এ ইলেকট্রোলাইট সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যাটারি নয় হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছে, আড়াইশ সাইকেল চার্জের পরও ৮০ শতাংশের বেশি চার্জ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
সংগৃহিত
চীনের বিজ্ঞানীরা এমন এক নতুন ব্যাটারি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যা লিথিয়াম ব্যাটারির আয়ু নয় হাজার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াতে পারে বলে দাবি তাদের।
বিজ্ঞানীদের এমন অগ্রগতি ভবিষ্যতে বিদ্যুচ্চালিত বা ইলেকট্রিক গাড়ি ও বিদ্যুৎ গ্রিডের জন্য আরও উন্নত, টেকসই ও কার্যকর ব্যাটারি তৈরির পথ খুলে দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
লিথিয়াম ধাতু ব্যবহার করে বানানো ব্যাটারি অনেক বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ সঞ্চয় বা জমাতে পারে, যা ভবিষ্যতের শক্তির উৎসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ ব্যাটারিতে ব্যবহৃত তরল বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইটের বেশ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যেমন তরলের লিক হওয়া ও আগুন ধরে যাওয়ার মতো ঝুঁকি। এ ছাড়া চার্জিংয়ের সময় ব্যাটারির ভেতরে লিথিয়াম ধাতু সূঁচ বা শাখার মতো আকারে বেড়ে ওঠে, যা ব্যাটারির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এসব সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে ‘ডিপ ইউটেকটিক জেল ইলেকট্রোলাইটস’ বা ডিইজিইএস নামের নতুন ধরনের ইলেকট্রোলাইট। কারণ এগুলোতে চার্জ পরিবহণের সক্ষমতা বেশি ও এদের স্বাভাবিকভাবেই তাপ সহনশীলতা থাকে। ফলে এর ব্যবহারে লিক হওয়া বা আগুন ধরার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
এসব ধারণার ওপর ভিত্তি করে ফ্লোরিনওয়ালা ‘অ্যামাইড’ নামে এক রাসায়নিকভিত্তিক নতুন ইলেকট্রোলাইট তৈরি করেছেন গবেষকরা।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জার্নাল অফ আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’তে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘২,২,২-ট্রাইফ্লুরো-এন-মিথাইল্যাসিটামাইড’ নামের রাসায়নিক দিয়ে তৈরি ইলেকট্রোলাইট ব্যবহার করে ছোট ও কার্যকর এক ব্যাটারি সিস্টেম তৈরি করেছেন তারা, যা চার্জিংয়ের সময় লিথিয়ামের ক্ষতিকর সূঁচের মতো গঠন বা আগুন বা শর্টসার্কিটের ঝুঁকি বাড়তে দেয় না। ফলে ব্যাটারিকে আরও নিরাপদ ও টেকসই করে তোলা সম্ভব হবে।
গবেষকরা লিখেছেন, “আমরা ফ্লোরিনওয়ালা অ্যামাইড ব্যবহার করে একাধিক ধরনের ডিইজিইএস তৈরি করেছি, যেখানে ফ্লোরিনের ইলেকট্রন টানার সক্ষমতাকে কাজে লাগানো হয়েছে।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ইলেকট্রোলাইট সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যাটারির চার্জ নয় হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে থেকেছে। কিছু ব্যাটারি আড়াইশ বার চার্জ দেওয়ার পরও ৮০ শতাংশের বেশি চার্জড হওয়ার সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
গবেষণাপত্রে তারা লিখেছেন, “উন্নত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে সংশ্লিষ্ট লিথিয়াম সিমেট্রিক ব্যাটারি নয় হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীলভাবে চলতে পেরেছে।”
পরীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন ব্যাটারি সিস্টেমটি কেবল স্বাভাবিক অবস্থায় নয়, বরং প্রায় ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও ভালোভাবে কাজ করেছে এবং তিনশ বার চার্জ দিলেও তা নষ্ট হয়নি।
গবেষণার ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, লিথিয়াম ব্যাটারির দীর্ঘদিনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে ফ্লোরিনভিত্তিক রাসায়নিক ও জেল ধরনের ইলেকট্রোলাইট সিস্টেম।
‘নানকাই ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ও এ গবেষণার গবেষক তিয়ানফেই লিউ বলেছেন, “আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে সুনির্দিষ্টভাবে অণুস্তরীয় নকশা তৈরি করে একসঙ্গে লিথিয়াম মেটাল ব্যাটারির একাধিক সমস্যা সমাধান করা যায়।”
“ডিইজিইএস-এ ফ্লোরিনওয়ালা উপাদান যোগ করে আমরা কেবল ইলেকট্রোলাইট ও ইলেকট্রোডের সংযোগ স্থানে স্থিতিশীলতা বাড়াতেই পারিনি, বরং ব্যাটারির চার্জিং-সাইকেলের স্থায়িত্ব ও তাপজনিত নিরাপত্তাও উন্নত করতে পেরেছি।”