শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া হতে পারে আঁশের অপর্যাপ্ততার লক্ষণ।
সংগৃহীত
‘ফাইবার’ বা আঁশ শরীরের জন্য অপরিহার্য খাদ্য উপাদান। এটি শুধু হজম ভালো রাখে না, বরং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা এবং এমনকি শ্বাসের দুর্গন্ধ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
তবে বিশ্বের বহু দেশে মানুষ প্রয়োজনের অর্ধেক আঁশও প্রতিদিন গ্রহণ করে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘাটতি নানান জটিলতা তৈরি করতে পারে, যা অনেক সময় সরাসরি আঁশের অভাবের সাথে মেলানো যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘আমেরিকান ফ্যামিলি কেয়ার’-এর প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. বেঞ্জামিন বার্লো, মেক্সিকোর রিনিউ ব্যারিয়াট্রিকস-এর ব্যারিয়াট্রিক সার্জন ডা. হোর্হে গ্রিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক চিকিৎসক ডা. সিনথিয়া ওদোগউ ব্যাখ্যা করেছেন- আঁশ কম খাওয়ার কিছু স্পষ্ট সংকেত রয়েছে। এগুলো সময়মতো চিহ্নিত করে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।
মস্তিষ্কে ঝাপসা ভাব বা মনোযোগের অভাব
ডা. বেঞ্জামিন বার্লো রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যখন খাবারে পর্যাপ্ত আঁশ থাকে না, তখন রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ে ও হঠাৎ কমে যায়। এর ফলে খাওয়ার পর অনেকেই মাথা ঝাপসা লাগা, মনোযোগ কমে যাওয়া বা অস্বস্তি অনুভব করেন।”
যদি প্রায়ই খাওয়ার পর মাথা ভার লাগার মতো হয়, তবে এটি আঁশ ঘাটতির ইঙ্গিত হতে পারে।
খাওয়ার পর দ্রুত ক্ষুধা লাগা
আঁশ হজম হতে সময় নেয়, ফলে দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভূতি দেয়।
ডা. বার্লোর মতে, “আঁশ কম থাকলে খাওয়ার এক ঘণ্টা পরই ক্ষুধা লাগতে পারে। বিশেষ করে যদি খাবারে বেশি থাকে সাদা পাউরুটি, পাস্তা বা প্রক্রিয়াজাত নাশতা আর কম থাকে সবজি, ফল, ডাল বা পূর্ণ শস্য। আর এটি আঁশ ঘাটতির লক্ষণ।”
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষুদ্র সংকেত
আঁশ শুধু হজমেই সাহায্য করে না, শরীরের প্রদাহও নিয়ন্ত্রণ করে।
মেক্সিকোর রিনিউ ব্যারিয়াট্রিকস-এর ডা. হোর্হে গ্রিন বলেন, “আঁশ কম খেলে অন্ত্রের সুস্থতা নষ্ট হয়, মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং শরীরে নিম্নমাত্রার প্রদাহ তৈরি হয়। এর ফলে অনেক সময় ত্বকে ফুসকুড়ি, হঠাৎ অ্যালার্জি কিংবা অজানা কারণে সংবেদনশীলতা দেখা দেয়।”
ডা. গ্রিন মন্তব্য করেন, “সত্যিকারের খাবারের অ্যালার্জি হঠাৎ ও নির্দিষ্ট খাবারের পরপরই হয়। তবে আঁশের অভাবজনিত সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি, কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনও ক্লান্তি, কখনও ত্বকের জ্বালা হিসেবে ধরা দেয়।”
মাঝেমধ্যে শক্তি কমে যাওয়া
আঁশের অভাবে অনেকেই দিনের মাঝামাঝি হঠাৎ শক্তি হারিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে সাদা ভাত বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার দুয়েক ঘণ্টা পর যদি একইসঙ্গে ক্ষুধা ও অবসাদ লাগে, তবে তা আঁশ ঘাটতির সংকেত হতে পারে।
ডা. গ্রিনের মতে, “খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল, ডালিয়া বা চিয়া বীজ যোগ করলে কয়েক দিনের মধ্যেই এ অবস্থা দূর হয়, কারণ আঁশ ধীরে হজম হয়ে রক্তে শর্করা স্থিতিশীল রাখে।”
কোষ্ঠকাঠিন্য
আঁশ কম খাওয়ার সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হল কোষ্ঠকাঠিন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক চিকিৎসক ডা. সিনথিয়া ওদোগউ বলেন, “পর্যাপ্ত আঁশ না খেলে মল শক্ত হয়ে যায়, পেটে ব্যথা হয় এবং মলত্যাগে কষ্ট হয়।”
তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিদিন অন্তত ২৫–৩৫ গ্রাম আঁশ খাওয়া উচিত। তবে পরিপূরক ট্যাবলেটের চেয়ে সবজি, ফল, ডাল, শস্যজাত খাবার থেকে আঁশ পাওয়া শরীরের জন্য অনেক ভালো, কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পাওয়া যায়।
মুখে দুর্গন্ধ
আঁশ কম খাওয়ার কারণে হজমপ্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং অন্ত্রে জীবাণুর ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি হলে দেহে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী যৌগ জমে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
ডা. বার্লো জানান, “যদি মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি পেট ফাঁপা বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তবে এটি আঁশ ঘাটতির কারণে হতে পারে।”
কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া
ডা. ওদোগউ বলেন, “আঁশ কম খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অপরদিকে আঁশযুক্ত খাবার এলডিএল কমায়।”
যদি কারও খাবার তালিকায় স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যেমন- লাল মাংস, মাখন, ডিম আর আঁশ কম থাকে, তবে উচ্চ কোলেস্টেরল এভাবেই তৈরি হয়।
এজন্য ডা. ওদোগউ শিম, শাকসবজি, ব্রকলি, ফুলকপি, বাদাম ও বীজ খাওয়ার পরামর্শ দেন।
সমাধান কী?
চিকিৎসকেরা বলছেন, আঁশের ঘাটতি পূরণ করা একেবারেই কঠিন নয়।
- প্রতিদিন ভাত বা রুটির সঙ্গে পর্যাপ্ত সবজি খেতে হবে।
- সাদা ভাত বা পাউরুটির বদলে ডাল বা পূর্ণ শস্যের রুটি বেছে নিতে হবে।
- নাশতায় ফল, বাদাম বা বীজ যোগ করা উচিত।
- ডাল, মসুর, ছোলা ও মুগ নিয়মিত খেলে আঁশের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয়।
সংগৃহীত