প্রিজনভ্যান ছেড়ে যাওয়ার সময় সহকর্মীরা বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ হাফেজ’।
হতে সংগৃহিত
প্রিজন ভ্যানে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতকে বাইরে থেকে ‘আব্বু, আব্বু’ বলে ডাকলেন দুইকন্যা; ভাবি ডাকলেন ‘টগর’ নামে। প্রিয়জনদের ডাক শুনে হাত নাড়িয়ে সাড়া দিলেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত।
সোমবার ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে দেখা গেল এ আবেগমাখা দৃশ্য।
অ্যাননটেক্সের ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির মামলায় আবুল বারকাতকে এদিন কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল ১০টায় আদালতে হাজির করা হয়। তাকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজতখানায় রাখা হয়।
তাকে দেখতে আদালতে হাজির হন দুই মেয়ে, ভাই-ভাবী, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা। তাকে এক পলক দেখতে অপেক্ষা করতে থাকেন।
এদিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি দুদক। ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ প্রতিবেদন দাখিলের দিন পিছিয়ে আগামী ২৭ নভেম্বর ঠিক করেছেন বলে জানান প্রসিকিউশন বিভাগের উপসহকারী পরিচালক ফয়েজ উদ্দিন।
দেড়টার দিকে আবুল বারকাতকে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তোলার সময় তাকে কয়েকজন সালাম দেন। হাতের ইশারায় কন্যারা জানান, তারা আছেন। আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টনীর লোহার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে তার কন্যারা ‘আব্বু,আব্বু’ বলে ডাকতে থাকেন। আবুল বারকাতের ভাবী সেখানে ওঠেন।

তার কন্যারা চাচীকে বলেন, ‘টগর বলে ডাক’। এসময় তিনি ‘টগর, টগর’ বলে ডাকতে থাকেন। হাত নাড়িয়ে সাড়া দেন আবুল বারকাত। প্রিজনভ্যান ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তার সহকর্মীরা বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ হাফেজ’। আবুল বারকাত হাত নাড়িয়ে বিদায় জানান।
সেন্ট্রাল ইনসুরেন্সের ডিএমডি মো. সৈনিক বলেন, “প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে আসি তাকে দেখার জন্য। স্যারকে এক পলক দেখলেও শান্তি লাগে। একারণে চলে আসি।”
গত ১০ জুলাই রাতে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে তাকে এ মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তবে মূলত বড় অঙ্কের বিতরণ ঘটে ২০১৩-১৪ সময়কালে, যখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আবুল বারকাত প্রথম ওই দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
এক সময় ভালো ব্যাংকের কাতারে থাকা জনতা ব্যাংক বারাকাতের অধীনে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা; জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ।
এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।