জাতির সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের শেকড়ে আঘাত’ বলে মনে করছে বাপুস।
বইমেলা ডিসেম্বরে আয়োজনের পক্ষে বাস্তবতা তুলে ধরে বাপুস বলেছে, “ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এর পরপরই শুরু হবে রমজান মাস, এরপর ঈদুল ফিতর। মানুষ ঈদ শেষে গ্রামে গিয়ে ফিরে আসতে আসতে সময় লেগে যাবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।”
“অন্যদিকে, এপ্রিলের প্রচণ্ড গরম ও ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে মেলা আয়োজন বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব এবং মেলার বিশাল কাঠামো দাঁড় করানোও ঝুঁকিপূর্ণ হবে।”
