“এ বছর ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে।”
হতে সংগৃহিত
এইচএসসিতে সারাদেশে সবচেয়ে কম পাশের হার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। একই সঙ্গে কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে এ বছর পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে পাশের হার ছিল ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সে বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭ হাজার ৯২২ জন।
এবারের পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ছয় জেলা থেকে ৯৯ হাজার ৫৭৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৬৫৭ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। ফেল করেছে ৫০ হাজার ৯১৯ জন শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শামছুল ইসলাম। এর আগে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের হাতে ফলাফল তুলে দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক রুনা নাছরীন।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড, আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। গত ৫ বছরের মধ্যে এবার বোর্ডটিতে পাসের হার সর্বনিম্ন।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এ বছরের পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
ছাড়াও রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯ ও ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন বলেন, “এ বছর ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে।
“ইংরেজিতে পাস করেছেন ৬৫ দশমিক ২৮ এবং উচ্চতর গণিতে পাস করেছেন ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী।”
তিনি বলেন, এ বছর বোর্ডের ১৫২টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভেনু কেন্দ্র বাতিল করা হয়। এছাড়াও পরীক্ষার খাতা দেখা হয়েছে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। যার প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এছাড়া নকলমুক্ত পরীক্ষা হওয়ার কারণেও পাশের হার কমে এসেছে। তবে পাশের হার কম হলেও এটিই কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির ফলাফলের প্রকৃত চিত্র।”
শিক্ষার্থীরা বলছে, ইংরেজি ও আইসিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছিল। এছাড়া উচ্চতর গণিতও ভুগিয়েছে।
পাশাপাশি কঠোরভাবে উত্তরপত্র নিরীক্ষণের কারণেও পাশের হার কমেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী নাজমুন জান্নাত বলেন, “আমি ইংরেজি পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম কিন্তু আশানুরুপ নম্বর পাইনি। কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আর ভালো পড়াশোনা করলে কেন্দ্র কোন বিষয় না। যে কেন্দ্রেই পরীক্ষা দিতে দেয়া হক, সে কেন্দ্র থেকেই ভালো ফলাফল করা সম্ভব।”
একই কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, “উচ্চতর গণিতের নম্বর কম এসেছে। কেউ কেউ আইসিটি এবং ইংরেজিতেও কম নম্বর পেয়েছে। যারা পড়াশোনা করেনি তারা এ বছর কোন ভাবেই ভালো ফলাফল করতে পারেনি।
“সুতরাং এটি ফলাফলের প্রকৃত চিত্র। তবে পুরো নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করলে হয়তো কিছুটা সামগ্রিক ফলাফলে পরিবর্তন আসতে পারে।”
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, “পাশের হার কম হয়েছে এটি বাস্তব চিত্র। এটিকে যদি আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি, তাহলে দেখা যাবে আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভালো পড়াশোনার প্রতিযোগিতা বাড়বে।
“কোনোরকম পড়ালেখা করে পাশ করে যাওয়ার প্রবণতা থেকে সরে আসবে শিক্ষার্থীরা। আমি এখানে ফলাফল বিপর্যয় না দেখে বরং সটিকভাবে নিরীক্ষণের চিত্র দেখতে পাই।”
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শামসুল ইসলাম বলেন, “এ বছরের ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে। এবার কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের নয় কলেজে কেউ পাশ করেনি৷ অপরদিকে শতভাগ পাশ করেছে পাঁচটি কলেজ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাশের হার সবচেয়ে কম।
“গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাশের হার এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। তবে বিগত বছরগুলোতে নানা কারণে পরীক্ষা ও প্রশ্নপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়নি বলেও সমালোচনা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “ফলাফল আরো ভালো করতে কোন কোন বিষয়ে নজর দেওয়া লাগবে সেগুলো খুঁজে বের করা হবে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হবে।”
