টানা দ্বিতীয় দিনে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ।
হতে সংগৃহিত
লক্ষ্য আগের দিনের মতোই। রান তাড়ার শুরুটা যদিও সেই ম্যাচের মতো হলো না। তবে ইনিংসের পরের গতিপথ মিলল অনেকটা একই বিন্দুতে। ম্যাচের ভাগ্য দুলতে থাকল পেন্ডুলামের মতো। প্রায় একই চিত্রনাট্য অনুসরণ করে শেষ দিকে জ্বলে উঠলেন নুরুল হাসান সোহান। রোমাঞ্চ জমিয়ে আবারও জিতে গেল বাংলাদেশ।
টানা দুই দিনে উত্তেজনাপূর্ণ দুই ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ।
শারজাহতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শুক্রবার বাংলাদেশের জয় দুই উইকেটে।
১৪৮ রান তাড়ায় শুরুতে হোঁচট খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে অনেকটা এগিয়ে আবার গুবলেট প্রায় পাকিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তবে সোহানের ব্যাটের আলোয় দূর হয় শঙ্কার আঁধার। তিন ছক্কায় ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
আগের দিন শেষদিকে সোহানকে সহায়তা করেছিলেন রিশাদ হোসেন। এ দিন সেই ভূমিকায় শরিফুল ইসলাম। দেশে নেমে ৬ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার বাউন্ডারিতেই ম্যাচ শেষ হয় পাঁচ বল বাকি থাকতে।
বল হাতে চার ওভারে স্রেফ ১৩ রান দিয়ে এক উইকেটের পর ব্যাটিংয়ের অবদানে ম্যাচের সেরা তিনিই।
বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা ভালো হয়নি একদমই। আগের ম্যাচে শতরানের বিধ্বংসী উদ্বোধনী জুটি গড়া তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন ফেরেন দ্রুতই। দুই ওপেনারকেই ফেরান আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।
তিনে নেমে পাল্টা আক্রমণ করা সাইফ হাসানকেও বেশি দূর যেতে দেননি একাদশে ফেরা মুজিব-উর-রহমান। দুই ছক্কা ও এক চারে তিনি ফেরেন ১৮ রান করে।
২৪ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে অনেকটা দূর এগিয়ে নেন জাকের আলি ও শামীম হোসেন। ৩৭ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তারা চতুর্থ উইকেটে।
দৌড়ে খুব বেশি রান নেই সেই জুটিতে, চার ও ছক্কা আছে চারটি করে!
রাশিদ খানকে একটি রিভার্স সুইপে চার মেরে পায়ে ক্র্যাম্প করায় মাঠেই কিছুটা চিকিৎসা নেন জাকের আলি। এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি পরের বলেই (২৫ বলে ৩২)।
একটু পর শামীম (২২ বলে ৩৩) উইকেট বিলিয়ে দেন নুর আহমাদের বলে সুইচ হিট খেলতে গিয়ে।
তখনও দলের বিপদ খুব বোঝা যায়নি। সোহান ক্রিজে যাওয়ার পরপরই ছক্কা মারেন মোহাম্মাদ নাবিকে, চার মারেন রাশিদকে। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন নাসুম আহমেদ।

নাসুমের বিদায় দিয়েই মুলত আতঙ্কের রেশ ফিরে আসে আবার। সাইফ উদ্দিন ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলে চার মারলেও পরের বলে বাজে শটে আউট হন। রিশাম হোসেন প্রথম বলে ক্যাচ হতে হতেও বেঁচে যান। পরের বলে বাজে এক শটে উইকেট হারান।
আগে দিনের মতো ৯ রানে ৬ উইকেটের পতন না হলেও ৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এক ওভারে দুটিসহ চার উইকেট শিকার করেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।
তবে স্নায়ুর চাপকে পাত্তা দেননি সোহান। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রানের। নুর আহমাদের বলে সোহানের বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। ওই ওভারেই শরিফুলের চারে ম্যাচ চলে আসে নাগালে।
শেষ ওভারের প্রথম বলে ওমারজাইকে চার মেরে খেলা শেষ করে দেন শরিফুলই।
ম্যাচের প্রথম ভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা শুরু করে ভীষণ সতর্কতায়। সেদিকউল্লাহ আটাল ও ইব্রাহিম জাদরান প্রথম ৫ ওভারে তোলেন ২২ রান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানকে ছক্কা ও চার মারেন ইব্রাহিম। পরে রিশাদকে টানা দুটি ছক্কা মারেন আটাল। হ্যাটট্রিক ছক্কার চেষ্টায় উইকেট হারান তিনি। ৫৫ রানে ভাঙে আফগানদের উদ্বোধনী জুটি।
আগের দিনের মতোই আভাস দিয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি ইব্রাহিম (৩৭ বলে ৩৮) ও রাহমানউল্লাহ গুরবাজ (২২ বলে ৩০)।
অভিষিক্ত ওয়াফিউল্লাহ তারাখিল ফেরেন ১ রানেই। দারভিস রাসুলি থেমে যান দুটি ছক্কা মেরে। আফগানদের ইনিংস হারায় গতি।
শেষ দিকে মোহাম্মাদ নাবির ১২ বলে ২০ রানের ইনিংস আফগানদের নিয়ে যায় দেড়শর কাছে। ওমারজাই অপরাজিত থাকেন ১৭ বলে ১৯ করে।
সেই পুঁজিতে লড়াই জমে ওঠে আবার। কিন্তু ফলাফল সেই একই।
সিরিজ জয় নিশ্চিত করা বাংলাদেশ রোববার মাঠে নামবে ৩-০ ব্যবধানে জিততে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৭/৫ (আটাল ২৩, ইব্রাহিম ৩৮, গুরবাজ ৩০, তারাখিল ১, রাসুলি ১৪, ওমারজাই ১৯*, নাবি ২০*; শরিফুল ৪-০-১৩-১, নাসুম ৪-০-২৫-২, সাইফ উদ্দিন ৪-০-২২-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪০-০, রিশাদ ৪-০-৪৫-২)।
বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ১৫০/৮ (তানজিদ ২, পারভেজ ২, সাইফ ১৮, জাকের ৩২, শামীম ৩৩, সোহান ৩১*, নাসুম ১০, সাইফ ৪, রিশাদ ২, শরিফুল ১১*; মুজিব ৪-০-১৮-১, ওমারজাই ৩.১-০-২৩-৪, রাশিদ ৪-০-২৯-২, নুর ৪-০-২১-১, নাবি ৩-০-৩২-০, আহমাদজাই ১-০-৮-০)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শরিফুল ইসলাম।