‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’- তখন আয়নাটাই পরিষ্কার না থাকলে কেমন লাগে!
সংগৃহিত
আয়না পরিষ্কার করা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে ততটাই জটিল।
একটু ভুল পদ্ধতি বা অনুপযুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করলেই দেখা দেয় একগাদা দাগ, দোষে-গুণে অদৃশ্য ছোপ বা ঝাপসা ছায়া।
অথচ ঘরের সহজ দুটি উপকরণ— সাদা ভিনেগার ও বেইকিং সোডা ব্যবহার করলেই আয়না হয়ে উঠতে পারে ঝকঝকে ও দাগহীন।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত বলেন, “দাগহীন আয়নার মূল রহস্য লুকিয়ে আছে সঠিক উপকরণ ও সঠিক কাপড় নির্বাচনের মধ্যে।”
ভিনেগার ও পানি
প্রথমেই একটি স্প্রে বোতলে সমপরিমাণ সাদা ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে নিতে হবে। তবে পানি যতটা সম্ভব ছেঁকে ফুটিয়ে নিতে পারলে ভালো। কারণ পানিত নানান খনিজ উপাদান মিশে থাকে যা আয়নাতে ছাপ ফেলে।
এই মিশ্রণ ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিয়ে দাগে ব্যবহার করা যাবে। চাইলে বাজারে পাওয়া গ্লাস ক্লিনারও ব্যবহার করা যায়, তবে তা অবশ্যই আয়না বা কাচের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিনা নিশ্চিত হতে হবে।
সঠিকভাবে স্প্রে
এই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন, “স্প্রে করার সময় আয়নাতে সরাসরি না করে মাইক্রোফাইবার কাপড়ে স্প্রে করা উচিত।”
এতে তরল পদার্থ আয়নার পেছনের রুপালি আস্তরণের মধ্যে ঢুকে পড়ে কালচে দাগ তৈরি করতে পারে না। তবে যদি দ্রুত কাজ করতে পারেন, তাহলে সরাসরি আয়নায় স্প্রে করাও যেতে পারে— এতে ফল আরও ভালো হয়।”
সঠিক ধারায় মোছা
অনেকেই ‘বৃত্তাকারে’ বা ‘ঘূর্ণি পদ্ধতিতে’ আয়না মুছেন, যা আসলে আয়না পরিষ্কারের সবচেয়ে বড় ভুল। এতে ধুলো বা ময়লা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে দাগ থেকে যায়।
সঠিক পদ্ধতি হলো ‘এস-আকৃতিতে’ ওপর থেকে নিচে মোছা। এতে প্রতিটি অংশ একবারে পরিষ্কার হয় এবং কাপড়ে জমে থাকা ময়লা পুনরায় আয়নায় ফিরে আসে না।
মুছে নেওয়ার পর আয়নাটি আলোর নিচে বা একটু আড়াআড়ি কোণ থেকে দেখে নিতে হবে— কোনো দাগ বা ছোপ রয়ে গেছে কিনা।
কঠিন দাগের জন্য বেইকিং সোডা পদ্ধতি
যেসব জায়গায় পানিতে খনিজ উপাদান বেশি, সেখানে আয়নায় তৈরি হয় সাদা বা বাদামি ছোপ, যাকে বলে ‘হার্ড ওয়াটার স্টেইন’।
প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই সমস্যা দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে এই দাগ আরও গাঢ় হয়ে যায়, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করা উচিত।
মিশ্রণ তৈরি: একটি ছোট পাত্রে সমপরিমাণ বেইকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি যেন টুথপেস্টের মতো ঘন হয়।
দাগের ওপর লাগান: দাগের জায়গায় আঙুল দিয়ে আলতোভাবে পেস্টটি লাগাতে এবং শুকিয়ে যেতে দিন। এতে দাগের খনিজ উপাদান পেস্টের সঙ্গে উঠে আসবে।
মুছে ফেলা ও শুকিয়ে নেওয়া: একটি পরিষ্কার ভেজা কাপড়ে পেস্ট মুছে ফেলতে হবে, এরপর আরেকটি শুকনা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া জরুরি।
আয়না ঝাপসা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
অনেকে সঠিকভাবে মুছলেও আয়না পরে ঝাপসা বা ধূসর দেখায়। এর পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে—
খনিজ পানি: ‘হার্ড ওয়াটার’ বা খনিজ-যুক্ত পানি শুকিয়ে গেলে ক্ষুদ্র খনিজ কণাগুলো আয়নায় থেকে যায়, যা ঝাপসা ভাব তৈরি করে। এই সমস্যা এড়াতে ঘরে তৈরি স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার: অনেকেই ব্লিচ বা অ্যামোনিয়া ব্যবহার করেন, যা আয়নার রং ও রুপালি আস্তরণ নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে রঙিন বা টিনটেড আয়নায় অ্যামোনিয়া ব্যবহার করলে রং উঠে যেতে পারে।
বাজারে পাওয়া বহু মাল্টিপারপাস ক্লিনারও আয়নায় রাসায়নিক দাগ ফেলে দেয়। তাই আয়নার জন্য নির্দিষ্ট ক্লিনার বা ঘরোয়া উপাদানই ব্যবহার করতে হবে।
সাবান মিশ্রিত ক্লিনার: সাবানযুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করলে আয়নার ওপর পাতলা আস্তরণ থেকে যায়, যা শুকিয়ে দাগে রূপ নেয়। ফলে আয়না কখনই পুরোপুরি চকচকে দেখায় না।
নিয়মিত পরিষ্কারের অভ্যাস
যত ঘন ঘন আয়না পরিষ্কার করবেন, তত কম পরিশ্রম লাগবে। নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে ময়লা বা রাসায়নিক জমে থাকে না, ফলে আয়না দীর্ঘদি ঝকঝকে থাকে।
স্টিম ক্লিনার ব্যবহারেও সমাধান
অনেকের ঘরেই এখন স্টিম ক্লিনার রয়েছে। এই যন্ত্রের ‘সাকশন’ বা ‘স্কুইজি’র মতো মুখে গরম বাষ্প আয়নার ওপর দিলে অতিরিক্ত কোনো রাসায়নিক ছাড়াই আয়না পরিষ্কার হয়।
স্টিম ক্লিনার আয়না পরিষ্কারের সবচেয়ে আধুনিক ও নিরাপদ উপায়গুলোর একটি, যা আয়নাকে একদম নতুনের মতো ঝকঝকে করে।
মনে রাখতে হবে
আয়না পরিষ্কারের আগে অবশ্যই ধুলা ময়লা ভালো মতো ঝেড়ে মুছতে হবে। তারপর ব্যবহার করতে হবে তরল মিশ্রণগুলো।
