ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান তাদের ইসলামি শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বহু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
হতে সংগৃহিত
আফগানিস্তানে কিছু সোশাল মিডিয়া কনটেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।
দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্সসহ কিছু প্ল্যাটফর্মের নির্দিষ্ট ধরনের কনটেন্ট সীমিত করতে ফিল্টার প্রয়োগ করা হয়েছে।
তবে কী ধরনের পোস্ট ফিল্টারের আওতায় পড়ছে তা স্পষ্ট নয়। কাবুলের কিছু সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা এখন আর তাদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিও দেখতে পাচ্ছেন না, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকসেস করতেও সমস্যা হচ্ছে।
আফগানিস্তান জুড়ে দুই দিনের জন্য ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা বন্ধের ঘটনার এক সপ্তাহ বাদে এ কনটেন্ট নিষেধাজ্ঞা এল।
ইন্টারনেট-টেলিকম বন্ধের কারণে নাগরিকরা ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছিলেন। পরে এসব সেবা চালু হলে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বিবিসি লিখেছে, ৪৮ ঘণ্টার ওই ব্ল্যাকআউটে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়, জরুরি সেবার সুযোগ সীমিত হয়ে যায় এবং নারী ও কন্যাশিশুদের আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী তালেবান ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর নারী ও শিশুদের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
আফগানিস্তানে সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সীমিত প্রবেশাধিকার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ব্যবহারকারীরা। ছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সীমিত প্রবেশাধিকার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
তালেবান সরকারের এক সূত্র বলছে, “ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্সের মত প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট ধরনের কন্টেন্ট সীমিত করতে কিছু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছে।
“আমরা আশা করি এবার সম্পূর্ণ ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হবে না। এই ফিল্টারিং প্রায় সারা দেশে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং বর্তমানে বেশিরভাগ প্রদেশই এর আওতাভুক্ত।”
এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তালেবান সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
পূর্বাঞ্চলের নঙ্গরহার প্রদেশের একটি সরকারি দপ্তরে কর্মরত এক ব্যক্তি বিবিসিকে জানান, তিনি ফেইসবুক খুলতে পারলেও ছবি দেখতে কিংবা ভিডিও চালাতে পারছেন না।
তার কথায়, “গড়পরতা ইন্টারনেটের গতি খুবই কম।”
বেসরকারি ব্যবসা পরিচালনাকারী দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের আরেকজন ব্যবহারকারী বলেন, তার ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট মঙ্গলবার থেকে বন্ধ আছে। তবে মোবাইল ফোনের ডেটা কাজ করছে, যদিও ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম চলছে ‘খুব ধীর গতিতে’।
আফগানিস্তানে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের এক সপ্তাহ বাদে কনটেন্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ছবি: রয়টার্স
গত সপ্তাহে যে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করা হয়েছিল তা নিয়ে তালেবান সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে গত মাসে উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের তালেবান গভর্নরের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘অনৈতিক কার্যকলাপ প্রতিরোধে’ ইন্টারনেট ব্লক করা হচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান তাদের ইসলামি শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বহু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
আফগান নারীরা বিবিসিকে বলেছেন, তালেবান যখন ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করে, তখন ইন্টারনেটই ছিল বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযোগের একমাত্র মাধ্যম।
নারীদের চাকরির সুযোগও কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে এবং সেপ্টেম্বর মাসে নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।